পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“
পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“
প্রথম বৈরী- অগ্নি বৈরী বা শত্র“ : মানুষের জীবনে টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মূল্যবান বস্তু আছে কিন্তু যখন বাড়িতে আগুন লাগবে তখন পুড়ে সব ছাই হয়ে যাবে। আগুন আমাদের জীবন যাপনে যেমন অনেক সহায়তা করে আবার অপূরণীয় ক্ষতিও সাধন করে। তাই অগ্নিবৈরী বা অগ্নিশত্র“ মানুষের জীবনে বড় শত্র“।
দ্বিতীয় বৈরী- জলবৈরী বা জলশত্র“ : জল বা পানি মানুষের জীবন যাপনে অনেক বড় সহায়তা করে। আবার পানি দ্বারা মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বৎসর বন্যা হয়। বন্যার পানি আমাদের টাকা-পয়সা, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, ঘর-বাড়ি নষ্ট করে। বন্যার পানি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়। তাই এটাও এক প্রকার শত্র“।
তৃতীয় বৈরী- চোর-ডাকাত হল মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“। চোর-ডাকাত মানুষের ধন সম্পত্তি, টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা এমন কি জীবনও হরণ করে। তাই চোর-ডাকাত মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“।
চতুর্থ বৈরী : রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধান হল চতুর্থ বৈরী। রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের উপকার করে থাকেন আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের শত্র“রূপে আবির্ভূত হন। যেমন একজন ব্যক্তি অনেক সম্পদের মালিক যে কোন কারণে রাজা আদেশ দিলেন ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তি রাজ কোষাগারে নিয়ে আসার জন্য। ঐ ব্যক্তির অনিচ্ছা সত্ত্বেও সকল সম্পত্তি রাজাকে দিয়ে দিতে হয় অর্থাৎ রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানের কারণে সম্পদ হরণ হওয়ায় রাজাকে চতুর্থ বৈরী বলা হয়।
পঞ্চম বৈরী : অবাধ্য সন্তান হল পঞ্চম বৈরী বা শত্র“। যখন সন্তান-সন্ততি মা-বাবার অবাধ্য হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। যেমন দুষ্ট লোকের সাথে মিশে দুষ্ট হয়ে মদ পান করেন, জুয়া খেলেন, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। মা-বাবার টাকা নষ্ট অবাধ্য ছেলে-মেয়ের কারণে মা-বাবার টাকা পয়সা নষ্ট হয় তাই অবাধ্য সন্তান-সন্ততিকে পঞ্চম বৈরী বা শত্র“ বলা হয়।
--------------------------------------------------------------------------------
অষ্ট অক্ষন বা আট প্রকার দোষযুক্ত কাল
প্রথম অক্ষন প্রেতলোক: প্রেতলোকে উৎপন্ন হলে অনন্ত দুঃখ ভোগ করতে হয়। কোন সুখ নেই। ধর্মচর্চা করার পরিবেশ নেই বিধায় ধর্মচর্চা করা যায় না। তাই প্রেতলোকে উৎপন্ন হওয়াটা অশুভকাল বা অক্ষন বলা হয়।
দ্বিতীয় অক্ষন-তীর্যকলোক: তীর্যকলোক বলা হয় পশু-পাখী কুলকে। এই লোকেও কোন সুখ নেই। সব সময় ভয়-ভীতির মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। এজন্য এটি একটি অষ্ট অক্ষনের অন্যতম।
তৃতীয় অক্ষন-নরকলোক: নরকলোকে শুধু জ্বালা-পোড়া, যন্ত্রণা, দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নাই। এই লোকে কোন ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। ইহা অষ্ট অক্ষনের তৃতীয় অক্ষন।
চতুর্থ অক্ষন-অরূপ ব্রহ্মলোক: আমরা সকলে জানি ব্রহ্মলোক অত্যন্ত উচ্চ। তবু এই অরূপ ব্রহ্মলোক এখানে যে উৎপন্ন হবে। তার কোন ইন্দ্রিয় থাকে না যেহেতু রূপহীন ব্রহ্মলোক। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা সাধনাহীন ক্ষেত্র, তাই এই লোকে জন্ম নেয়াটা অশুভ। তাই এটিও অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
পঞ্চম অক্ষন প্রত্যন্ত অঞ্চল: প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন ভিক্ষু শ্রামণের দর্শন পাওয়া যায় না। ত্রিরতœ বন্দনা একবার শুনার সুযোগ হয় না। কোটি টাকার অধিকারী হলেও সেখানে পুণ্য সঞ্চয়ের কোন সুযোগ হয় না তাই এই লোকও অষ্ট অক্ষনের এক অক্ষন।
ষষ্ঠ অক্ষন বিকল ইন্দ্রিয়: চোখ, কান, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করলে, সেই অবস্থায়ও ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। নির্বাণ মার্গের সাধনার ঠিক প্রতিকূল অবস্থায় জন্ম নেওয়া। এটি একটি অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
সপ্তম অক্ষন মিথ্যা দৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করা: যদি বৌদ্ধ মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম না নিয়ে মিথ্যদৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম নেয়, তাহলে তাহার জন্ম নিরর্থক। কারণ নির্বাণগামী ধর্ম, চতুরার্য সত্য ধর্ম শ্রবণ অথবা চর্চা করার সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হবে। তাই এটি একটি অন্যতম অক্ষন।
অষ্টম অক্ষন ‘‘বুদ্ধশূণ্য কল্প”: যে সময়ে বুদ্ধগণের শাসন থাকবে না, সেই সময় বা কালকে বুদ্ধশূণ্য কাল বলে। তখন পৃথিবীতে এ ভদ্র কল্পের চতুর্থ বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধের শাসনামল। এই বুদ্ধের শাসন পাঁচ হাজার বৎসর চলে গেলে তখন শুরু হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। আবার এক অন্তকল্প পরে যখন আর্যমিত্র বুদ্ধ আবির্ভূত হয়ে তাঁর ধর্ম প্রচার করবেন, তখন আরো কিছুকাল বৌদ্ধ ধর্ম এই পৃথিবীতে, লোকভূমিতে এবং অনন্ত চক্রবালে প্রচারিত হবে। তারপর আর্যমিত্র বুদ্ধের শাসনামল শেষ হয়ে যাবে, পৃথিবীতে তখন বুদ্ধ শাসন থাকবে না। দুই দুইশত একান্নটি অন্তর্কল্প হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। নির্বাণ মার্গ সাধনার প্রতিকুল কাল বা ক্ষেত্র বা ক্ষণ।
এই আটটি অক্ষন অথবা অষ্ট দোষযুক্ত স্থানগুলোকে আমরা চাই না, নির্বাণ সাধনার প্রতিকুল হবে।
0 comments: