Feature news

ধর্মান্তর একটি অভিশাপ

একটি শিশুকে মা যখন গর্ভে ধারণ করেন, তখন সে মায়ের যে কি কষ্ট তা শুধু গর্ভ ধারিণীই জানে। আবার একজন মা’ই জানে মাতৃস্বর্গ কতখানি মাতৃসুধা। সে শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হন, পৃথিবীর আলো দেখেন তখন গর্ভ ধারিণী তার প্রসব বেদনা ভুলে গিয়ে আনন্দের চুমু খেয়ে কোলে তোলে নেয় এবং তার সাথে পিতা সহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজন সকলে যে আনন্দ অনুভব করে তা একমাত্র তারাই জানে। সে শিশুটি কন্যা সন্তান হোক আর ছেলে সন্তানই হোক সকলে কিন্তু আনন্দে উদ্বেলিত। শিশুটি ভ’মিষ্ট হ্ওয়ার পর থেকে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের হাত ধরে ধীরে ধীরে হাটতে শিখে, কথা বলতে শিখে, আর একসময় সে বড় হয়ে উঠে। আমরা সন্তানরা বেড়ে উঠি একমাত্র মা-বাবার অজ¯্র ত্যাগের ফলে। মা-বাবার ত্যাগ না থাকলে আমরা সন্তানরা বেড়ে উঠা সম্ভব নয়। কারন’ মা-বাবাই একমাত্র ব্যক্তি যে, তাদের সন্তানদেরকে জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করেন। এক্ষেত্রে একটি গল্প মনে পড়ে যায়, গল্পটি তুলে ধরছি, একদিন এক মা একটি ছেলে প্রসব করলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে ছেলেটির কান ছিলনা। যাক, ছেলেটিকে বয়ঃসন্ধিকালে যথা নিয়মে স্কুলে ভর্তি করা হলো। ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছেলেটিকে তার সহ-পাটিরা কান নেই বলে উপহাস করতেন। একদিন ছেলেটি তার মা-বাবাকে বললো, মা-বাবাও চিন্তিত হয়ে পড়লো। তখন মা-বাবা এক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলো। ডাক্তার বললো অপারেশন করে কান প্রতিস্থাপন করা যাবে। এখন চিন্তায় পড়ে গেল কান কোথায় পাবে! জানি কান কোথাও পাওয়া যাবেনা তার পরও বেড়িয়ে পড়লো কান খোজার উদ্দেশ্যে, কিন্তু কোথাও কান পাওয় গেলনা। কার কান কাকে দেবে! কি আর করা অবশেষে মা নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে নিজেই তার ছেলেকে কান দিবে। মায়ের মনতো, মা কি কখনো সন্তানের কষ্ট দেখতে পারে! শেষ পর্যন্ত মা নিজেই তার ছেলেকে কান দিয়ে উপহাস থেকে রক্ষা করলো। এভাবেই আমাদের জন্য মা-বাবারা সারাটা জীবন ত্যাগ করে যান। গল্পটি লিখতে গিয়ে আরো একটি গল্প মনে পড়ে যায়। গল্পটি এই, একদিন দেবী অন্নদা নদী পার হলো ঈশ্বরী পাটনির খেয়ানৌকোয়। তীরে নেমে দেবী খুশি হয়ে মাঝিকে জিজ্ঞেস করলো, কী বর চাও তুমি? যা চাও তাই পাবে তুমি।’ মাঝি গরিব মানুষ, খেয়া পারাপার করে তার জীবন চলে। মাঝি দেবীর কাছে চাইতে পারতো রাজ্য, বাড়িভর্তি সোনারুপো, মুক্তোপান্না। তার অভাবের দিন কেটে যেতো দেবীর দয়ায়। মাঝি ওসব কিছু চাইলো না, সে দেবীর কাছে নিবেদন করলো একটি ছোট প্রার্থনা। বললো, আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে। মাঝির এ প্রার্থনা থেকে বুঝতে পারি যে, তার কোনো স¦ার্থ ছিলনা, ছিলো শুধু আত্মত্যাগ, ছিলো সন্তানের প্রতি অপার করুণা। কিন্তু আমরা সন্তানরা এর কতটুকু মূল্যইবা দিয়ে থাকি! মা-বাবারা সারাটা জীবন আমাদের সুখ কামনা করে যান। আর তার বিনিময়ে আমরা সন্তানরা তাদেরকে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারিনা। এতক্ষণ যা বললাম তা একটি শিশু বেড়ে উঠার পিছনে কার কতটুকু অবদান তার বিন্দু পরিমান নমুনা মাত্র তুলে ধরলাম। কারন কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলে একটি শিশু বড় হয়ে উঠতে পারে সেটি আজকের বড় সন্তানটির (ছেলে-মেয়ে) অবুঝ মনটাকে জাগানোর চেষ্টা করছি মাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা সন্তানরা সামান্য একটি আবেগের তাড়নায় এক নিমিষের জন্য সব কিছু ভুলে যাই। হাজার জল্পনা-কল্পনার মাঝেও আমরা সঠিক সিদ্ধানেÍ পৌছতে পারিনা। হ্যা আমি জানিনা পাঠকগন কি বুঝতে পেরেছেন! প্রিয় পাঠকগন আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি কিংবা বুঝাতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে ধর্মান্তর বিষয়ে। এবার হয়তো নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন! আজকাল আমাদের সমাজে ধর্মান্তরের ছোঁয়া বেশি করে লেগেছে। ধর্মান্তর বিষয়টি বর্তমানে কমন হয়ে দাড়িয়েছে। আসলে যারা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তাঁরা কি একবারও তাদের অতীতের কথা গুলো চিন্ত্ াকরেছে। এখানে আমার একটি প্রশ্ন যারা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তাদের কাছে (বিশেষ করে মেয়েদের) অন্য ধর্মের আচার-আচরন, রীতি-নীতি, কলা-কৌশল জেনেই কি ধর্মান্তরিত হয় নাকি একজন ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে যে সর্ম্পক গড়ে উঠে তা সত্যিতে রুপদান করার জন্য আবেগের বশবর্তী হয়ে ধর্মান্তরিত হয়? আচ্ছা, আর একটি প্রশ্ন, যদি কোনো ছেলে অন্য ধর্মাবলম্বী কোনো মেয়ের সাথে মনের আদান-প্রদান করে ধর্মান্তরিত হতে বললে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি কি কখনো ছেলেটিকে বলেছে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য? আবার যে ধর্মান্তরিত হয়েছে সেকি আদৌ তার স্বধর্মকে মন থেকে বিসর্জন দিতে পেরেছে নাকি রাতের অন্ধকারে ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে? তারা কি দাম্পত্য জীবনে সুখী? হয়তো বলতে পারে সুখী।  কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সুখী হতে পারেনা বলে আমার ধারণা। কারণ মনের মিল হলেও ধর্মের মিল নেই আর যেখানে ধমের্র মিল নেই সেখানে সুখ আছে বলে আমার জানা নেই। যেহেতু এক ধর্মের কালচার আরেক ধর্ম তা গ্রহণ করেনা বলেই সেখানে সব গন্ডগোল। সন্তান-সন্ততিরা যখন ধর্মান্তরিত হয় তখন কিন্তু খেসারত দিতে হয় তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলকে আর যেখানে সমাজচ্যুত ব্যবস্থা আছে সেখানে হতে হয় সমাজচ্যুত। সমাজের মধ্যে হয়ে যায় গৌণ, মাথা উচুঁ করে কথা বলতে পারেনা। ধর্মান্তরিত সন্তান-সন্ততিরা পিতা-মাতার কাছে হয়ে যায় জীবিত মৃত, হয়ে যায় ত্যাজ্য। তাই ধর্মান্তর একটি অভিশাপ। যেমন করে নেমেছিল কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনে। যে কবি সনেট কবিতার প্রবর্তক। একটি মাত্র আবেগের তাড়নায় ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তার পরও কবি সুখী ছিল না বার বার তাকে তাড়া করতো পিছনে ফেলে আসা স্মৃতি গুলো। কবি সব সময় নিজেকে ধিক্কার দিত কেন সে ধর্মান্তর গ্রহণ করেছে! কবি ধর্মান্তর গ্রহণ না করে যদি নিজের স্বধর্মকে আগলে ধরে থাকতো তাহলে একজন বিখ্যাত কবি হয়ে মানুষের হৃদয়ের মাঝে আসন করে নিতে পারতো। কিন্তু ইংরেজ কবি হওয়ার বাসনা নিয়ে যে,ধর্মান্তরিত হয়েছে তা নিরাশায় পরিণত হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ মাতৃভূমিতে পিরে এসেছিল (এখানে কবির কথা উল্লেখ করা মূর্খতার সামিল)। ধর্মান্তরিত হওয়ার পিছনে যার হাত রয়েছে তা হচ্ছে মোহ। মোহ কিংবা লালসা আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করছে এবং স্বধর্ম থেকে অনÍর্ধান হতে সহায়তা করছে। কেন আমরা মোহ নামক জ্বলন্ত অগ্নির পিছনে পরিচালিত হচ্ছি? তার একটি মাত্র কারণ অজ্ঞতা। অজ্ঞতা বলতে সঠিক কিছু না জেনে, কোন বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান অর্জন না করে এবং বিচার-বিশ্লেষণ না করে বিপথে পরিচালিত হওয়াকে বুঝায়। যদিওবা আমরা তিন ভাগের দুই অংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী। তার পরেও আমাদের জ্ঞান সীমিত বলে মনে হয়। আর জ্ঞান সীমিত বলে মিথ্যা আবেগ বা মোহকে প্রশ্রয় দিয়ে ধর্মান্তরের দিকে ঝুঁকে বেশি। তাই মিথ্যা আবেগ বা মোহ একটি ফুটন্ত জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই অভিশাপ থেকে বেড়িয়ে আশা সম্ভব নয় এবং জলন্ত কাষ্ট খন্ডের ন্যায় সারাটা জীবন পুরতে হবে। আর এক্ষেত্রে নিজকে জলন্ত আগুনের মধ্যে শপে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো অন্যদের কাছ থেকে অধিকতর কিছু পাওয়ার আশা করা। কিন্তু যখনই নিজের হৃদয়ের দিকে চোখ ফেরাবে তখনই বুঝতে পারবে আসলে কোনটি সঠিক। তাই নৈতিকতার প্রশ্নে যে কাউকে (ছেলে বা মেয়ে) নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
[বি.দ্র. আমার লেখাটি কারো মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়]

লেখক সুমনানন্দ ভিক্ষু,অধ্যক্ষ কাঁঠাল ভাঙ্গা সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহার।

Learn more »

এই প্রথম মিলল গৌতম বুদ্ধের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ!

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান কোথায় জানেন কী? নেপালের লুম্বিনিতেআর সেখানেই এক প্রাচীন মন্দিরে খননকার্য চালানোর সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের আরেকটি অজানা কাঠামোতাদের দাবি অনুযায়ী, এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির বা প্যাগোডাইতোপূর্বে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির ছিলো সম্রাট অশোকের সময়কালেরতবে এখন জানা গেছে যে সেটা এই মন্দিরের অনেক পরে তৈরি হয়, মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে- যখন সম্রাট অশোক আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছিলেনএই আবিষ্কারের সাথে জড়িত গবেষকরা কাজ করছিলেন লুম্বিনির মায়া দেবী মন্দিরেন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির আংশিক অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিলো এদের কাজতবে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের অর্থায়ন করছে মূলত জাপান সরকার এবং নেপাল সরকার যা রয়েছে ইউনেস্কোর এক প্রকল্পের অধীনে যার লক্ষ্য হলো লুম্বিনির সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শক্তিশালী করাধ্যানরত সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনী এবং দর্শনার্থীদের মাঝেই তাদের খননকার্য চালাতে হয়Antiquity জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণার তথ্যে এসব প্রত্নতাত্বিকেরা বর্ণনা করেন কিভাবে লুম্বিনি থেকে শুরু হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েএই গবেষণার সাথে জড়িত ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির রবিন কানিংহ্যাম এর মতে, বুদ্ধের ব্যাপারে খুব কমই জানা গেছে এখন পর্যন্তএ কারনেই তারা প্রত্নতাত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এখানে অনুসন্ধান করার উৎসাহ পানআর তা করতে গিয়েই মায়া দেবী মন্দিরে এই প্রাচীন কাঠামো খুঁজে পান তারা

বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, রানী মহামায়া দেবী লুম্বিনি বাগানের একটি গাছের ডাল ধরে থাকা অবস্থায় বুদ্ধের জন্ম দেনগৌতম বুদ্ধ বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধনের সন্ধান শুরু করেনকনিংহ্যাম বলেন, বুদ্ধের জন্মের সময়টাই এমন যে তখন শাক্য জাতির মানুষের মাঝে সামাজিক অনেক পরিবর্তন আসা শুরু করছিলোপ্রাচীন এই লুম্বিনি কালের গ্রাসে হারিয়ে যায় নেপালের বন-জঙ্গলের মাঝে১৮৯৬ সালে এক খুঁজে পাওয়া যায় এবং বুদ্ধের জন্মস্থান বলে শনাক্ত করা হয়সম্রাট অশোকের সময়কালের এক নিদর্শন থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়

গবেষকদের মতে এই আবিষ্কার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধমন্দির হতে পারে এটিআর এই মন্দির তৈরি হয়েছিলো একটি গাছকে ঘিরেগবেষকরা খননের সময়ে গাছের শেকড় এবং কাঠের কোনো কাঠামোর চিহ্ন খুঁজে পান একটি কিছু ইঁটের স্তুপের নিচেকাঠের এই গঠনের মাঝে ছিলো একটি উন্মুক্ত জায়গাএ থেকে গবেষকেরা ধারণা করছেন এটাই হতে পারে সেই স্থান যেখানে বোধন হয় বুদ্ধেরবুদ্ধের অস্তিত্ব এবং অবস্থানের এই প্রথম কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেলো
খননের ফলে প্রাপ্ত চারকোলের টুকরো এবং বালির কণা পরীক্ষা করে দেখা হয় রেডিওকার্বন এবং অপ্টিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করেএর ফলেই নির্ণয় করা যায় এগুলো সেই খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকেরএই মন্দিরের মধ্যভাগে কোনও ছাদ ছিলো নাএ থেকেও ধারণা করে নেওয়া যায় এই স্থাপনার কেন্দ্রে একটি গাছ ছিলো

একটি প্রেস কনফারেন্সে কনিংহ্যাম বলেন, এটা এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত যেখানে ধর্ম এবং বিজ্ঞান পাশাপাশি অবস্থান করছেবৌদ্ধ ধর্মানুসারে, বুদ্ধের বোধি লাভ হয় একটি বৃক্ষের নিচে এবং গবেষকেরাও একটি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির খুঁজে পেয়েছেন যা খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মত প্রাচীন সময়ে তৈরি হয়আরও বলা হয়, এর আগে ওই এলাকায়(নেপালে) বৃক্ষ কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোনও মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায় নিসুতরাং সম্ভাবনা আছে যে এটাই হতে পারে সেই বৃক্ষ যার ডাল ধরে মহামায়া দেবী জন্ম দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধকে
Learn more »

দালাই লামা রক্তাক্ত! ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মুখের ছবি

তিনি শান্তির প্রতীককিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মুখের ছবিঠোঁটে কাটা দাগনাক দিয়ে রক্ত ঝরছেথেঁতলে গেছে দুই চোখচশমাটিও ফেটে গেছেএই ছবি দেখে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মনে ওঠে তা হলো, ইনি কি সত্যিই দালাই লামা! হ্যাঁ, ইনি দালাই লামাকিন্তু এর সঙ্গে কোনো বিরূপ ঘটনা ঘটেনিতাহলে কি এমন ছবি ব্যবহার করে কোনো নিম্নরুচির ঠাট্টা করার চেষ্টা করা হয়েছে? না, তাও নয়
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বেলজিয়ামে 'নির্যাতন বন্ধ করো' শিরোনামে একটি প্রচার অভিযান চালায়এতে বিশ্বের তিনজন বিখ্যাত ব্যক্তির বিধ্বস্ত মুখমণ্ডলের ছবি ব্যবহার করা হয়তারা হলেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা, আমেরিকার রক স্টার ইগি পপ এবং জার্মানির ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল ল্যাজারফিল্ডতাঁদের ছবি ব্যবহার করে নির্যাতনের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছে অ্যামনেস্টি
খবরে বলা হয়েছে, এই তিনজনের মুখমণ্ডলের ছবি ব্যবহার করে বেলজিয়ামসহ ইউরোপে মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টিনির্যাতিতরা কিভাবে নারকীয় নিষ্ঠুরতার শিকার হন, তা মানুষের মধ্যে তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি
সূত্র : এই সময়
Learn more »

নীতি ও র্বজতি

                                           নীতি ও র্বজতি

গরৈকি ভষণ ধারণ করনে যারা, 
বৌদ্ধ মত,ে শ্রামণ ভক্ষিু তারা।
শীল সমাধি প্রজ্ঞা তাদরে অনুশীলন ব্রত,
লোভ,দ্বষে,মোহ,তৃষ্ণা করবনে তারা হত।
বুদ্ধ জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে করবনে র্ধম প্রচার,
জীবগনে শক্ষিা দবিনে জীবন দুঃখরে আগার।
জাগ্রত হয়ে নজিে অপরে জাগাব,ে
ভক্ষিু জীবনরে প্রকৃত ব্রত হতে হবে তবে ।
কন্তিু দুঃখরে বষিয় র্বতমান,ে
র্ধম নয়িে পালটিক্সি করে কতপিয় ভক্ষিুগন,ে
অলোভ,অদ্বষে,অমোহরে কথা বলনে তারা দায়কগণ,ে
প্রতারনা করছনে তারা প্রতি ক্ষণে ক্ষণ।ে
সংগঠনরে সভাপত,িঅনুষ্ঠানরে সভাপত,ি
পাওয়ার কত ভীতরিীত,ি
না পলেে তাহা হচ্ছে র্কীত,ি
ধ্বংস যজ্ঞরে কাহনিী গীত।ি
ছোট ভক্ষিুদরে মড়ার উপর খড়ার ঘা,
জোটে থাকলে অভয় যা।
ব্যাতক্রিম ঘটলে পরে দৌড়ে গয়িে দায়ক ধর,ে
তাড়য়িে দওেয়ার ভয় দখেয়িে হংিসার জালে মার।ে 
আর কত অপর্কমে হয় যে তারা রত,
মুখে তাদরে র্ধমরে কথা চলনে গৃহীর মত।
কি বলে ভক্ষিু হলনে, কি কাজ করে চলনে ?
নোংরা পলটিক্সিে র্জজরতি দায়কদরে তোষামদ ও করনে।
ক্ষমতার লোভে তারা দখেি কত নচিে নামনে,
ভক্ষিু সমাজ কলুষতি করতে কত নয়িমকানুন আননে।
এটায় কি ভক্ষিু জীবন,ভক্ষিু রীতি নীত,ি
প্রশ্ন জাগে মনরে মধ্যে আবার জাগে ভীত।ি

লখেক:-ভদন্ত করুণাশ্রী থরে,

অধ্যক্ষ, সয়ৈদ বাড়ী র্ধম প্রর্বতন বহিার।

Learn more »

বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক

                               বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক


প্রথম কর্ম বিপাক : বুদ্ধের প্রথম কর্ম বিপাক হল বোধিলাভের জন্যে ছয় বৎসর কঠোর দুঃখ চর্যা। গৃহত্যাগের পর সেকি জীবনপণ তপস্যা, যা কোনকালে কোন রাজপুত্র এরূপ কষ্ট স্বীকার করেছেন বলে মনে হয় না। মানব-দুঃখের অন্তসাধনের কথা আবিষ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে একজন রাজপুত্র যেভাবে দুঃখ কষ্ট অকাতরে ভোগ করেছেন, তা যেমনি বর্ণানাতীত তেমনি লোমহর্ষক। দিবারাত আহার যা করবেন তা যৎ সামান্য। প্রথমত দিনে কোনদিন একবেলা কিংবা দু’চার দিনে একবেলা পরে সপ্তাহ অন্তর এমন কি অর্দ্ধমাস অন্তর সংগৃহীত দু’এক গ্রাস অন্ন আহার করতেন। কোন সময় শাক তৃণ বা ভূ-পাতিত ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করেছেন। পাংশুকুর বস্ত্র বা শবাচ্ছাদন অথবা মশান লব্ধ বস্ত্র কিংবা গাছের বল্কল অথবা মৃগচর্ম ধারণ করেছেন। কেশ-শ্মশ্র“ মুণ্ডণের তা তো কথাই উঠে না। অর্ধাহারে অনাহারে, কন্টক শয্যায় শয়ন উর্ধ্ববাহু ও উৎকুটিক আসনে দিনের পর দিন তপস্যা রোমাঞ্চকর বৈ কি? ধূলাবালিতে কোন সময় দেহ ঢাকা পড়ে যেত কিন্তু হাত দিয়ে পরিষ্কার করা যে নিয়ম বিরুদ্ধ। স্মৃতিমান হয়ে সাবধানে চলাফেরা করতেন যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীও পায়ের নীচে পড়ে পিষ্ট না হয়। সর্বসাধারণের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যে গভীর অরণ্যে আত্মগোপন করে থাকতেন। বছরের পর বছর অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অনাবৃত দেহে কখনও অরণ্যে শ্মশানে কৃচ্ছসাধনের ফলে দেহ হয় জীর্ণ শীর্ণ বেড়িয়ে পড়ে হাড়-পাঁজরা, চক্ষু হয় কোটরগত। পেটে-পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল কোটরগত। পেটে পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল। উত্থান শক্তি রহিত হয়। এরূপ কঠোর তপশ্চর্যায়ও স্বীয় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় তিনি সে পথ পরিত্যাগ করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন। এরই ফলশ্র“তিতে শুভ বৈশাখী পুর্ণিমায় বোধিরূপ মহাজ্ঞান লাভে তিনি জয়যুক্ত হন। অতীতের কর্ম : অতীতে কাশ্যপ বুদ্ধের সময়ে আমি এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, নাম ছিল জ্যোতিপাল। আমার এক বন্ধু ছিল তার নাম ঘটিকার কুম্ভকার। যিনি কাশ্যপ বুদ্ধের একনিষ্ঠ উপাসক এবং শীল সমাধি প্রজ্ঞায় অধিষ্ঠিত হয়ে অনাগামী মার্গফল প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন বন্ধু জ্যোতিপাল, জগতে বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন বুদ্ধেরা মহাজ্ঞানী বিমুক্ত পুরুষ, তাঁরা সদ্ধর্মের বাণী প্রচার করে মানুষকে নির্বাণের সন্ধান দেন। তিনি নয়টি গুণের অধিকারী। চলুন একসময় তাঁর কাছ থেকে ধর্মবাণী শুনে মুক্তির সন্ধান পেতে পারেন। মাত্র ছয় দিনের কঠোর সাধনায় তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন। এ কথা শুনে জ্যোতিপাল বললেন তাই নাকি? বুদ্ধ হওয়া কি এতো সহজ ব্যাপার! মাত্র ছয় দিনের সাধনায় বুদ্ধ হওয়া যায়। ছয়দিনের সাধনায় যদি তা লাভ করা যায় তবে প্রস্তুত। তাঁর নিকট আমি যাব না, তুমি যাও। এভাবে বুদ্ধকে তিরস্কারের দরুণ আমাকে ছয় বছর নিস্ফল কষ্টকর সাধনা করতে হয়েছে। এছাড়া জন্মে জন্মে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে বুদ্ধকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্যে। এটিই বুদ্ধ তথাগতের দ্বাদশ কর্ম বিপাকের প্রথম কর্ম বিপাক।


বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম বিপাক : বুদ্ধের জনপ্রিয়তায় অন্য তীর্থিকগণের সম্মান ও লাভ সৎকার বহুলাংশে কমে যায়। এ জন্যে তাঁরা বুদ্ধের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে চিঞ্চা মানবিকা নামের এক সুন্দরী রমণীকে অর্থ দিয়ে প্রলোভিত করেন। তাকে বলা হয় মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পর জেতবন বিহারের দিকে যেতে এবং বিহারের সমীপে কোন একটি বাড়িতে রাত কাটাতে। কেহ জিজ্ঞেস করলে চিঞ্চা বলতো জেতবন বিহারে বুদ্ধের কাছে যাচ্ছি। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে চলে আসার সময় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো জেতবন বিহার থেকে আসছি। এভাবে নয়-দশ মাস কাটানোর পর একদিন এ দুশ্চরিত্রা পেটে কাষ্ঠ বেঁধে গর্ভবতীর ছদ্মবেশে বুদ্ধের ধর্মসভায় গিয়ে বলল হে মহান ধর্মবেত্তা। ধর্মোপদেশ দিতে তোমাকে তো চমৎকার দেখাচ্ছে। আমি যে তোমার কারণে গর্ভবতী হয়েছি। এর জন্যে কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছো? তুমি শুধু আমার শয্যাসঙ্গী হতে জান, কিন্তু একটা গর্ভবতী মহিলার দেখাশুনা কিভাবে করতে হয় তা জাননা। কিছুক্ষণের জন্যে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম দেশনা বন্ধ রাখলেন। এবং এরূপ জঘন্য অপবাদ শান্ত সৌম্যভাবে সহ্য করে বললেন “বোন” তুমি যা বলছ তা কতটুকু সত্য তা তোমার কাছেও জানা এবং আমার কাছেও জানা। বুদ্ধের বোন সম্ভোধনে এবং শান্ত সৌম্য ব্যবহারে চিঞ্চা খুবই লজ্জাবোধ করল। কারণ সে বুদ্ধ থেকে এরূপ শান্ত ব্যবহার আশা করেনি। দেবরাজ ইন্দ্রের আসন উত্তপ্ত হল, দেবরাজ দুইজন দেবপুত্রকে পাটালেন। তারা দৈবক্রমে চিঞ্চার কাশি উৎপন্ন করলেন। কাশি আসার কারণে পেটের বাঁধন ছিঁড়ে যায় এবং কাষ্ঠসমূহ পড়ে যায়। এতে তার মিথ্যা দোষারূপ সবাই বুঝতে পারে। তৎক্ষনাৎ তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বুদ্ধের ধর্মসভা থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু বুদ্ধের প্রতি এরূপ জঘন্য অপবাদের কারণে চিঞ্চার মহাপাপে মাটি দু’ভাগ হয়ে সে অতলে তলে যায়। সে অবীচি নরকে পতিত হয়। এরূপ ঘৃণ্য অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীতে একসময়ে আমি বারানসীতে গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করি। আমার ছিল নেশাপানের অভ্যাস। একদিন নেশা খেয়ে এক অর্হৎ ভিক্ষুকে ভীষণভাবে গালিগালাজ করি। অর্হৎ অর্হৎ বলে কতো ভাণ করবে। দুঃশীল লোক কোথাকার! ভন্ডামি করার আর জায়গা পাওনি। এভাবে একজন শীলবান মার্গলাভী অর্হৎকে মিথ্যা অপবাদের কারণে আমি বহুবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এরপরও বুদ্ধাবস্থায় এই পাপের ফলে এরূপ ঘৃণাকর পরিণতির সম্মুখীন হই। এটি বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক : অন্য সম্প্রদায়ের তীর্থিকেরা এক সময় এক পরিব্রাজকের সুন্দরী মেয়েকে নিয়োগ করলেন। এই সুন্দরী সকলকে বলতো গৌতম বুদ্ধকে তোমরা যাই বল না কেন, তিনি আমার স্বামী। একথা শুনে কেহ কেহ বিশ্বাস করত যে এই সুন্দরীর সাথে গৌতম বুদ্ধের গোপণ প্রণয় আছে। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ কি? কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে পারমী পূরণের সময় আমি মুনালী নামে গৃহী ছিলাম। তখন ছিল আমার মদ্যপানের অভ্যাস। একদিন মদ্যপান করে মাতাল হয়ে সুরভি নামক এক পচ্চেক বুদ্ধকে নিন্দা করেছিলাম। মণ্ডিত মস্তক, দুঃশীল অপদার্থ ও কর্মবিমুখ বলে তাঁকে তিরস্কার করি। এ নিন্দার পাপের ফলে ঐ সুন্দরী রমণী কর্তৃক আমি মিথ্যা অপবাদের শিকার হই। এটিই হল বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক। 
বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক : তীর্থিকেরা এ সুন্দরী রমণীকে একদিন হত্যা করে জেতবন বিহার সংলগ্ন এক ঝোপের মধ্যে লুকায়ে রাখে। হত্যার খবর রাজাকে বলা হলে রাজ-কর্মচারী কর্তৃক অনুসন্ধান কার্য চালানো হয় এবং রমণীকে জেতবনের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে তথাগত বুদ্ধ বা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি জনসাধারণের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে বুদ্ধত্ব লাভের উদ্দেশ্যে পারমী পূর্ণ করার সময় আমি এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে ধন দৌলতের অসাড়তা উপলব্ধি করে আমি ঋষি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করি এবং সাধনায় রত হই। কিন্তু কোন উন্নতি লাভ করতে পারিনি। আমার অনতি দূরে আর একজন ঋষি বাস করতেন। তিনি একদিন কোথা থেকে আকাশ মার্গে এসে হাজির হন। তাঁর এ ঋদ্ধি শক্তিতে আমার ঈর্ষাভাব জাগ্রত হয়। আমি তাঁকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করি। একজন সত্যিকার শীলবান ঋদ্ধি ও ধ্যানবল সম্পন্ন ঋষিকে অযথা তিরষ্কার করার অকুশলের কারণে আমাকে এরূপ মিথ্যা অপবাদের ফলভোগ করতে হয়। এটি বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক।


বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক : রাজগৃহের গৃধ্রকুট পর্বতে এক সময় ভগবান বুদ্ধ অবস্থান করতেন। তিনি একদিন ভিক্ষান্নে গৃধ্রকূটের নীচ দিয়ে যাবার কালে দেবদত্ত ঐ পর্বতের উপর থেকে প্রকান্ড এক প্রস্তর খন্ড বুদ্ধকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারেন। শিলাখণ্ডটি পর্বত গাত্রে বাঁধা পেয়ে ভেঙ্গে যায় এবং ছোট্ট একটি টুকরা বুদ্ধের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গলে পড়ে রক্তপাত ঘটায়। এ রক্ত পাতের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন- কোন এক অতীত জন্মে আমার ছিল এক ছোট বৈমাত্রেয় ভাই। আমাদের জীবন ধারণের মত জায়গা-জমি ও অর্থ-বিত্ত ছিল। যৌবনে বিবাহ করার পর বেশ কিছুকাল গত হলে আমার স্ত্রী আমাকে বলতো তোমার ছোট ভাই তোমাদের পৈতৃক অর্ধেক অংশের দাবীদার। কেহ না জানে মত তাকে মেরে ফেল্লে আমরা তো পুরো অংশ ভোগ করতে পারব। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের দিন সুখেই কেটে যাবে। আর কোন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। কিন্তু আমি কোন সময় আমার পত্মীর কথায় কর্ণপাত করিনি। কিন্তু যখন একই কথা বার বার শুনি, তখন একদিন আমার মনেও পরিবর্তন আসে। আমি আমার ছোট ভাইকে এক সময় গভীর জঙ্গলে নিয়ে প্রকান্ড একটা পাথর চাপা দিয়ে হত্যা করি। সে অপকর্মের ফল আমাকে নরকে গিয়ে বহুবার ভোগ করতে হয়। এরপরও এ অকুশলের অবশিষ্টাংশ এ অন্তিম জীবনে বুদ্ধ হয়েও ভোগ করতে হয়েছে। এটি বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক। 
বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক : ঐ প্রস্তর খন্ডের আঘাতে বৃদ্ধাঙ্গুলে রক্ত জমাট হয়ে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন ভগবান বুদ্ধ। এ অসহ্য ব্যথা প্রাপ্তির পূর্ব কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন- অতীত জন্মে একবার ছোট ছেলে থাকা অবস্থায় খেলা করবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দর্শন পায় মণ্ডিত মস্তক ও গেরুয়া বসনের এই সন্ন্যাসী দেখে একটু দুষ্টুমির ভাব মনে জাগে। হঠাৎ একটি ঢেলা কুড়িয়ে পচ্ছেক বুদ্ধের দিকে ছুড়ে মারি। তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন। এ পাপ কর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি এবং দুঃখ- কষ্ট ভোগ করি। এর বিপাক সম্পূর্ণরূপে ক্ষয় না হয়ে আমাকে পুনঃ কষ্ট দিচ্ছে। এটি বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের সপ্তম কর্ম বিপাক : মগধরাজ অজাতশত্র“র সহায়তায় বুদ্ধের মামাত ভাই ভিক্ষু দেবদত্ত তথাগত বুদ্ধকে হত্যা করার বিবিধ প্রচেষ্টা চালান। বহু চেষ্টার পর হত্যা করতে না পেরে এক সময় রাজার সেরা হস্তী নলগিরিকে দশমন মদ পান করায়ে বুদ্ধের চলার পথে ছেড়ে দেয়া হয়। বুদ্ধ ভিক্ষান্নে যাবার কালে ঐ মদমত্ত হস্তী রাস্তার দুকূল ভেঙ্গে সম্মুখের পানে আসতে দেখে সবাই দূরে পালিয়ে যেতে থাকে। মাতাল হস্তী দ্বারা বুদ্ধকে পদদলিত করে হত্যা করাই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু জন্ম জন্মান্তরের পারমীর প্রভাবে বুদ্ধ করুণা ও মৈত্রী চিত্তে ডান হাত  উর্ধেŸ তোলার সাথে সাথে হস্তী শান্ত হয়ে বুদ্ধের পদতলে লুঠিয়ে পড়ে। এ অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। হস্তী কর্তৃক বিতাড়িত হবার কারণ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেন বহু অতীতে আমি হাতির মাহুত ছিলাম। এক সময় হাতির পিঠে চড়ে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দেখা পাই। হঠাৎ আমার মনে দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়। পচ্চেক বুদ্ধকে পেছন দিকে ভয় প্রদর্শনের জন্যে অগ্রসর হই। যেহেতু পচ্চেক বুদ্ধেরা নির্বাণ লাভী, তাঁরা ডর-ভয় শূন্য, আসক্তি শূন্য ও প্রপঞ্চশূন্য। পরে এ দুষ্কর্মের জন্যে আমি তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই তা সত্ত্বেও আমি অনেকবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এখনও এ পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি বুদ্ধের সপ্তম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক : দেবদত্ত কর্তৃক পাথরের আঘাতে পায়ে যে রক্ত জমাট ও কালো হয়ে বুদ্ধ কষ্ট পেয়েছেন অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন হয়েও তিনি ব্যথা সারাতে পারেননি রাজ বৈদ্য জীবকের অস্ত্রোপচারের দ্বারা তিনি সেরে উঠেন। তবে ছুরি দিয়ে কাটতে ব্যথা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেনÑ আমি অতীতে এক জন্মে রাজা ছিলাম। তখন মদ খাওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়। একদিন অতিরিক্ত মদপান করে আমার নিজ তলোয়ার দিয়ে আমার এক কর্মচারীকে আমি হত্যা করি। এ হত্যার পাপে আমি নরকে গমন করে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করি। জন্মে বহুবার নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তারপরও এই হত্যা জনিত পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে এই অন্তিম জন্মে। এটি বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক : মাঝে মাঝে তথাগত বুদ্ধ মাথা ব্যথা বা শিরঃ পীড়ায় কষ্টভোগ করতেন। এই ব্যথার অতীত কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন -বোধিসত্ব অবস্থায় পারমী পূরণকালে আমি একজন্মে জেলে পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতামাতা ছিল মৎস্যজীবি। মাছ ধরে ও বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করত। প্রায় সময় মাছ ধরে এনে মাছের মাথায় আঘাত করে মেরে রশিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করত। মাছের মাথায় আঘাত দেয়ার দৃশ্যে আমি আনন্দ লাভ করতাম। বলতাম আহা কি মজা এভাবে হত্যা কাজে আনন্দের কারণে আমি জন্মে জন্মে বহু কষ্ট ভোগ করেছি এবং বর্তমানেও শিরঃ বেদনায় মাঝে মধ্যে কষ্ট পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের দশম বিপাক : বৈরঞ্জা (কনোজ ও মথুরার মাঠ) নামক স্থানে তথাগত দ্বাদশ বর্ষাবাস যাপন করেন। তথায় ভিক্ষান্নে বের হলে নিুমানের খস্খসে চালের ভাত তিনি লাভ করতেন। শিষ্য কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে বুদ্ধ এর কারণ স্বরূপ বলেন অতীত এক জন্মে আমি গরীব গৃহে জন্মগ্রহণ করি। একদিন এক গৃহে আমি কতগুলো ভিক্ষুকে আহার করতে দেখি। মুন্ডিত মস্তক ভিক্ষু দেখে আমি তাঁদেরকে নানা অপবাদে জর্জরিত করি। আমি বলি এসব অপদার্থকে কেন খাওয়ানো হচ্ছে, যাদের ব্যবসা বাণিজ্য নেই, নেই কোন কাজ কর্ম? পরের শ্রমলব্ধ আহার খেতে তাঁদের লজ্জা হয় না? তাঁদেরকে ভাল ভাল খাবার না দিয়ে নিকৃষ্ট মানের অন্নব্যঞ্জন দেয়া উচিত। পাপকর্মের বিপাক আমি জন্মে জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মে বুদ্ধ হয়েও এর বাকী ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি হল তথাগত বুদ্ধের দশম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক : কোন কোন সময় বুদ্ধ ভগবানের কোমড় ব্যথা হত। এই কোমড় ব্যাথার অতীত কারণ ব্যাখ্যা করতে বুদ্ধ বলেন অতীত জন্মে আমি মুষ্টিযোদ্ধা ছিলাম। প্রতিযোগীতার এক পর্যায়ে আমি আমার বিপক্ষ মুষ্টিযোদ্ধার কোমড় ভেঙ্গে দিই। এই কৃর্তকর্মের পাপভোগ আমি বহু জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মেও ভোগ করে আসছি। এটি হল বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক । 


বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক : বুদ্ধের শরীর ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি হাতীর বল সম্পন্ন। এরপরও পরিনির্বাণের পূর্বে চুন্দের গৃহে শূকর মদ্দবসহ অন্নব্যঞ্জন ভোজন করে বুদ্ধের রক্ত বিকার হয়। এই আহারই বুদ্ধের শেষ আহার। এ রোগভোগের পূর্ব কারণ প্রদর্শন করতে বুদ্ধ বলেন সুদূর অতীতে পারমী পূর্ণ করার সময়ে এক জন্মে আমি চিকিৎসক ছিলাম। সে সময় এক শ্রেষ্ঠী পুত্রের চিকিৎসা করে তাকে ভাল করে তুলি। ভাল হবার পর পূর্ব চুক্তিমতে আমাকে অর্থ প্রদান না করায় আমি তাকে পুনঃ একটি ঔষধ খেতে দেই। এ ঔষধ খেয়ে তার রক্ত বমি ও রক্ত বিকার হয় এ অপকর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি। নরক যন্ত্রণা ভোগের পরও এর বিপাক দান নিঃশেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার পরিনির্বাণের পূর্বে শেষবারের মত রক্ত আমাশায় কষ্ঠ পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম-বিপাক।

Learn more »

হাজার বছরের চর্যাপদ মুখস্ত করলেন ঢাবি ছাত্র জাকেরুল ইসলাম কায়েস

খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বাংলাভাষায় রচিত প্রথম গ্রন্থ চর্যাপদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা প্রায় দুঃসাধ্য কর্মটি করে দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের ছাত্র জাকেরুল ইসলাম কায়েস। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা। বাংলামেইল-ডট-কম
এ ব্যাপারে জাকেরুল ইসলাম কায়েস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকে চর্যাপদের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল। এক সময় চিন্তা করলাম এটি মুখস্ত করা যেতে পারে। সেখান থেকেই মুখস্ত করা। আসলে ইচ্ছে করলে মানুষ অনেক কিছুই পারে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চর্যাপদ মুখস্ত পরিবেশন করবেন বলে জানান তিনি।
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল আলম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি; ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এবং কবি, লেখক ও শিল্পী মো. আব্দুর রশিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রসিদ্ধ অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, চর্যাপদ মুখস্ত করা প্রকৃত পক্ষে কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু জাকেরুল তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এটি মুখস্ত করেছে। এটি তার মুখে শুনে মানুষ বুঝতে পারবে আমাদের ভাষা হাজার বছর আগে কেমন ছিল।
উল্লেখ্য, চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি না সে বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে সেটির অবসান হয়। এটি সৃজ্যমান বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা সংস্কৃতে পারদর্শী হলেও তারা তৎকালীন অপরিণত বাংলাতেই পদগুলো রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষার অদ্যাবধি আবিষ্কৃত আদিতম রূপ। হিন্দি, উড়িষ্যা বা মৈথিলি বিজ্ঞজনেরা এই ভাষায় নিজেদের পূর্বসুরিত্বের সন্ধান করলেও ভাষাবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফল বাংলা ভাষারই অনুকূল। এই ভাষা সম্প্রদায় বিশেষের সাধন-সংগীতের ভাষা বিধায় অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য; যদিও এতে উল্লিখিত ছন্দ ও রাগ-রাগিনী পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের পথনির্দেশিকারূপে কাজ করে।
সূত্র: বাংলামেইল-ডট-কম
সূত্র:  http://dhammainfo.com
Learn more »

“নির্বাণ”

                             “নির্বাণ”
২৬তম সংঘনায়ক দর্শনসাগর প্রিয়ানন্দ মহাথের
ভগবান গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত মতবাদ আমাদের কাছে বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত। সাধারণ ধর্ম বলতে যে সংজ্ঞা বা সংস্কার আমাদের মনকে অভিভূত করে এই মতবাদ আসলে ধর্ম নয়, ধর্ম থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পন্থা। প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ম অর্থে এই স্বভাব বা সংস্কার বিজ্ঞান বা অভিজ্ঞতা সৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সহয়তা করে মানুষ সমাজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে সাধারণত কোন সার্বভৌম শক্তির এখতিয়ার বলে মনে করা হয়। এই মতবাদ পৃথিবী সাধারণত একটি সার্বভৌম শক্তির অধীনে পরিচালিত বলে প্রচলিত ধর্ম সমূহ বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসে যে ধর্মগুলিকে সৃষ্টি করা হয় তা হচ্ছে স্বর্গলাভ। এই ধারণার পেছনে ভোগের প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল বলে ধারণা করা হয়। স্মৃতি আয়ুবোধে সাধারণত প্রাণী জগত পরিচালিত। তার জন্ম মৃত্যু কালসীমার স্তিমিত। এই সীমাকে অতিক্রম করে ভোগ সুখের পার্থিব জগতে স্থায়ী রূপ নেই। এই কারণে স্বর্গকে মানুষের লক্ষ্যে আনা হয়। প্রাণী জগৎ একত্রিশটি লোক সংস্কৃতিতে বিভক্ত। বিভাগগুলোর মধ্যে হচ্ছে, চারিটি অরূপ ব্রহ্ম, ষোল প্রকার রূপ ব্রহ্ম, সপ্তকাম সুগতি ভূমি, চারি অপায়। চারি অপায় বলতে নিরয়, প্রেত, তির্যক ও অসুর ভূমি, এই চারি অপায়ের ভিতর তির্যক ভূমি আমাদের দৃষ্টি সীমার ভেতর আছে। এই সম্পর্কে আমরা অতি নিকট থেকে অবগত হই অপর তিনটি প্রাণীর সংস্থা সাধারণের সৃষ্টির বাইরে। সপ্ত কাম সুগতির মধ্যে আমাদের মনুষ্যলোক একটি। অথবা মানুষেরা বিভক্ত একটি হচ্ছে পুরুষ অপরটি হচ্ছে নারী। এই দুই শক্তির সম্মিলিত শক্তিই সংসার নামে অভিহিত। এই দুই শক্তিকে কেন্দ্র করে সংসারে নানা অশান্তি এবং শান্তির ধারা  অবিরাম গতিতে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ চির চঞ্চল এবং গতি সম্পন্ন। স্থিতিশীলতার কোন চিহ্ন এতে নেই। এই পটভূমিকায় বিভিন্ন ধর্মের কল্পনা করা হয়। এই কল্পনার ভিতর বাস্তবের কোন অস্তিত্ব নেই। অপর ছয়টি কাম সুগতি দেবলোক নামে অভিহিত। এখানে ভোগ সুখের নিরাপত্তা আছে কিন্তু স্থায়ীত্ব গতিশীলতার কারণে এই ছয় কাম সুগতি জন্ম মৃত্যুর কালসীমায় সীষিত ষোল প্রকার রূপ ভূমি কাম সুখের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐখানে নর ও নারী রূপে কোন পৃথক সত্ত্বার অস্তিত্ব নেই। এই কারণে সম্পদের ও প্রযোজনীয়তা নেই। এই প্রাণী লোকের ধর্ম হচ্ছে মৈত্রী, করুণা,  মুদিতা ও উপেক্ষা। সর্ব জীবের কল্যাণ ব্রতে এরা নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু প্রাণী জগতে গতিশীলতার কারণে এরাও জন্ম মৃত্যুর অধীনে। চারি প্রকার অরূপ ভূমির দৈহিক জীবনের কোন অস্থিত্ব নেই। কিন্তু প্রকৃতির কারণে সুনির্দিষ্ট কাল পরে এরাও মৃত্যু মুখে পতিত হয়। নতুন জীবন ধারণের মাধ্যমে তাদেরও শক্তি সঞ্চয় করতে হয়।
যেহেতু আমাদের প্রাকৃতিক জগৎ ভোগও ধর্ম সমন্বয়ে গঠিত যেহেতু তাদের সার্বিক জীবন ধারায় জন্ম মৃত্যুর সীমায় সীমিত। আমাদের সভ্যতার চিকিৎসা বিজ্ঞান জরা ব্যাধি মৃত্যুর গতিরোধ করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। কিন্তু আজকের তারিখ পর্যন্ত এর কোন সমাধান দিতে পারেনি। প্রাণী স্থানে জন্ম গ্রহণ করে কাল তাকে গ্রাস করে। পৃথিবীর একদিকে জীবন অন্যদিকে জন্ম জরা ব্যাধি মৃত্যু। দুই ধারা হচ্ছে জীবন ধর্মের বাস্তব রূপ জীবন যেহেতু সমবায়কৃত সেহেতু সমবায়ে বিলোপে তার ভিতর জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু প্রবিষ্ট হয়। ভগবান গৌতম এই ধারাকে রোধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বুদ্ধের জীবনকে আমরা  তিন ভাগে করে দেখি এক ভাগ হচ্ছে প্রস্তুতিপর্ব, দ্বিতীয় অধ্যায় হচ্ছে প্রস্তুতি অবস্থা, তৃতীয় অধ্যায় হচ্ছে সমাপ্তি অবস্থা বা ফল অবস্থা। আমরা বুদ্ধ জীবন সমাপ্তি দিক দিয়েই বুদ্ধকে ভগবান চেষ্টা করে এসেছি, তার ফলে অন্যান্য ধর্ম প্রর্বতকের ন্যায় তাকেও একজন ধর্ম প্রবর্তক হিসাবে অভিহিত করে এসেছি। কিন্তু তিনি ধর্ম প্রবর্তক নন তিনি প্রবর্তন করেছেন ধর্মচক্র। যে ধর্মচক্র জীবনকে জীবকে পরিচালিত করে আসছে এখানে নির্বাণ শব্দটি আমাদের নিকট বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে। এই নির্বাণ হচ্ছে জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর অবসান। মৃত্যুর দ্বারা একটি জীবনের সৃষ্টি হচ্ছে তা আমরা অনব্রত দেখে আসছি। কোন বিশেষ শক্তি সমূহের অবসানের ফলে যে নতুন শক্তির উদ্ভব হয় তা আমরা অনব্রত অনুভব করছি। যে শক্তি সমূহের দ্বারা আমাদের জীবনের সুখ পরিচালিত তা অনব্রত মৃত্যুর ভিতর দিয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন দুধের বিয়োগে দধির সৃষ্টি হয়। জলশক্তি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবার ফলে জল বিদ্যুতের উদ্ভব হয়। এই বিদ্যুৎ বিভিন্ন শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে জন সাধারণের অনেক উপকার হচ্ছে। আজ কালকার যুগকে আমরা সাধারণত বৈজ্ঞানিক যুগ নামে  অভিহিত করে আসছি। আমাদের অভিজ্ঞতা বা বিজ্ঞান সাধারণ বস্তুর নির্ভর। এ কারণে বিভিন্ন বস্তুর সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা অমানবিক যুগে প্রবেশ করেছি। বিজ্ঞানের সৃষ্টি শক্তি ও ধ্বংস শক্তির সম্পর্কে এখন আমরা ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে এসেছি। বিজ্ঞান সুখ ও শান্তি সৃষ্টির যেমন সহায়তা করছে অসুখ ও অশান্তি সৃষ্টির পেছনে তার প্রভাব ও আকার আমরা ক্রমে উপলব্ধি করে এখন শক্তির অন্বেষায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এই প্রচেষ্টা সত্যিকারভাবে কখনো যে সফল হবে এই আশা মোটই করতে পারিনা। বস্তু বিজ্ঞানের সাথে আমরা এখন মনোবিজ্ঞান শব্দটি প্রয়োগ করছি। কিন্তু বস্তু বিজ্ঞানে যে মনোবিজ্ঞানে বহিঃরূপ একথা এখনো স্বীকার করতে পারছি না।
তথা কথিত বৈজ্ঞানিক যুগকে কেন্দ্র করে আজকের জীবন পরিপূর্ণ ও অস্থিতিশীলতা এসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ভগবান গৌতম বুদ্ধের মতবাদ আমাদের আলোচনার ভিতরে আনতে হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন জন্ম দুঃখ, তদ্রুপ জরা, ব্যাধি, মৃত্যুও দুঃখ। এর থেকে যদি মুক্তি পেতে হয় একে বন্ধন শূন্য করতে হবে। জন্মের সঙ্গে জরা ব্যাধি এবং মৃত্যুর সঙ্গে জন্মের প্রবাহগত যোগ রয়েছে। নির্বাণ অথবা অবসান অবশ্যই করতে হবে। কি করে করা যায় এই নিয়ে তার চিন্তা এসেছিল বহুকাল পূর্বে। মনীষী নিউটন যেমন আপেল ফলের পতনকে কেন্দ্র করে জগতের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেছিলেন, সিদ্ধার্থ গৌতমও তেমনি জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এর আওতা থেকে মুক্তির জন্য উপায় অন্বেষণের কথা ভাবছিলেন। এই তার জীবনের শুরু। তিনি এই পথ অবিষ্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলেন। “দীপঙ্কর বুদ্ধের”  কাছ থেকে তারপর থেকে তার বোধিসত্ত্ব জীবন আরম্ভ হয়। এই জীবন চর্চার দশ পারমীকে পথ আবিষ্কারের উপায় হিসাবে গ্রহণ করলেন, এই বিষয় গুলো হচ্ছে দান, শীল, নৈষ্ক্রর্ম, প্রজ্ঞা, বীর্য, ক্ষান্তি, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী ও উপেক্ষা। এই দশটি বিষয়কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হলো পারমী, উপপারমী ও পরমার্থ পারমী। বাহ্যিক বিষয় সমূহকে কেন্দ্র করে যে অনুশীলন তিনি করলেন তা পারমী নামে অভিহিত, জীবনকে কেন্দ্র করে তিনি যে অনুশীলন করলেন তা উপ-পারমী নামে অভিহিত এবং স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে কেন্দ্র করে যে অনুশীলন করা হয় তা পরমার্থ পারমী নামে অভিহিত করা হয়। সম্পত্তি জীবন ও স্ত্রী, পুত্র, কন্যা  এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সাধারণতঃ জগত ও জীবন। একে কেন্দ্র করেই সভ্যতার যাবতীয় ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গৌতম এই তিনটির বিনিময়ে পূর্ব উক্ত দশটি বিষয়কে জীবনের ভেতর প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই প্রস্তুতি পর্ব বা বোধিসত্ত্ব জীবন অসংখ্যা কাল সীমার সীমিত কপিল বস্তুর জীবন ধারা হচ্ছে এর পরিপূর্ণ বিকশিত রূপ যার ফলে তাঁর দৈহিক রূপ বত্রিশ লক্ষণ ও অশীতি অনুব্যঞ্জনে সীমিত এই মহান পুরুষ শ্রেষ্ঠ বৈশাখী পূর্ণিমায় ঐ শক্তি বলে কর্মের সম্পূর্ণ নিভৃতি করলেন অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে কর্মের নিরোধ ঘটালেন। যা জগতে “ক্লেশ নির্বাণ” বা বুদ্ধত্ব লাভ নামে অভিহিত। বুদ্ধত্ব লাভের পর কুশিনগর শাল বৃক্ষ তলে বিপাক বা ফলের তিনি নিভৃতি ঘটালেন যা আমাদের কাছে “স্বন্ধনির্বাণ”  বা “পরিনিবার্ণ” নামে অভিহিত। জীবনের দুইটি দ্বারা একটি হচ্ছে জন্ম বা বিপাক রাশি। যা কর্ম সৃষ্টি করে। বিপাক বা ফল দিয়ে আমরা যে কর্মের সৃষ্টি করি তা আমাদের জন্মান্তরের বা ভিন্ন শক্তিতে রুপান্তরে সহায়তা করে। এই আমরা জীবনের ভেতর দিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভব করি কিন্তু এই সম্পর্কে আমাদের যথার্থ উপলব্ধির অভাবে সঠিক ধারণা করতে পারিনা।
সুতরাং যথার্থ মুক্তি বা শান্তি যদি আমাদের কাম্য হয় কর্মের অবসান করতেই হবে। কর্ম নিরোধের মাধ্যমে আমরা বিপাককে নিরোধ করতে পারবো। এতদ উভয়ের নিরোধকেই “নির্বাণ” নামে অভিহিত করা হয়। 
প্রবন্ধটি : নির্বাণ পত্রিকা বৈশাখী পূর্ণিমা সংখ্যা-১৯৮৭ মে ১২ হতে সংগৃহিত



Learn more »

নববর্ষের অভিভাষণ

নববর্ষের অভিভাষণ
২৬ তম সংঘনায়ক, দর্শনসাগর প্রিয়ানন্দ মহাথেরো
আজ ১৩৮১ সালের প্রারম্ভের দিন, ১লা বৈশাখ। এই নববর্ষের শুভ সূচনায় আমার শুভেচ্ছা ও প্রীতি জানাচ্ছি আপনাদের সকলকে। কালের চলমান গতিতে নববর্ষের সূচনা নিয়ে প্রতিবছর আমাদের নিকট উপস্থিত হয়।
বৌদ্ধধর্ম হচ্ছে জীবন দর্শন। জীবনকে সম্যকরূপে দর্শন করতে গেলেই “দুঃখ সত্যের” উপলদ্ধি করতে হয়। এই উপলদ্ধি যথার্থতার সন্ধান দেয় এর পিছনের কারণ। দর্শনের পরিভাষায় একে বলা হয় সমুদয় সত্য। দুঃখ এবং দুঃখের কারণ রোধ করতে গেলেই সন্ধান করতে হয় পথের। এই হচ্ছে- আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই পথ ধরে অগ্রসর হলেই দুঃখের নিরোধ হয়। এই কারণে প্রয়োজন বোধে ধর্ম বা স্বভাব বদলাতে হয়। বৌদ্ধধর্ম এবং তার সংঘের আবির্ভাবের পর থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জগতের সঙ্গে তাল রেখে চলতে শিক্ষা করেছেন। মনকে শুদ্ধ রেখে আপনার চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তথাগতের নির্দেশ ‘বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়’ বাণীর সার্থক রূপায়ন করেছেন। এর ফলে আমরা দেখি অতীত ভারতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি এবং বহির্বিশ্বে বিশেষতঃ এশিয়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গঠনমূলক অবদান।
আমাদের ভাবতেও বিস্ময় লাগে বৌদ্ধধর্মের মর্যাদা আমরা ভারতবর্ষে রাখতে দৃষ্টিকোণ থেকে তা খানিকটা সত্য বটে, কিন্তু আমার মতে আমাদের শীল বিপত্তি এর জন্য মূলতঃ দায়ী। আমাদের পরস্পরের  বিদ্বেষের কারণে এসব হয়েছে। ইদানিংকালে নবদীক্ষিত কতিপয় মহারাষ্ট্রীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে আমার সাক্ষাত লাভের সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি তাদের ভিতর যে শক্তি আছে তা সারা ভারতবর্ষকে আলোকিত করতে পারে। কিন্তু তাদের উপযুক্ত শিক্ষক নেই। এর অভাবে তাদের সুমহান প্রয়াস হয় ব্যর্থ হতে পারে। ওদের জন্য কি আমাদের কিছু করণীয় নেই? ভারতীয়দের মধ্যে কোন উন্নতমানের সন্তান যদি জন্মগ্রহণ না করে বাইরের কারও পক্ষে সম্ভব নয় যে ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনঃজাগরণ করে।
বুদ্ধ বলেছেন মনুষ্যত্ব লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তিনি দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন মনুষ্যত্বের পরম প্রকাশ তার সুমহান ত্যাগের ভিতর। এই কারণে তিনি বলতে পেরেছিলেন- সমগ্র প্রাণীর কল্যাণের উপর ব্যক্তির কল্যাণ নির্ভরশীল। জ্ঞান ব্যক্তির এককভাবে সম্পূর্ণ নয়। তার ইন্দ্রিয় গ্রাস যথার্থ প্রমাণ। তা ভিতরে চক্ষুকর্ণ নাসিকা এবং মন, বাহিরে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং ভাবের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা অনাত্মাবাদ সিদ্ধ করেছে, যারই পটভূমিকায় বিশ্বের প্রথম সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বৌদ্ধধর্ম তিনটি রতেœ বিশ্বাস করে। প্রথম রতœ হচ্ছে জ্ঞান বা বুদ্ধ; দ্বিতীয় রতœ হচ্ছে ধর্ম, তৃতীয় হচ্ছে সংঘ।
বুদ্ধ জানতেন জ্ঞানের সঙ্গে কর্মের অর্থাৎ চরিত্রের যদি সমন্বয় না ঘটে তা হলে যথার্থ কর্মসিদ্ধি সম্ভব নয়।
আমি আশা করি কর্মে, চিন্তায়, বাক্যে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে আমরা প্রতিষ্ঠাকে দেখব।

বিঃ দ্রঃ- এই রচনাটি জগজ্জ্যোতি (কলকাতা) ২০০০ সাল সংখ্যা থেকে সংকলিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিতÑ


Learn more »

বৌদ্ধ নারীদের ভিন্ন-ধর্মাবলম্বীর সাথে বিয়ে নিষিদ্ধঃ আইন করছে মিয়ানমার সরকার

ইয়াঙ্গুনের একটি মফস্বল শহরে বাস করেন উইন নিয়াং নামে এক মুসলমান। তাঁর স্ত্রী বৌদ্ধ এবং তাঁরা ৩০ বছর ধরে সংসার করে যাচ্ছেন। কথা প্রসঙ্গে উইন নিয়াং জানান, বিয়ের সময় তাঁর কাছে মনে হয়েছিল ধর্ম কোন বিষয় নয়, প্রধান হল তাঁর স্ত্রীর নৈতিক চরিত্র ও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া। তিনি বলেন, “আমরা সবসময়ই বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের সংসারের সব কাজ করে আসছি”।
তবে এমন ঘটনা হয়তো আর দেখা যাবেনা মিয়ানমারে। বৌদ্ধ ধর্ম ও সমাজের অবক্ষয় রোধ করার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার এবার বৌদ্ধ নারীদের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিয়ে আইন করে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি বিল এখন সংসদে আলোচনাধীন অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় এই বিলটি পাশ হলে বৌদ্ধ নারীরা অন্য ধর্মের কোন পুরুষের সাথে বিয়ে করা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
গত বছরের জুন মাসে "আন্তঃধর্মীয় বিবাহ আইন" নামের এই বিলটির একটি খসড়া তৈরী করা হয় এবং তা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে মতামতের জন্যে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বিরাজমান ১৯৫৪ সালের বিবাহ আইনটি অত্যন্ত দূর্বল বলে মনে করছেন যার প্রেক্ষিতে সম্মিলিতভাবে এই নতুন বিল্টি প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
প্রস্তাবিত আইন মতে, কোন বৌদ্ধ নারী যদি ভিন্ন ধর্মের কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই তার পিতা-মাতা এবং সরকারের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মর্তাদের অনুমতি নিতে হবে যা বাস্তবে প্রকারান্তরে অসম্ভবই বলা চলে।
আইনের যে কোন ধারা বিন্দুমাত্র ভঙ্গ হলেই কমপক্ষে ১০ বছরের জন্যে জেল দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়া আইনে।
এই আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইয়াঙ্গুনের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু পামোক্ষা বলেন, “সামাজিক বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অন্য ধর্মের আইন-কানুন বৌদ্ধ ধর্মের চাইতে অনেক অনেক বেশী কড়া। আমাদের এই আইনটি অত্যন্ত প্রয়োজন কারন বৌদ্ধ সমাজে নারীদের সুরক্ষায় আমাদের কাছে আর কোন আইনি বিধান এখন পর্যন্ত নেই”।
তবে নারীরাই খোদ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। এই আইনকে মিয়ানমারের নারী অধিকার কর্মীরা নিজেদের জন্যে অপমানজনক মনে করছেন।
নারীদের অধিকার, শিক্ষা, ও স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে কাজ করেন “জেন্ডার ইকুয়ালিটি নেটওয়ার্ক” –এর সিনিয়র ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন কোর্ডিনেটর মে সাবে ফিউ বলেন, “আমাদের নারীদের দৈনন্দিন জীবনের নিজ নিজ স্বিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নিজেদেরই আছে। সুতরাং কোন সরকার কিংবা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার অধিকার নেই”।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইতিমধ্যেই এই আইনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ –এর এশিয়া জোনের পরিচালক ব্র্যাড এডামস মনে করেন, বার্মা ঐতিহাসিকভাবেই বহু-সাংস্কৃতিক একটি জাতি। সরকার “আন্তঃধর্মীয় বিয়ে” নিষিদ্ধের যে বিভাজনমূলক আইন প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে সেটা নিঃসন্দেহে আগুন নিয়ে খেলার সমতুল্য।
গত ২০১৩ সালের জুন মাসে এই বিলটি প্রস্তাবিত হওয়ার পর থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ইতিমধ্যে এই বিলের সমর্থনে ৩০ লাখেরো বেশী মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।
তবে নারী অধিকার কর্মী মে সাবে ফিউ বিলটি আইনে পরিণত হলেও নানা ধরনের অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সংঘাতে হাজারো লোকের প্রাণহানীসহ লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছে মিয়ানমারে।

খবরঃhttp://dhammainfo.com
Learn more »

পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“

                   

                  

পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“
  প্রথম বৈরী- অগ্নি বৈরী বা শত্র“ : মানুষের জীবনে টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মূল্যবান বস্তু আছে কিন্তু যখন বাড়িতে আগুন লাগবে তখন পুড়ে সব ছাই হয়ে যাবে। আগুন আমাদের জীবন যাপনে যেমন অনেক সহায়তা করে আবার অপূরণীয় ক্ষতিও সাধন করে। তাই অগ্নিবৈরী বা অগ্নিশত্র“ মানুষের জীবনে বড় শত্র“।
দ্বিতীয় বৈরী- জলবৈরী বা জলশত্র“ : জল বা পানি মানুষের জীবন যাপনে অনেক বড় সহায়তা করে। আবার পানি দ্বারা মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বৎসর বন্যা হয়। বন্যার পানি আমাদের টাকা-পয়সা, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, ঘর-বাড়ি নষ্ট করে। বন্যার পানি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়। তাই এটাও এক প্রকার শত্র“।
তৃতীয় বৈরী- চোর-ডাকাত হল মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“। চোর-ডাকাত মানুষের ধন সম্পত্তি, টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা এমন কি জীবনও হরণ করে। তাই চোর-ডাকাত মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“।
চতুর্থ বৈরী : রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধান হল চতুর্থ বৈরী। রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের উপকার করে থাকেন আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের শত্র“রূপে আবির্ভূত হন। যেমন একজন ব্যক্তি অনেক সম্পদের মালিক যে কোন কারণে রাজা আদেশ দিলেন ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তি রাজ কোষাগারে নিয়ে আসার জন্য। ঐ ব্যক্তির অনিচ্ছা সত্ত্বেও সকল সম্পত্তি রাজাকে দিয়ে দিতে হয় অর্থাৎ রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানের কারণে সম্পদ হরণ হওয়ায় রাজাকে চতুর্থ বৈরী বলা হয়।

পঞ্চম বৈরী : অবাধ্য সন্তান হল পঞ্চম বৈরী বা শত্র“। যখন সন্তান-সন্ততি মা-বাবার অবাধ্য হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। যেমন দুষ্ট লোকের সাথে মিশে দুষ্ট হয়ে মদ পান করেন, জুয়া খেলেন, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। মা-বাবার টাকা নষ্ট অবাধ্য ছেলে-মেয়ের কারণে মা-বাবার টাকা পয়সা নষ্ট হয় তাই অবাধ্য সন্তান-সন্ততিকে পঞ্চম বৈরী বা শত্র“ বলা হয়।
--------------------------------------------------------------------------------

অষ্ট অক্ষন বা আট প্রকার দোষযুক্ত কাল

প্রথম অক্ষন প্রেতলোক: প্রেতলোকে উৎপন্ন হলে অনন্ত দুঃখ ভোগ করতে হয়। কোন সুখ নেই। ধর্মচর্চা করার পরিবেশ নেই বিধায় ধর্মচর্চা করা যায় না। তাই প্রেতলোকে উৎপন্ন হওয়াটা অশুভকাল বা অক্ষন বলা হয়।
দ্বিতীয় অক্ষন-তীর্যকলোক: তীর্যকলোক বলা হয় পশু-পাখী কুলকে। এই লোকেও কোন সুখ নেই। সব সময় ভয়-ভীতির মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। এজন্য এটি একটি অষ্ট অক্ষনের অন্যতম।
তৃতীয় অক্ষন-নরকলোক: নরকলোকে শুধু জ্বালা-পোড়া, যন্ত্রণা, দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নাই। এই লোকে কোন ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। ইহা অষ্ট অক্ষনের তৃতীয় অক্ষন।
চতুর্থ অক্ষন-অরূপ ব্রহ্মলোক: আমরা সকলে জানি ব্রহ্মলোক অত্যন্ত উচ্চ। তবু এই অরূপ ব্রহ্মলোক এখানে যে উৎপন্ন হবে। তার কোন ইন্দ্রিয় থাকে না যেহেতু রূপহীন ব্রহ্মলোক। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা সাধনাহীন ক্ষেত্র, তাই এই লোকে জন্ম নেয়াটা অশুভ। তাই এটিও অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
পঞ্চম অক্ষন প্রত্যন্ত অঞ্চল: প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন ভিক্ষু শ্রামণের দর্শন পাওয়া যায় না। ত্রিরতœ বন্দনা একবার শুনার সুযোগ হয় না। কোটি টাকার অধিকারী হলেও সেখানে পুণ্য সঞ্চয়ের কোন সুযোগ হয় না তাই এই লোকও অষ্ট অক্ষনের এক অক্ষন।
ষষ্ঠ অক্ষন বিকল ইন্দ্রিয়: চোখ, কান, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করলে, সেই অবস্থায়ও ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। নির্বাণ মার্গের সাধনার ঠিক প্রতিকূল অবস্থায় জন্ম নেওয়া। এটি একটি অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
সপ্তম অক্ষন মিথ্যা দৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করা: যদি বৌদ্ধ মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম না নিয়ে মিথ্যদৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম নেয়, তাহলে তাহার জন্ম নিরর্থক। কারণ নির্বাণগামী ধর্ম, চতুরার্য সত্য ধর্ম শ্রবণ অথবা চর্চা করার সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হবে। তাই এটি একটি অন্যতম অক্ষন।
অষ্টম অক্ষন ‘‘বুদ্ধশূণ্য কল্প”: যে সময়ে বুদ্ধগণের শাসন থাকবে না, সেই সময় বা কালকে বুদ্ধশূণ্য কাল বলে। তখন পৃথিবীতে এ ভদ্র কল্পের চতুর্থ বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধের শাসনামল। এই বুদ্ধের শাসন পাঁচ হাজার বৎসর চলে গেলে তখন শুরু হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। আবার এক অন্তকল্প পরে যখন আর্যমিত্র বুদ্ধ আবির্ভূত হয়ে তাঁর ধর্ম প্রচার করবেন, তখন আরো কিছুকাল বৌদ্ধ ধর্ম এই পৃথিবীতে, লোকভূমিতে এবং অনন্ত চক্রবালে প্রচারিত হবে। তারপর আর্যমিত্র বুদ্ধের শাসনামল শেষ হয়ে যাবে, পৃথিবীতে তখন বুদ্ধ শাসন থাকবে না। দুই দুইশত একান্নটি অন্তর্কল্প হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। নির্বাণ মার্গ সাধনার প্রতিকুল কাল বা ক্ষেত্র বা ক্ষণ।

এই আটটি অক্ষন অথবা অষ্ট দোষযুক্ত স্থানগুলোকে আমরা চাই না, নির্বাণ সাধনার প্রতিকুল হবে।


Learn more »

কোশল রাজের ষোল মহাস্বপ্ন

কোশল রাজের ষোল মহাস্বপ্ন



একদিন কোশলরাজ প্রসেনজিত রাত্রে পর পর ষোলটি ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হন। সকালে পুরোহিত ব্রাহ্মণ এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে বললেন- স্বপ্নসমূহ বড়ই অকুশলজনক। এতে রাজ্য অন্তরায়, জীবন অন্তরায় কিংবা ভোগ-অন্তরায় এ তিনটির যে কোন একটি ঘটতে পারে। এর প্রতিকারের ক্ষমতা আমাদের আছে। আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই মহারাজ। কি প্রতিকার রাজা জিজ্ঞেস করলে ব্রাহ্মণ বললেন মহারাজ শান্তি স্বস্ত্যয়নের জন্যে সর্বচতুষ্ক যজ্ঞ করতে হবে। ভীত ত্রাসিত রাজা যজ্ঞের যাবতীয় দায়িত্ব পুরোহিত ব্রাহ্মণদের হাতে অপর্ণ করে নিশ্চিন্ত হলেন। বিস্তর খাদ্য ভোজ্য ও ধন সম্পত্তি লাভের আশায় ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞানুষ্ঠানের কাজে লেগে যান। যজ্ঞ স্থান নির্বাচন, বলির জন্যে সবলকায় পশুপক্ষী সংগ্রহ, যজ্ঞের বিবিধ উপকরনাদি সংগ্রহের জন্যে চারদিকে লোকজন প্রেরণ করা হল। রাজ কর্মচারীদের মধ্যে হাঁকডাক বেড়ে গেল। এদিকে কোশল রাজের প্রধানা মহিষী মল্লিকা দেবী সব জ্ঞাত হয়ে রাজাকে জেতবনে ভগবান বুদ্ধের নিকট গিয়ে স্বপ্ন বিবরণ জানাতে অনুরোধ করলেন। রাজা জেতবন বিহারে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে বন্দনা করে স্বপ্ন বৃত্তান্ত একের পর এক শুনাতে আরম্ভ করেন এবং ব্রাহ্মণদের সিদ্ধান্তের কথাও জানালেন।
প্রথম স্বপ্ন : কৃষ্ণ বর্ণের চারটি বৃষ চারদিক থেকে এসে রাজ ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। বৃষ যুদ্ধ দেখার জন্যে বন্থলোক সমাগত। কিন্তু বিনাযুদ্ধে তারা ক্ষান্ত হয়ে গেল। এর কারণ কি?
প্রথম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ এ স্বপ্ন ফল আপনার আমার জীবিতকালে ঘটবে না, ভবিষ্যতে ঘটবে। এতে আপনার কোন অন্তরায়ও হবে না। ব্রাহ্মণগণ কেবল নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে বলেছে। ভবিষ্যতে রাজা প্রজারা হবে কৃপণ ও অধার্মিক তাদের কুশল ধর্মহীন প্রায়  হবে, অকুশল বেড়ে যাবে। নিয়মিত বারিবর্ষণ হবে না অনিয়মিত বৃষ্টিতে শস্য নষ্ট হবে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। চারদিকে মেঘ উঠবে, মেঘ গর্জনে বিদ্যুৎ চমকাবে, কিন্তু বৃষ্টি হবে না বিনাযুদ্ধে বৃষদের প্রস্থানের ন্যায় মেঘসমূহ চলে যাবে।
দ্বিতীয় স্বপ্ন : ছোট ছোট গাছগুলো এক বিঘত কিংবা দেড় বিঘত বৃদ্ধি পেতে না পেতে ফুল ও ফল প্রসব করল, এ কারণ কি?
দ্বিতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : মহারাজ! ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থায় মানুষ হবে অল্পায়ু, হবে তীব্র রাগ পরায়ন, অল্প বয়সে মেয়েরা হবে ঋতুমতী ও ফলের ন্যায় পুত্রকন্যা প্রসব আবার তাদের থেকে অল্পবয়ষ্ক ও রোগাক্রান্ত পুত্রকন্যা জন্ম নেবে। এতে আপনার কোন অনিষ্ট ঘটবে না।
তৃতীয় স্বপ্ন : গাভীরা সদ্য প্রসূত বাছুরের দুধপান করছে এর কারণ কি?
তৃতীয় স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে যখন বায়োজোষ্ঠদের সম্মান নষ্ট হবে। তখন এসব ঘটবে। পুত্র-কন্যা কিংবা পুত্র বধূরা মাতা-পিতার প্রতি ও শুশুর-শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধাহীন হবে। নির্লজ্জ্বভাবে স্বয়ং সংসারের ভার গ্রহণ করবে। ইচ্ছা হলে গুরুজনদেরকে খাদ্য বস্ত্র দেবে, ইচ্ছা না হলে দেবে না। কাজেই বৃদ্ধরা নিরুপায় হয়ে বাচ্চার দুগ্ধপায়ী গাভীর ন্যায় সন্তানগণের কৃপাধীন হয়ে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই।
চতুর্থ স্বপ্ন : বলবান দৃঢ়কার গরু থাকা সত্ত্বেও অল্পবয়ষ্ক গরু গাড়ী টানতে সংযোজন করল, তারা শকট টানতে অক্ষম বিধায় অগ্রসর হতে পারলনা এর অর্থ কি?
চতুর্থ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে রাজারা যখন অধার্মিক হবে তখন এ অবস্থা ঘটবে। রাজকার্যে পন্ডিত কুশলী ও কর্মঠ ব্যক্তির পরিবর্তে মুর্খ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবে। তারা যথাযথভাবে রাজকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আত্মসম্মান হানির ভয়ে এসব কাজে অগ্রসর হবে না, এভাবে রাজকার্যের পরিহানি হতে থাকবে এবং রাজ্য শ্রী নষ্ট হতে থাকবে। শকট বহনে অসমর্থ তরুণ গরুর ন্যায় হল নব্যলোকেরা আর বলবান গরুর ন্যায় হবে বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
পঞ্চম স্বপ্ন : একটি অশ্বের দুটো মুখ দু’মুখেই ঘাস খাচ্ছে এর অর্থ কি?
পঞ্চম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ ঘটনাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক মুর্খ রাজাগণ অধার্মিক লোভী ব্যক্তিকে বিচারপতি নিযুক্ত করবেন। তারা বিচারাসনে বসে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করবে। স্বপ্নের অশ্বের ন্যায় দুমুখোই খাবে, এতে আপনার অমঙ্গল হবে না।
ষষ্ঠ স্বপ্ন : বহু মূল্যবান সুবর্ণ পাত্রে একটি জড় শৃগাল প্রস্রাব করল এর অর্থ কি?
ষষ্ঠ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এর ফলও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক রাজাগণ প্রাচীন সম্মানিত বংশের লোকদেরকে নানা কারণে সম্মান প্রদর্শন করবে না। অকুলীনেরই সংখ্যায় বাড়বে কুলীনগণ দিন দিন গরীব হবে অকুলীন ও নিু শ্রেণীর লোকেরা সম্পদশালী হবে। কুলীন লোকেরা জীবন ধারণের স্বার্থে নীচ লোকদের শরণাপন্ন হবে এবং তাদের সাথে নিজ নিজ কন্যার বিবাহ দেবে। নীচ সহবাসে কুলীন কন্যাগণ মর্যাদা হারাবে, যেমন বহু মূল্যবান পাত্রে জড় শৃগালের প্রস্রাব সৃদশ্য। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।নীচে অবস্থানরত একটি শৃগালী লোকটার অজ্ঞাতসারে ওটা খেয়ে ফেলছে। এর অর্থ কি?
সপ্তম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে নারীগণ পুরুষের সঙ্গ অভিলাষ করবে তারা হবে সুরাপায়ী, অলংকারী লোভী, বিলাসী ও আমিষাশী। সেই দুঃশীল দুরাচারী স্ত্রী স্বামীর সঞ্চিত সম্পদ অকাতরে নষ্ট করবে এবং গোপণে উপপতির সাথে মিলিত হবে। যেমন স্বামীর অজ্ঞাতসারে শৃগালীর রজ্জু ভক্ষণ সদৃশ। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না।
অষ্টম স্বপ্ন : রাজদ্বারে একটি বৃহৎ পূর্ণ কলসী এর চারপাশে বহু শূন্য কলসী রয়েছে। লোকেরা ভারে ভারে জল এনে পূর্ণ কলসীতে ঢালছে। কলসীর জল চারদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও শূন্য কলসীতে কেহ জল ঢালছে না-এর কারণ কি?
অষ্টম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : ভবিষ্যতে দেশের বড় দুরবস্থা হবে, দেশ বলশূন্য ও ধনশূন্য হবে। রাজাগণ অর্থলোভী হবে। বিভিন্ন ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে রাজভাণ্ডার পূর্ণ করবে, কিন্তু গরীবের শূন্য ভাণ্ডারের প্রতি তাকাতেও অবসর মিলবে না, যেমনি শূন্য কলসী শূন্যই থাকবে। এতে আপনার কোন অমঙ্গল হবে না।
নবম স্বপ্ন : পঞ্চবর্ণ পদ্ম প্রস্ফুটিত ও চতুর্দিকে ঘাটযুক্ত এক জলাশয়। এর মাঝখানের জল ঘোলা ও পঙ্কিল কিন্তু তৎপার্শ্বের যে জল দ্বিপদ ও চতুষ্পদেরা পান করছে তা পরিষ্কার এর কারণ কি?
নবম স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এসবও ভবিষ্যতের লক্ষণ। যখন রাজাগণ অধার্মিক স্বেচ্ছাচারী ও অবিচারী হয়ে রাজত্ব করবে, ধর্মমতে বিচারাদি করবে না ঘুষখোর হবে ধনলোভী হয়ে প্রজাদের প্রতি মৈত্রীহীন ও দরাহীন হবে। তখন প্রজারা তাদের অত্যাচারে ও উৎপীড়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চরে গিয়ে বাসস্থান নির্মাণ করবে। মধ্যাঞ্চল জনশূন্য হতে থাকবে। যেমন পুষ্করিনীর মধ্যস্থিত জল ঘোলা, কিন্তু এই পার্শ্বের জল নির্মল ইত্যাদি। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
দশম স্বপ্ন : একটি পাত্রে ভাত রান্না হচ্ছে। এর কোন পাশে পেচাল, কোন পাশে চাউল আর কোন পাশে সুপক্ক। এর কারণ কি?
দশম স্বপ্নের উত্তর ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। যখন রাজাগণ অধার্মিক হবে। তাদের কারণে অন্যান্যরাও অধার্মিক হবে। তখন তাদের রক্ষক দেবতা ভূমিস্থিত কিংবা আকাশস্থিত হোক অধার্মিক হবে। সেই অধার্মিক রাজারা রাজ্য নানাবিধ বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে যেমন ঝড়-তুফান, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আত্মকোন্দল বা গৃহযুদ্ধ, বহিঃরাষ্ট্রের আক্রমণ ইত্যাদি। এরূপে একদিকে ভয়ানক বৃষ্টি যার ফলে শস্য নষ্ট, অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে চাষহীন অবস্থা আবার কোনদিকে একাদশ স্বপ্ন : লক্ষ টাকা মূল্যের চন্দন সার অম্লময় দধির বিনিময়ে বিক্রী হচ্ছে এর কারণ কি?
একাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটা ভবিষ্যতে আমার শাসন ধর্মের পরিহানির সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে অধিকাংশ ভিক্ষু স্বার্থপরায়ণ ও লজ্জাহীন হবে। লোভের বিরুদ্ধে আমি যা উপদেশ দিয়েছি, ভবিষ্যতে তারা লোভপরবশ হয়ে অর্থের আশায় এ ধর্মোপদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে। দ্রব্য লোলুপ ভিক্ষুরা নৈর্বাণিক ধর্ম প্রকাশ করতে সক্ষম হবে না। চীবরাদি টাকা পয়সার বিনিময়ে মহামূল্য নৈর্বাণিক ধর্ম তারা সুস্বরে বা মধুর শব্দে প্রচার করবে। যেমন বহু মূল্য চন্দন খারাপ দধির দ্বারা বিক্রিত হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
দ্বাদশ স্বপ্ন : তুচ্ছ লাউ সকল জলে ভাসছে এর কারণ কি?
দ্বাদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে লোকের চরিত্র বিকৃত হলে ঘটবে। সে সময় রাজাগণ সম্ভ্রান্ত কুলপুত্রগণকে যশ বা খ্যাতি প্রদান করবে না। অকুলীনদেরকেই প্রদান করবে। অকুলীনেরা সম্পদশালী হয়ে কুলীনেরা দরিদ্র হবে এবং রাজার সম্মুখে, রাজদ্বারে ও বিচার স্থানে অকুলীনদের কথা তুচ্ছ লাউ সৃদশ্য ভেসে থাকবে অর্থাৎ তাদের কথাই গ্রাহ্য হবে। সেরূপ সংঘ মধ্যেও দুশ্চরিত্র, অশিক্ষিত ভিক্ষুরা সাধক ও বিজ্ঞ স্থবিরদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে অর্থৎ সংঘকর্ম ও বিচার স্থানে দুঃশীল ভিক্ষুর কথা অগ্রাধিকার পাবে, সুশীল ভিক্ষুর কথা গ্রাহ্য হবে না। এভাবে সকল স্থানে তুচ্ছ লাউয়ের ভাসায় ন্যায় অধার্মিকদের কথা বলবৎ হবে। এতে আপনার কোন অন্যায় হবে না।
ত্রয়োদেশ স্বপ্ন : বৃহৎ কুটাগার সদৃশ্য পর্বত নৌকার ন্যায় ভাসমান দেখলাম এর কারণ কি?
ত্রয়োদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে সে সময় অধার্মিক রাজাগণ অকুলীনদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবে, তারাই ধনশালী হবে। কুলীনেরা দরিদ্র হেতু অকুলীনদের সম্মান করবে। রাজার সম্মুখে অমাত্য সম্মুখে ও বিচার স্থানে তারা ঘনশিলা সৃদশ্য গ্রহণীয় বা যোগ্য হবে। কুলীনেরা উপহাসের পাত্র হবে। ভিক্ষু সভায় শীলবান ভিক্ষুরা তদ্রুপ হবে। ঠিক যেমন ভাসমান শিলা সদৃশ হবে। এতে আপনার কোন ভয় নেই।
চতুর্দশ স্বপ্ন : ক্ষুদ্র মধুক পুষ্পপ্রমাণ ভেক সমূহ ভীষণ কৃষ্ণ সর্পকে দৌড়ায়ে পদ্ম মৃণালের ন্যায় ছিড়ে ছিড়ে মাংস খেতে ও গিলতে দেখলাম এর কারণ কি?
চতুর্দশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এ স্বপ্নফলও ভবিষ্যতে সমাজের দুরবস্থা হলে ঘটবে। সে সময় মানুষেরা হবে তীব্র রাগ পরায়ণ বা কামাতুর, কাজেই অর্থাৎ ভার্যার উপর আপনার মুখ স্বাধীনতা বলিদান করবে। কোনদিন গৃহস্বামী কোন জিনিসের তত্ত্ব তালাস করলে স্ত্রী নানাবিধ কটুক্তি করবে এবং যে কোন কার্যে কথা বলতে দেবে না যেমন দাস দাসীর প্রতি লোকে ব্যবহার করে তদ্রুপ নব বধূয়া স্বামী বা গুরুজনের প্রতি সেরূপ ব্যবহার করবে, অর্থাৎ তারাই ঘরের সর্বসর্বা হবে। ঠিক ভেক যেমন সর্প গিলছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
পঞ্চদশ স্বপ্ন : সুবর্ণ রাজহংসগণ নানা দোষ সমন্বিত বা কলুষিত কাকের অনুবর্তী হচ্ছে এর কারণ কি?
পঞ্চদশ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে দুর্বল রাজার সময়ে ঘটবে। ভবিষ্যতে রাজাগণ রাজ্য শাসন কিংবা যুদ্ধে বিদ্যায় সুনিপণ হবে না। তাহারা পদচ্যুত হবার ভয়ে সম্ভ্রান্তগণকে কার্যভার না দিয়ে স্বীয় পদসেবাকারী ক্রীতদাস বা নীচ বংশীয় দাসগণকে প্রধান্য অর্পণ করবে। জাতি গোত্র সম্পন্ন কুলপুত্রেরা রাজকূলে প্রতিষ্ঠা লাভ না করে এবং জীবন যাপন করতে অসমর্থ হয়ে এসব ক্রীতদাস বা জাতি গোত্রহীন অকুলীনের সেবা শুশ্রƒষা করে বিচরণ করবে। ঠিক যেমন সুবর্ণ রাজহংস কাকের অনুবর্তী হচ্ছে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
ষোড়শ দশ স্বপ্ন : নেকড়ে বাঘ মেষ খায়, তা জানি। কিন্তু মেষ সমূহ হিংস্র বাঘকে দৌড়ায়ে খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য প্রাণীরা ভয়ে ঝোপ ঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে এর কারণ কি?
ষোড়শ স্বপ্নের উত্তরে ভগবান : এটাও ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে ঘটবে। যে সময়ে নীচ বংশীয়রা রাজ প্রাসাদে প্রাধান্য লাভ করবে। কুলীনগণ অপমানিত ও নিরন্ন হবে। যেমন সম্ভ্রান্তেরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে লাঞ্চিত ও অপমানিত হওয়ার ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে থাকে। তদ্রুপ অদূর ভবিষ্যতে শীলবান ভিক্ষুরা পাপী ভিক্ষুব উৎপীড়নে নিরাশ্রয় হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় করবে বা পালিয়ে থাকবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই মহারাজ।
ষোল প্রকার মহাস্বপ্নের ব্যাখ্যায় রাজা প্রসেনজিৎ ভয়হীন ও আনন্দিত হয়ে যজ্ঞ ত্যাগ করলেন এবং প্রাণী সমূহের বন্ধন মোচন করে দিলেন।

Learn more »

বুদ্ধের নিকট শুভ মানবের চতুদর্শ প্রশ্ন

বুদ্ধের নিকট শুভ মানবের চতুদর্শ প্রশ্ন

১। মানুষের অল্পায়ু হয় কেন?
২। মানুষের দীর্ঘায়ু হয় কেন?
৩। মানুষ ব্যাধিগ্রস্ত হয় কেন?
৪। মানুষ নিরোগী হয় কেন?
৯। মানুষ অল্প ভোগ সম্পদশালী হয় কেন?
১০। মানুষ হীন বংশজাত হয় কেন?
১১। মানুষ মহা ভোগশালী হয় কেন?
১২। মানুষের মধ্যে কেহ উচ্চ বংশীয় হয় কেন?
১৩। মানুষের মধ্যে দু®প্রাজ্ঞ হয় কেন?
১৪। মানুষের মধ্যে প্রজ্ঞাবান দেখা যায় কেন?
* মানবগণের মধ্যে এরূপ হীন শ্রেষ্ঠ তারতম্য দেখা যায় কেন?
বুদ্ধের উত্তর : হে শুভ জীবগণ স্বকৃর্ত কর্মই ভোগ করে। স্বীয় স্বীয় কর্মেরই উত্তরাধিকারী হয় কর্মানুযায়ীই জন্ম গ্রহণ করে, কর্মই নিজের বন্ধু স্বরূপ এবং কর্মই নিজের আশ্রয় স্বরূপ। কর্মই সত্তদিগকে হীন শ্রেষ্ঠে বিভাগ করে পন্ডিতাভিমানী শুভ ভগবানের এ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বুঝতে না পেরে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার জন্য পুনঃ ভগবানকে প্রার্থনা করলেন। ভগবান পুনঃ তা বিস্তৃতভাবে বলতে আরম্ভ করলেন।

শুভমানবের প্রশ্নের বিস্তৃত উত্তর
১। প্রাণী হত্যাকারী নর-নারীগণ মৃত্যুর পর তির্যক, প্রেত, অসুর ও নিরয়াদিতে উৎপন্ন হয়। তারা মনুষ্য জীবন লাভ করলেও অল্পায়ু সম্পন্ন হয়। 
২। প্রাণীদের প্রতি মৈত্রী পরায়ন ব্যক্তিগণ মৃত্যুর পর স্বর্গ কিংবা মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হয়ে দীর্ঘায়ু সম্পন্ন হয়। 
৩। হস্ত, দন্ত, ঢিল ও অস্ত্রের দ্বারা প্রাণীকে নিপীড়নকারী ব্যক্তিগণ চারি অপায়ে উৎপন্ন হয়। তারা মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হলেও দুরারোগ্য পীড়াগ্রস্ত হয়। 
৪। প্রাণীদের প্রতি মৈত্রী পরায়ন ব্যক্তিগণ নিরোগী হন।
৫। ক্রোধান্ধ নর-নারীগণ জন্মে জন্মে বিশ্রী ও কদাকার হয়।
৬। দয়ালু নর-নারীগণ জন্মে জন্মে সুশ্রী ও লাবণ্যময় হয়।
৭। অপরের লাভ সৎকার সম্মান বন্দনা ও পূজা দর্শনে ঈর্ষাপরায়ন ব্যক্তিগণ জন্মে জন্মে পরাক্রমহীন অবহেলার পাত্র হয়।
৮। পরের লাভ সৎকার দর্শনে আনন্দলাভী ঈর্ষাহীন ব্যক্তিগণ জন্মে জন্মে মহাপরাক্রমশালী গৌরবের পাত্র হয়।
৯। কৃপনগণ জন্মে জন্মে ভোগ সম্পত্তি লাভে বঞ্চিত হয়।
১০। দাতাগণ জন্মে জন্মে মহাধনবান হয়। 
১১। অহংকারী ব্যক্তি হীন কুলে জন্মগ্রহণ করে। 
১২। নিরহংকারী নর-নারীগণ জন্মে জন্মে উচ্চ কুলে জন্মগ্রহণ করে।

১৩। যারা কুশলাকুশল সম্বন্ধে জানবার জন্য জিজ্ঞাসা করে না, করতেও চায় না তারা জন্মে জন্মে নির্বোধ হয়।



Learn more »

ভগবান বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের ছয়জন ধর্ম গুরু বা তীর্থিক আর্চাযের মতবাদ

ভগবান বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের ছয়জন ধর্ম গুরু বা তীর্থিক আর্চাযের মতবাদ


১) পূরণ কাশ্যপ : কোন এক ভ্রদলোকের ঔরসে এক বিজাতিয়া স্ত্রীর গর্ভে তার জন্ম হয়। পূর্বে সে বংশে ৯৯ জন জন্মেছিল তার জন্মে একশত জন পূর্ণ হওয়ার সে পূরণ আখ্যা লাভ করে। তার ব্যক্তিগত নাম কাশ্যপ। যৌবনে সে এ দ্বারবানের কাজে নিযুক্ত হয়। এই কাজে সে বিরক্ত হয়ে বনে পলায়ণ করে। তথায় দুস্যুরা তার বস্ত্র কেড়ে নেয়। বিবস্ত্র হয়ে সে নিকটবর্তী গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীদেরকে সে বলল আমি সমস্ত বিদ্যায় পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছি বলে লোকে আমাকে পূরণ বলে এবং ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছি বলে লোকে আমাকে কাশ্যপ বলে। তখন গ্রামবাসীরা তাকে বস্ত্রদান করলে সে বলল “লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র ব্যবহৃত হয় পাপ হতেই লজ্জার উৎপত্তি আমি সমস্ত পাপ-প্রবৃত্তি নির্মূল করেছি। অতএব আমার বস্ত্রের প্রয়োজন নেই। একথা শুনে লোকে তাকে পূজা করতে লাগল। পরে তাঁর পাঁচশত  শিষ্য হয়। আশি হাজার লোক তার মত অনুর্বতন করে।
মতবাদ : তাঁর মতে আত্মা অক্রিয়াশীল। দেহের প্রভাবে কর্ম করা হয় বলে আত্মা দেহের ভাল-মন্দ কর্মের ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাই স্বহস্তে করলে বা আদেশ দিয়ে করালে ছেদন করলে বা করালে দণ্ড দ্বারা পীড়ন করলে বা করালে, সিঁদ কাটলে বা কাটালে, চুরি, প্রাণী হত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যা ইত্যাদি সর্ববিধ পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে অথবা কারও দ্বারা সম্পাদন করালে কোন পাপ নেই। পাপ করছি জেনে পাপ করলেও পাপ হয় না। দান, ইন্দ্রিয় দমন, শীল, সংযম এবং সত্যবাক্য বলার দ্বারাও কোন পুণ্য হতে পারে না। মোট কথা তার মতে পাপ-পুণ্য কিছুই নেই। অকুশল করলেও পাপ হয় না।
২) মক্খলি গোসাল : এর প্রকৃত নাম মস্করি। গোশালায় এক দাসীর গর্ভে জন্ম হওয়ায় তার নাম মস্করী গোশাল হয়। একদিন সে তার প্রভুর আদেশ মত একটি ঘৃত-কুম্ভ মস্তকে করে যেতে হঠাৎ পদস্থলন হয়ে সমস্ত ঘৃত মাটিতে পড়ে যায়। ভয়ে পলায়ণ করতে প্রভু তার বস্ত্র ধরে ফেলেন। সে বিবস্ত্র হয়ে বনে প্রবেশ করে। এরপর নিকটস্থ গ্রামে গিয়ে লোকজনকে প্রতারিত করে। কালে তারও পাঁচশত শিষ্য হয়। অশীতি সহস্র লোক তার মতের অনুসরণ করে। জৈন ধর্মের ঐতিহ্যগত প্রবর্তক পার্শ্বনাথের প্রথম অনুসারী হিসেবে সে আজীবন ধর্ম প্রচার করলেও কোন ফল নেই। পরের উপদেশ পালনেও কোন লাভ নেই। বল বীর্ষ-পুরুষ-শক্তি, পুরুষ-পরাক্রম বা পুরুষকার বলতে কিছু নেই। সর্বসত্ত্ব, সর্বপ্রাণী, সর্বজীব, অধীন, অবল, অবীর্য, নিয়তি, সঙ্গতি ও স্বভাবে তারা নানা প্রকার গতিপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ যা হবার তা হয় না। যা না হবার তা হয় না। চুরাশী মহাকল্পকাল ক্ষেপনান্তে জ্ঞানী ও অজ্ঞানী সকলের দুঃখের অন্তসাধন করবে। এতে অন্যের সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই।
৩) অজিত কেশকম্বলী : প্রভুর ভৎর্সনা সহ্য করতে না পেরে সে সন্ন্যাস অবলম্বন করে। সে কেশ নির্মিত বস্ত্র দ্বারা গাত্র আচ্ছাদিত করত এবং সর্বদা মস্তক মুন্ডল করত। তাই তার প্রকৃত নাম অজিত এর সাথে কেশকম্বল যোগ করে অজিত কেশকম্বলী বলা হয়।
মতবাদ : তার মত দানের যজ্ঞের, অতিথি সৎকারের, সুকৃত-দুস্কৃত কর্মের কোন ফল বা বিপাক নেই। ইহলোক- পরলোক, মাতা-পিতা ও ঔপপাতিক সত্ত্ব নেই। পৃথিবীতে সম্যক প্রতিপন্ন বা সম্যক মার্গলাভী এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণ নেই, যাঁরা স্বয়ং অভিজ্ঞা বলেই লোক ও পরলোক প্রত্যক্ষ করে বলতে পারেন। পুরুষ চার মহাভূত হতে উৎপন্ন। মরে গেলে মাটির অংশ মাটির সাথে, জল জলের সাথে, তেজ তেজের সাথে এবং বায়ু বায়ুর সাথে মিশে যায়। ইন্দ্রিয় সমূহ আকাশে গমন করে। মৃত পুরুষকে চার পায়ার খাঁটিয়া করে শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে লোক তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করে। অজ্ঞানী ও জ্ঞানী উভয়ে মৃত্যুর পর উচ্ছিন্ন হয়, বিনাশ প্রাপ্ত হয়, মৃত্যুর পর আর জন্মে না। অজিত কেশকম্বলী এরূপ নাস্তিকবাদী ছিল। তার অনেক শিষ্য প্রশিষ্য ছিল।
৪) পকুধ কচ্চায়ন : এ ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বংশে এক বিধবার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। পকুধ বৃক্ষমূলে তার জন্ম হওয়ায় পকুধ কচ্চায়ন নায়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। জনৈক ব্রাহ্মণ তাকে প্রতিপালন করেন। ব্রাহ্মণের মৃত্যু হলে জীবিকা নির্বাহের উপায় না দেখে সন্ন্যাস অবলম্বন করে।
মতবাদ : তার মতে পৃথিবীকায়, আপকায়, তেজকায়, বায়ুকায়, সুখ-দুঃখ ও জীব এই সাতটি কাঁয় অকৃত, অকারিত, অর্নিমিত, বন্ধ্য, কটুস্থ, ইন্দ্রখিল সদৃশ স্থিত। তারা কম্পিত হয় না, বিপরিণাম প্রাপ্ত হয় না, পরস্পরের বাধা জন্মায় না, পরস্পরের সুখ-দুঃখের হেতুও নহে। কোন হন্তা নেই। হনন করবারও কেহ নেই। শ্রোতা, বক্তা, বিজ্ঞতা কেহ নেই, বিজ্ঞাপন কর্তাও নেই। তীক্ষ্ম অসিদ্বারা শিরচ্ছেদ করলেও কেহ কারও জীবন হত্যা করতে পারে না অপিচ এ সাত কায়ের অন্তরে বিবয়ে শস্তু প্রবেশ করে মাত্র।
৫) নিগন্ঠ নাতপুত্র : নাত নামক কৃষকের পুত্র। নিগন্ঠ বা নির্গ্রন্থ বলা হয় এ যে তিনি বলতেন এমন কোন গ্রন্থ নেই আমি পাঠ করিনি। এ কারণে তিনি নির্গ্রন্থ নাত পুত্র নামে পরিচিত। তিনি পার্শ্বনাথের জৈন ধর্মের প্রবক্তা।
মতবাদ : তাঁর মতে শীতল জল ও প্রাণী বিশেষ। এ হেতু শীতল জলও ব্যবহার করতে নেই তিনি সর্ব পাপ হতে বিরত সমস্ত পাপ বিধৌত ও সর্ব পাপ দূরীকরণে লগ্ন চিত্ত। এহেতু তিনি অন্ত প্রাপ্ত চিত্ত, সংযম ও সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর পঞ্চশত শিষ্য ছিল।
৬) সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্র : বেলাস্থি নাুী দাসীর গর্ভে তার জন্ম হয় বলে বেলট্ঠি পুত্র। তার মস্তকে সঞ্জয় ফলের ন্যায় মাংসপিন্ড বিদ্যামান থাকায় সে সঞ্জয় বেলাস্থি পুত্র নামে প্রসিদ্ধ হয়। তার অনেক শিষ্য ছিল।
মতবাদ : তার মতবাদ হল আমরা বিক্ষেপবাদ। সে কিছুতেই ধরা দিত না। প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হলে বলতো, ‘এরূপও আমি বলিনা, সেরূপও আমি বলি না, অন্যথায় আমি বলি না , না বলেও আমি বলি না।” এরূপ উত্তর দিয়ে সে বাক্য বিক্ষেপ করতো। এরূপ করার কারণ হল যে মিথ্যা ধরাপড়ার ভয়, সেহেতু সে কিছুই সঠিক জানতো না। এভাবেই সে তার মতবাদকে বাঁচিয়ে রাখতো। তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল বিধায় কর্মের ফলাফলকে সে প্রাধান্য দিত না। তার ধারণা যে, ইহ জন্মে যে যেভাবে আছে অর্থাৎ দ্বিপদ, চতুষ্পদ ইত্যাদি বন্থবিধ প্রাণী, তারা পর জন্মেও ঠিক সেই অবয়ব প্রাপ্ত হবে। এক সময়ে মগধরাজ অজাতশত্র“ তাঁর পরম গুরু দেবদত্তের মৃত্যুর পর মানসিক শান্তি আনয়নের উদ্দেশ্যে এই ছয়জন তীর্থঙ্করের নিকট একের পর এক গমন করেন। কারো মতবাদে তিনি মানসিক শান্তি লাভ করতে পারেন নি। বরং তিনি ছয় শাস্তার মধ্যে সঞ্জয়কে সর্বাপেক্ষা অজ্ঞানী বলেছেন। পরিশেষে তিনি রাজ বৈদ্য জীবকের পরামর্শে তথাগত বুদ্ধের নিকট যান এবং বুদ্ধের “শ্রামণ্য ফল সূত্র” দেশনায় অতীব প্রীত হয়ে ভগবানের শরণাগত উপাসক হন। পরিব্রাজক সুভদ্র ও এই ছয় জনের মতবাদে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভগবানের অন্তিম সময়ে তাঁরই সত্য ধর্ম দেশনা শুনে পরম শান্তি নির্বাণ সাক্ষাৎ করেন।

Learn more »