কোশল রাজের ষোল মহাস্বপ্ন
কোশল রাজের ষোল মহাস্বপ্ন

একদিন কোশলরাজ প্রসেনজিত রাত্রে পর পর ষোলটি ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হন। সকালে পুরোহিত ব্রাহ্মণ এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে বললেন- স্বপ্নসমূহ বড়ই অকুশলজনক। এতে রাজ্য অন্তরায়, জীবন অন্তরায় কিংবা ভোগ-অন্তরায় এ তিনটির যে কোন একটি ঘটতে পারে। এর প্রতিকারের ক্ষমতা আমাদের আছে। আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই মহারাজ। কি প্রতিকার রাজা জিজ্ঞেস করলে ব্রাহ্মণ বললেন মহারাজ শান্তি স্বস্ত্যয়নের জন্যে সর্বচতুষ্ক যজ্ঞ করতে হবে। ভীত ত্রাসিত রাজা যজ্ঞের যাবতীয় দায়িত্ব পুরোহিত ব্রাহ্মণদের হাতে অপর্ণ করে নিশ্চিন্ত হলেন। বিস্তর খাদ্য ভোজ্য ও ধন সম্পত্তি লাভের আশায় ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞানুষ্ঠানের কাজে লেগে যান। যজ্ঞ স্থান নির্বাচন, বলির জন্যে সবলকায় পশুপক্ষী সংগ্রহ, যজ্ঞের বিবিধ উপকরনাদি সংগ্রহের জন্যে চারদিকে লোকজন প্রেরণ করা হল। রাজ কর্মচারীদের মধ্যে হাঁকডাক বেড়ে গেল। এদিকে কোশল রাজের প্রধানা মহিষী মল্লিকা দেবী সব জ্ঞাত হয়ে রাজাকে জেতবনে ভগবান বুদ্ধের নিকট গিয়ে স্বপ্ন বিবরণ জানাতে অনুরোধ করলেন। রাজা জেতবন বিহারে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে বন্দনা করে স্বপ্ন বৃত্তান্ত একের পর এক শুনাতে আরম্ভ করেন এবং ব্রাহ্মণদের সিদ্ধান্তের কথাও জানালেন।
প্রথম স্বপ্ন : কৃষ্ণ বর্ণের চারটি বৃষ চারদিক থেকে এসে রাজ ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। বৃষ যুদ্ধ দেখার জন্যে বন্থলোক সমাগত। কিন্তু বিনাযুদ্ধে তারা ক্ষান্ত হয়ে গেল। এর কারণ কি?
প্রথম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ এ স্বপ্ন ফল আপনার আমার জীবিতকালে ঘটবে না, ভবিষ্যতে ঘটবে। এতে আপনার কোন অন্তরায়ও হবে না। ব্রাহ্মণগণ কেবল নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে বলেছে। ভবিষ্যতে রাজা প্রজারা হবে কৃপণ ও অধার্মিক তাদের কুশল ধর্মহীন প্রায় হবে, অকুশল বেড়ে যাবে। নিয়মিত বারিবর্ষণ হবে না অনিয়মিত বৃষ্টিতে শস্য নষ্ট হবে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। চারদিকে মেঘ উঠবে, মেঘ গর্জনে বিদ্যুৎ চমকাবে, কিন্তু বৃষ্টি হবে না বিনাযুদ্ধে বৃষদের প্রস্থানের ন্যায় মেঘসমূহ চলে যাবে।
দ্বিতীয় স্বপ্ন : ছোট ছোট গাছগুলো এক বিঘত কিংবা দেড় বিঘত বৃদ্ধি পেতে না পেতে ফুল ও ফল প্রসব করল, এ কারণ কি?
দ্বিতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ! ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থায় মানুষ হবে অল্পায়ু, হবে তীব্র রাগ পরায়ন, অল্প বয়সে মেয়েরা হবে ঋতুমতী ও ফলের ন্যায় পুত্রকন্যা প্রসব আবার তাদের থেকে অল্পবয়ষ্ক ও রোগাক্রান্ত পুত্রকন্যা জন্ম নেবে। এতে আপনার কোন অনিষ্ট ঘটবে না।
তৃতীয় স্বপ্ন : গাভীরা সদ্য প্রসূত বাছুরের দুধপান করছে এর কারণ কি?
তৃতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে যখন বায়োজোষ্ঠদের সম্মান নষ্ট হবে। তখন এসব ঘটবে। পুত্র-কন্যা কিংবা পুত্র বধূরা মাতা-পিতার প্রতি ও শুশুর-শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধাহীন হবে। নির্লজ্জ্বভাবে স্বয়ং সংসারের ভার গ্রহণ করবে। ইচ্ছা হলে গুরুজনদেরকে খাদ্য বস্ত্র দেবে, ইচ্ছা না হলে দেবে না। কাজেই বৃদ্ধরা নিরুপায় হয়ে বাচ্চার দুগ্ধপায়ী গাভীর ন্যায় সন্তানগণের কৃপাধীন হয়ে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই।
চতুর্থ স্বপ্ন : বলবান দৃঢ়কার গরু থাকা সত্ত্বেও অল্পবয়ষ্ক গরু গাড়ী টানতে সংযোজন করল, তারা শকট টানতে অক্ষম বিধায় অগ্রসর হতে পারলনা এর অর্থ কি?
চতুর্থ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে রাজারা যখন অধার্মিক হবে তখন এ অবস্থা ঘটবে। রাজকার্যে পন্ডিত কুশলী ও কর্মঠ ব্যক্তির পরিবর্তে মুর্খ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবে। তারা যথাযথভাবে রাজকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আত্মসম্মান হানির ভয়ে এসব কাজে অগ্রসর হবে না, এভাবে রাজকার্যের পরিহানি হতে থাকবে এবং রাজ্য শ্রী নষ্ট হতে থাকবে। শকট বহনে অসমর্থ তরুণ গরুর ন্যায় হল নব্যলোকেরা আর বলবান গরুর ন্যায় হবে বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
পঞ্চম স্বপ্ন : একটি অশ্বের দুটো মুখ দু’মুখেই ঘাস খাচ্ছে এর অর্থ কি?
পঞ্চম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ ঘটনাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক মুর্খ রাজাগণ অধার্মিক লোভী ব্যক্তিকে বিচারপতি নিযুক্ত করবেন। তারা বিচারাসনে বসে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করবে। স্বপ্নের অশ্বের ন্যায় দুমুখোই খাবে, এতে আপনার অমঙ্গল হবে না।
ষষ্ঠ স্বপ্ন : বহু মূল্যবান সুবর্ণ পাত্রে একটি জড় শৃগাল প্রস্রাব করল এর অর্থ কি?
ষষ্ঠ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এর ফলও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক রাজাগণ প্রাচীন সম্মানিত বংশের লোকদেরকে নানা কারণে সম্মান প্রদর্শন করবে না। অকুলীনেরই সংখ্যায় বাড়বে কুলীনগণ দিন দিন গরীব হবে অকুলীন ও নিু শ্রেণীর লোকেরা সম্পদশালী হবে। কুলীন লোকেরা জীবন ধারণের স্বার্থে নীচ লোকদের শরণাপন্ন হবে এবং তাদের সাথে নিজ নিজ কন্যার বিবাহ দেবে। নীচ সহবাসে কুলীন কন্যাগণ মর্যাদা হারাবে, যেমন বহু মূল্যবান পাত্রে জড় শৃগালের প্রস্রাব সৃদশ্য। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।নীচে অবস্থানরত একটি শৃগালী লোকটার অজ্ঞাতসারে ওটা খেয়ে ফেলছে। এর অর্থ কি?
সপ্তম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে নারীগণ পুরুষের সঙ্গ অভিলাষ করবে তারা হবে সুরাপায়ী, অলংকারী লোভী, বিলাসী ও আমিষাশী। সেই দুঃশীল দুরাচারী স্ত্রী স্বামীর সঞ্চিত সম্পদ অকাতরে নষ্ট করবে এবং গোপণে উপপতির সাথে মিলিত হবে। যেমন স্বামীর অজ্ঞাতসারে শৃগালীর রজ্জু ভক্ষণ সদৃশ। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।
অষ্টম স্বপ্ন : রাজদ্বারে একটি বৃহৎ পূর্ণ কলসী এর চারপাশে বহু শূন্য কলসী রয়েছে। লোকেরা ভারে ভারে জল এনে পূর্ণ কলসীতে ঢালছে। কলসীর জল চারদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও শূন্য কলসীতে কেহ জল ঢালছে না-এর কারণ কি?
অষ্টম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে দেশের বড় দুরবস্থা হবে, দেশ বলশূন্য ও ধনশূন্য হবে। রাজাগণ অর্থলোভী হবে। বিভিন্ন ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে রাজভাণ্ডার পূর্ণ করবে, কিন্তু গরীবের শূন্য ভাণ্ডারের প্রতি তাকাতেও অবসর মিলবে না, যেমনি শূন্য কলসী শূন্যই থাকবে। এতে আপনার কোন অমঙ্গল হবে না।
নবম স্বপ্ন : পঞ্চবর্ণ পদ্ম প্রস্ফুটিত ও চতুর্দিকে ঘাটযুক্ত এক জলাশয়। এর মাঝখানের জল ঘোলা ও পঙ্কিল কিন্তু তৎপার্শ্বের যে জল দ্বিপদ ও চতুষ্পদেরা পান করছে তা পরিষ্কার এর কারণ কি?
নবম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এসবও ভবিষ্যতের লক্ষণ। যখন রাজাগণ অধার্মিক স্বেচ্ছাচারী ও অবিচারী হয়ে রাজত্ব করবে, ধর্মমতে বিচারাদি করবে না ঘুষখোর হবে ধনলোভী হয়ে প্রজাদের প্রতি মৈত্রীহীন ও দরাহীন হবে। তখন প্রজারা তাদের অত্যাচারে ও উৎপীড়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চরে গিয়ে বাসস্থান নির্মাণ করবে। মধ্যাঞ্চল জনশূন্য হতে থাকবে। যেমন পুষ্করিনীর মধ্যস্থিত জল ঘোলা, কিন্তু এই পার্শ্বের জল নির্মল ইত্যাদি। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
দশম স্বপ্ন : একটি পাত্রে ভাত রান্না হচ্ছে। এর কোন পাশে পেচাল, কোন পাশে চাউল আর কোন পাশে সুপক্ক। এর কারণ কি?
দশম স্বপ্নের উত্তর ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। যখন রাজাগণ অধার্মিক হবে। তাদের কারণে অন্যান্যরাও অধার্মিক হবে। তখন তাদের রক্ষক দেবতা ভূমিস্থিত কিংবা আকাশস্থিত হোক অধার্মিক হবে। সেই অধার্মিক রাজারা রাজ্য নানাবিধ বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে যেমন ঝড়-তুফান, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আত্মকোন্দল বা গৃহযুদ্ধ, বহিঃরাষ্ট্রের আক্রমণ ইত্যাদি। এরূপে একদিকে ভয়ানক বৃষ্টি যার ফলে শস্য নষ্ট, অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে চাষহীন অবস্থা আবার কোনদিকে একাদশ স্বপ্ন : লক্ষ টাকা মূল্যের চন্দন সার অম্লময় দধির বিনিময়ে বিক্রী হচ্ছে এর কারণ কি?
একাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটা ভবিষ্যতে আমার শাসন ধর্মের পরিহানির সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে অধিকাংশ ভিক্ষু স্বার্থপরায়ণ ও লজ্জাহীন হবে। লোভের বিরুদ্ধে আমি যা উপদেশ দিয়েছি, ভবিষ্যতে তারা লোভপরবশ হয়ে অর্থের আশায় এ ধর্মোপদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে। দ্রব্য লোলুপ ভিক্ষুরা নৈর্বাণিক ধর্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হবে না। চীবরাদি টাকা পয়সার বিনিময়ে মহামূল্য নৈর্বাণিক ধর্ম তারা সুস্বরে বা মধুর শব্দে প্রচার করবে। যেমন বহু মূল্য চন্দন খারাপ দধির দ্বারা বিক্রিত হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
দ্বাদশ স্বপ্ন : তুচ্ছ লাউ সকল জলে ভাসছে এর কারণ কি?
দ্বাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে লোকের চরিত্র বিকৃত হলে ঘটবে। সে সময় রাজাগণ সম্ভ্রান্ত কুলপুত্রগণকে যশ বা খ্যাতি প্রদান করবে না। অকুলীনদেরকেই প্রদান করবে। অকুলীনেরা সম্পদশালী হয়ে কুলীনেরা দরিদ্র হবে এবং রাজার সম্মুখে, রাজদ্বারে ও বিচার স্থানে অকুলীনদের কথা তুচ্ছ লাউ সৃদশ্য ভেসে থাকবে অর্থাৎ তাদের কথাই গ্রাহ্য হবে। সেরূপ সংঘ মধ্যেও দুশ্চরিত্র, অশিক্ষিত ভিক্ষুরা সাধক ও বিজ্ঞ স্থবিরদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে অর্থৎ সংঘকর্ম ও বিচার স্থানে দুঃশীল ভিক্ষুর কথা অগ্রাধিকার পাবে, সুশীল ভিক্ষুর কথা গ্রাহ্য হবে না। এভাবে সকল স্থানে তুচ্ছ লাউয়ের ভাসায় ন্যায় অধার্মিকদের কথা বলবৎ হবে। এতে আপনার কোন অন্যায় হবে না।
ত্রয়োদেশ স্বপ্ন : বৃহৎ কুটাগার সদৃশ্য পর্বত নৌকার ন্যায় ভাসমান দেখলাম এর কারণ কি?
ত্রয়োদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে সে সময় অধার্মিক রাজাগণ অকুলীনদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবে, তারাই ধনশালী হবে। কুলীনেরা দরিদ্র হেতু অকুলীনদের সম্মান করবে। রাজার সম্মুখে অমাত্য সম্মুখে ও বিচার স্থানে তারা ঘনশিলা সৃদশ্য গ্রহণীয় বা যোগ্য হবে। কুলীনেরা উপহাসের পাত্র হবে। ভিক্ষু সভায় শীলবান ভিক্ষুরা তদ্রুপ হবে। ঠিক যেমন ভাসমান শিলা সদৃশ হবে। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
চতুর্দশ স্বপ্ন : ক্ষুদ্র মধুক পুষ্পপ্রমাণ ভেক সমূহ ভীষণ কৃষ্ণ সর্পকে দৌড়ায়ে পদ্ম মৃণালের ন্যায় ছিড়ে ছিড়ে মাংস খেতে ও গিলতে দেখলাম এর কারণ কি?
চতুর্দশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ স্বপ্নফলও ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থা হলে ঘটবে। সে সময় মানুষেরা হবে তীব্র রাগ পরায়ণ বা কামাতুর, কাজেই অর্থাৎ ভার্যার উপর আপনার মুখ স্বাধীনতা বলিদান করবে। কোনদিন গৃহস্বামী কোন জিনিসের তত্ত্ব তালাস করলে স্ত্রী নানাবিধ কটুক্তি করবে এবং যে কোন কার্যে কথা বলতে দেবে না যেমন দাস দাসীর প্রতি লোকে ব্যবহার করে তদ্রুপ নব বধূয়া স্বামী বা গুরুজনের প্রতি সেরূপ ব্যবহার করবে, অর্থাৎ তারাই ঘরের সর্বসর্বা হবে। ঠিক ভেক যেমন সর্প গিলছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
পঞ্চদশ স্বপ্ন : সুবর্ণ রাজহংসগণ নানা দোষ সমন্বিত বা কলুষিত কাকের অনুবর্তী হচ্ছে এর কারণ কি?
পঞ্চদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে দুর্বল রাজার সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে রাজাগণ রাজ্য শাসন কিংবা যুদ্ধে বিদ্যায় সুনিপণ হবে না। তাহারা পদচ্যুত হবার ভয়ে সম্ভ্রান্তগণকে কার্যভার না দিয়ে স্বীয় পদসেবাকারী ক্রীতদাস বা নীচ বংশীয় দাসগণকে প্রধান্য অর্পণ করবে। জাতি গোত্র সম্পন্ন কুলপুত্রেরা রাজকূলে প্রতিষ্ঠা লাভ না করে এবং জীবন যাপন করতে অসমর্থ হয়ে এসব ক্রীতদাস বা জাতি গোত্রহীন অকুলীনের সেবা শুশ্রƒষা করে বিচরণ করবে। ঠিক যেমন সুবর্ণ রাজহংস কাকের অনুবর্তী হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
ষোড়শ দশ স্বপ্ন : নেকড়ে বাঘ মেষ খায়, তা জানি। কিন্তু মেষ সমূহ হিংস্র বাঘকে দৌড়ায়ে খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য প্রাণীরা ভয়ে ঝোপ ঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে এর কারণ কি?
ষোড়শ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। যে সময়ে নীচ বংশীয়রা রাজ প্রাসাদে প্রাধান্য লাভ করবে। কুলীনগণ অপমানিত ও নিরন্ন হবে। যেমন সম্ভ্রান্তেরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে লাঞ্চিত ও অপমানিত হওয়ার ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে থাকে। তদ্রুপ অদূর ভবিষ্যতে শীলবান ভিক্ষুরা পাপী ভিক্ষুব উৎপীড়নে নিরাশ্রয় হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় করবে বা পালিয়ে থাকবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই মহারাজ।
ষোল প্রকার মহাস্বপ্নের ব্যাখ্যায় রাজা প্রসেনজিৎ ভয়হীন ও আনন্দিত হয়ে যজ্ঞ ত্যাগ করলেন এবং প্রাণী সমূহের বন্ধন মোচন করে দিলেন।

একদিন কোশলরাজ প্রসেনজিত রাত্রে পর পর ষোলটি ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হন। সকালে পুরোহিত ব্রাহ্মণ এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে বললেন- স্বপ্নসমূহ বড়ই অকুশলজনক। এতে রাজ্য অন্তরায়, জীবন অন্তরায় কিংবা ভোগ-অন্তরায় এ তিনটির যে কোন একটি ঘটতে পারে। এর প্রতিকারের ক্ষমতা আমাদের আছে। আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই মহারাজ। কি প্রতিকার রাজা জিজ্ঞেস করলে ব্রাহ্মণ বললেন মহারাজ শান্তি স্বস্ত্যয়নের জন্যে সর্বচতুষ্ক যজ্ঞ করতে হবে। ভীত ত্রাসিত রাজা যজ্ঞের যাবতীয় দায়িত্ব পুরোহিত ব্রাহ্মণদের হাতে অপর্ণ করে নিশ্চিন্ত হলেন। বিস্তর খাদ্য ভোজ্য ও ধন সম্পত্তি লাভের আশায় ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞানুষ্ঠানের কাজে লেগে যান। যজ্ঞ স্থান নির্বাচন, বলির জন্যে সবলকায় পশুপক্ষী সংগ্রহ, যজ্ঞের বিবিধ উপকরনাদি সংগ্রহের জন্যে চারদিকে লোকজন প্রেরণ করা হল। রাজ কর্মচারীদের মধ্যে হাঁকডাক বেড়ে গেল। এদিকে কোশল রাজের প্রধানা মহিষী মল্লিকা দেবী সব জ্ঞাত হয়ে রাজাকে জেতবনে ভগবান বুদ্ধের নিকট গিয়ে স্বপ্ন বিবরণ জানাতে অনুরোধ করলেন। রাজা জেতবন বিহারে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে বন্দনা করে স্বপ্ন বৃত্তান্ত একের পর এক শুনাতে আরম্ভ করেন এবং ব্রাহ্মণদের সিদ্ধান্তের কথাও জানালেন।
প্রথম স্বপ্ন : কৃষ্ণ বর্ণের চারটি বৃষ চারদিক থেকে এসে রাজ ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। বৃষ যুদ্ধ দেখার জন্যে বন্থলোক সমাগত। কিন্তু বিনাযুদ্ধে তারা ক্ষান্ত হয়ে গেল। এর কারণ কি?
প্রথম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ এ স্বপ্ন ফল আপনার আমার জীবিতকালে ঘটবে না, ভবিষ্যতে ঘটবে। এতে আপনার কোন অন্তরায়ও হবে না। ব্রাহ্মণগণ কেবল নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে বলেছে। ভবিষ্যতে রাজা প্রজারা হবে কৃপণ ও অধার্মিক তাদের কুশল ধর্মহীন প্রায় হবে, অকুশল বেড়ে যাবে। নিয়মিত বারিবর্ষণ হবে না অনিয়মিত বৃষ্টিতে শস্য নষ্ট হবে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। চারদিকে মেঘ উঠবে, মেঘ গর্জনে বিদ্যুৎ চমকাবে, কিন্তু বৃষ্টি হবে না বিনাযুদ্ধে বৃষদের প্রস্থানের ন্যায় মেঘসমূহ চলে যাবে।
দ্বিতীয় স্বপ্ন : ছোট ছোট গাছগুলো এক বিঘত কিংবা দেড় বিঘত বৃদ্ধি পেতে না পেতে ফুল ও ফল প্রসব করল, এ কারণ কি?
দ্বিতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ! ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থায় মানুষ হবে অল্পায়ু, হবে তীব্র রাগ পরায়ন, অল্প বয়সে মেয়েরা হবে ঋতুমতী ও ফলের ন্যায় পুত্রকন্যা প্রসব আবার তাদের থেকে অল্পবয়ষ্ক ও রোগাক্রান্ত পুত্রকন্যা জন্ম নেবে। এতে আপনার কোন অনিষ্ট ঘটবে না।
তৃতীয় স্বপ্ন : গাভীরা সদ্য প্রসূত বাছুরের দুধপান করছে এর কারণ কি?
তৃতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে যখন বায়োজোষ্ঠদের সম্মান নষ্ট হবে। তখন এসব ঘটবে। পুত্র-কন্যা কিংবা পুত্র বধূরা মাতা-পিতার প্রতি ও শুশুর-শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধাহীন হবে। নির্লজ্জ্বভাবে স্বয়ং সংসারের ভার গ্রহণ করবে। ইচ্ছা হলে গুরুজনদেরকে খাদ্য বস্ত্র দেবে, ইচ্ছা না হলে দেবে না। কাজেই বৃদ্ধরা নিরুপায় হয়ে বাচ্চার দুগ্ধপায়ী গাভীর ন্যায় সন্তানগণের কৃপাধীন হয়ে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই।
চতুর্থ স্বপ্ন : বলবান দৃঢ়কার গরু থাকা সত্ত্বেও অল্পবয়ষ্ক গরু গাড়ী টানতে সংযোজন করল, তারা শকট টানতে অক্ষম বিধায় অগ্রসর হতে পারলনা এর অর্থ কি?
চতুর্থ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে রাজারা যখন অধার্মিক হবে তখন এ অবস্থা ঘটবে। রাজকার্যে পন্ডিত কুশলী ও কর্মঠ ব্যক্তির পরিবর্তে মুর্খ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবে। তারা যথাযথভাবে রাজকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আত্মসম্মান হানির ভয়ে এসব কাজে অগ্রসর হবে না, এভাবে রাজকার্যের পরিহানি হতে থাকবে এবং রাজ্য শ্রী নষ্ট হতে থাকবে। শকট বহনে অসমর্থ তরুণ গরুর ন্যায় হল নব্যলোকেরা আর বলবান গরুর ন্যায় হবে বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
পঞ্চম স্বপ্ন : একটি অশ্বের দুটো মুখ দু’মুখেই ঘাস খাচ্ছে এর অর্থ কি?
পঞ্চম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ ঘটনাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক মুর্খ রাজাগণ অধার্মিক লোভী ব্যক্তিকে বিচারপতি নিযুক্ত করবেন। তারা বিচারাসনে বসে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করবে। স্বপ্নের অশ্বের ন্যায় দুমুখোই খাবে, এতে আপনার অমঙ্গল হবে না।
ষষ্ঠ স্বপ্ন : বহু মূল্যবান সুবর্ণ পাত্রে একটি জড় শৃগাল প্রস্রাব করল এর অর্থ কি?
ষষ্ঠ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এর ফলও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক রাজাগণ প্রাচীন সম্মানিত বংশের লোকদেরকে নানা কারণে সম্মান প্রদর্শন করবে না। অকুলীনেরই সংখ্যায় বাড়বে কুলীনগণ দিন দিন গরীব হবে অকুলীন ও নিু শ্রেণীর লোকেরা সম্পদশালী হবে। কুলীন লোকেরা জীবন ধারণের স্বার্থে নীচ লোকদের শরণাপন্ন হবে এবং তাদের সাথে নিজ নিজ কন্যার বিবাহ দেবে। নীচ সহবাসে কুলীন কন্যাগণ মর্যাদা হারাবে, যেমন বহু মূল্যবান পাত্রে জড় শৃগালের প্রস্রাব সৃদশ্য। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।নীচে অবস্থানরত একটি শৃগালী লোকটার অজ্ঞাতসারে ওটা খেয়ে ফেলছে। এর অর্থ কি?
সপ্তম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে নারীগণ পুরুষের সঙ্গ অভিলাষ করবে তারা হবে সুরাপায়ী, অলংকারী লোভী, বিলাসী ও আমিষাশী। সেই দুঃশীল দুরাচারী স্ত্রী স্বামীর সঞ্চিত সম্পদ অকাতরে নষ্ট করবে এবং গোপণে উপপতির সাথে মিলিত হবে। যেমন স্বামীর অজ্ঞাতসারে শৃগালীর রজ্জু ভক্ষণ সদৃশ। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।
অষ্টম স্বপ্ন : রাজদ্বারে একটি বৃহৎ পূর্ণ কলসী এর চারপাশে বহু শূন্য কলসী রয়েছে। লোকেরা ভারে ভারে জল এনে পূর্ণ কলসীতে ঢালছে। কলসীর জল চারদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও শূন্য কলসীতে কেহ জল ঢালছে না-এর কারণ কি?
অষ্টম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে দেশের বড় দুরবস্থা হবে, দেশ বলশূন্য ও ধনশূন্য হবে। রাজাগণ অর্থলোভী হবে। বিভিন্ন ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে রাজভাণ্ডার পূর্ণ করবে, কিন্তু গরীবের শূন্য ভাণ্ডারের প্রতি তাকাতেও অবসর মিলবে না, যেমনি শূন্য কলসী শূন্যই থাকবে। এতে আপনার কোন অমঙ্গল হবে না।
নবম স্বপ্ন : পঞ্চবর্ণ পদ্ম প্রস্ফুটিত ও চতুর্দিকে ঘাটযুক্ত এক জলাশয়। এর মাঝখানের জল ঘোলা ও পঙ্কিল কিন্তু তৎপার্শ্বের যে জল দ্বিপদ ও চতুষ্পদেরা পান করছে তা পরিষ্কার এর কারণ কি?
নবম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এসবও ভবিষ্যতের লক্ষণ। যখন রাজাগণ অধার্মিক স্বেচ্ছাচারী ও অবিচারী হয়ে রাজত্ব করবে, ধর্মমতে বিচারাদি করবে না ঘুষখোর হবে ধনলোভী হয়ে প্রজাদের প্রতি মৈত্রীহীন ও দরাহীন হবে। তখন প্রজারা তাদের অত্যাচারে ও উৎপীড়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চরে গিয়ে বাসস্থান নির্মাণ করবে। মধ্যাঞ্চল জনশূন্য হতে থাকবে। যেমন পুষ্করিনীর মধ্যস্থিত জল ঘোলা, কিন্তু এই পার্শ্বের জল নির্মল ইত্যাদি। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
দশম স্বপ্ন : একটি পাত্রে ভাত রান্না হচ্ছে। এর কোন পাশে পেচাল, কোন পাশে চাউল আর কোন পাশে সুপক্ক। এর কারণ কি?
দশম স্বপ্নের উত্তর ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। যখন রাজাগণ অধার্মিক হবে। তাদের কারণে অন্যান্যরাও অধার্মিক হবে। তখন তাদের রক্ষক দেবতা ভূমিস্থিত কিংবা আকাশস্থিত হোক অধার্মিক হবে। সেই অধার্মিক রাজারা রাজ্য নানাবিধ বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে যেমন ঝড়-তুফান, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আত্মকোন্দল বা গৃহযুদ্ধ, বহিঃরাষ্ট্রের আক্রমণ ইত্যাদি। এরূপে একদিকে ভয়ানক বৃষ্টি যার ফলে শস্য নষ্ট, অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে চাষহীন অবস্থা আবার কোনদিকে একাদশ স্বপ্ন : লক্ষ টাকা মূল্যের চন্দন সার অম্লময় দধির বিনিময়ে বিক্রী হচ্ছে এর কারণ কি?
একাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটা ভবিষ্যতে আমার শাসন ধর্মের পরিহানির সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে অধিকাংশ ভিক্ষু স্বার্থপরায়ণ ও লজ্জাহীন হবে। লোভের বিরুদ্ধে আমি যা উপদেশ দিয়েছি, ভবিষ্যতে তারা লোভপরবশ হয়ে অর্থের আশায় এ ধর্মোপদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে। দ্রব্য লোলুপ ভিক্ষুরা নৈর্বাণিক ধর্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হবে না। চীবরাদি টাকা পয়সার বিনিময়ে মহামূল্য নৈর্বাণিক ধর্ম তারা সুস্বরে বা মধুর শব্দে প্রচার করবে। যেমন বহু মূল্য চন্দন খারাপ দধির দ্বারা বিক্রিত হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
দ্বাদশ স্বপ্ন : তুচ্ছ লাউ সকল জলে ভাসছে এর কারণ কি?
দ্বাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে লোকের চরিত্র বিকৃত হলে ঘটবে। সে সময় রাজাগণ সম্ভ্রান্ত কুলপুত্রগণকে যশ বা খ্যাতি প্রদান করবে না। অকুলীনদেরকেই প্রদান করবে। অকুলীনেরা সম্পদশালী হয়ে কুলীনেরা দরিদ্র হবে এবং রাজার সম্মুখে, রাজদ্বারে ও বিচার স্থানে অকুলীনদের কথা তুচ্ছ লাউ সৃদশ্য ভেসে থাকবে অর্থাৎ তাদের কথাই গ্রাহ্য হবে। সেরূপ সংঘ মধ্যেও দুশ্চরিত্র, অশিক্ষিত ভিক্ষুরা সাধক ও বিজ্ঞ স্থবিরদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে অর্থৎ সংঘকর্ম ও বিচার স্থানে দুঃশীল ভিক্ষুর কথা অগ্রাধিকার পাবে, সুশীল ভিক্ষুর কথা গ্রাহ্য হবে না। এভাবে সকল স্থানে তুচ্ছ লাউয়ের ভাসায় ন্যায় অধার্মিকদের কথা বলবৎ হবে। এতে আপনার কোন অন্যায় হবে না।
ত্রয়োদেশ স্বপ্ন : বৃহৎ কুটাগার সদৃশ্য পর্বত নৌকার ন্যায় ভাসমান দেখলাম এর কারণ কি?
ত্রয়োদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে সে সময় অধার্মিক রাজাগণ অকুলীনদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবে, তারাই ধনশালী হবে। কুলীনেরা দরিদ্র হেতু অকুলীনদের সম্মান করবে। রাজার সম্মুখে অমাত্য সম্মুখে ও বিচার স্থানে তারা ঘনশিলা সৃদশ্য গ্রহণীয় বা যোগ্য হবে। কুলীনেরা উপহাসের পাত্র হবে। ভিক্ষু সভায় শীলবান ভিক্ষুরা তদ্রুপ হবে। ঠিক যেমন ভাসমান শিলা সদৃশ হবে। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
চতুর্দশ স্বপ্ন : ক্ষুদ্র মধুক পুষ্পপ্রমাণ ভেক সমূহ ভীষণ কৃষ্ণ সর্পকে দৌড়ায়ে পদ্ম মৃণালের ন্যায় ছিড়ে ছিড়ে মাংস খেতে ও গিলতে দেখলাম এর কারণ কি?
চতুর্দশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ স্বপ্নফলও ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থা হলে ঘটবে। সে সময় মানুষেরা হবে তীব্র রাগ পরায়ণ বা কামাতুর, কাজেই অর্থাৎ ভার্যার উপর আপনার মুখ স্বাধীনতা বলিদান করবে। কোনদিন গৃহস্বামী কোন জিনিসের তত্ত্ব তালাস করলে স্ত্রী নানাবিধ কটুক্তি করবে এবং যে কোন কার্যে কথা বলতে দেবে না যেমন দাস দাসীর প্রতি লোকে ব্যবহার করে তদ্রুপ নব বধূয়া স্বামী বা গুরুজনের প্রতি সেরূপ ব্যবহার করবে, অর্থাৎ তারাই ঘরের সর্বসর্বা হবে। ঠিক ভেক যেমন সর্প গিলছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
পঞ্চদশ স্বপ্ন : সুবর্ণ রাজহংসগণ নানা দোষ সমন্বিত বা কলুষিত কাকের অনুবর্তী হচ্ছে এর কারণ কি?
পঞ্চদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে দুর্বল রাজার সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে রাজাগণ রাজ্য শাসন কিংবা যুদ্ধে বিদ্যায় সুনিপণ হবে না। তাহারা পদচ্যুত হবার ভয়ে সম্ভ্রান্তগণকে কার্যভার না দিয়ে স্বীয় পদসেবাকারী ক্রীতদাস বা নীচ বংশীয় দাসগণকে প্রধান্য অর্পণ করবে। জাতি গোত্র সম্পন্ন কুলপুত্রেরা রাজকূলে প্রতিষ্ঠা লাভ না করে এবং জীবন যাপন করতে অসমর্থ হয়ে এসব ক্রীতদাস বা জাতি গোত্রহীন অকুলীনের সেবা শুশ্রƒষা করে বিচরণ করবে। ঠিক যেমন সুবর্ণ রাজহংস কাকের অনুবর্তী হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
ষোড়শ দশ স্বপ্ন : নেকড়ে বাঘ মেষ খায়, তা জানি। কিন্তু মেষ সমূহ হিংস্র বাঘকে দৌড়ায়ে খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য প্রাণীরা ভয়ে ঝোপ ঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে এর কারণ কি?
ষোড়শ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। যে সময়ে নীচ বংশীয়রা রাজ প্রাসাদে প্রাধান্য লাভ করবে। কুলীনগণ অপমানিত ও নিরন্ন হবে। যেমন সম্ভ্রান্তেরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে লাঞ্চিত ও অপমানিত হওয়ার ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে থাকে। তদ্রুপ অদূর ভবিষ্যতে শীলবান ভিক্ষুরা পাপী ভিক্ষুব উৎপীড়নে নিরাশ্রয় হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় করবে বা পালিয়ে থাকবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই মহারাজ।
ষোল প্রকার মহাস্বপ্নের ব্যাখ্যায় রাজা প্রসেনজিৎ ভয়হীন ও আনন্দিত হয়ে যজ্ঞ ত্যাগ করলেন এবং প্রাণী সমূহের বন্ধন মোচন করে দিলেন।
0 comments: