ভগবান বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের ছয়জন ধর্ম গুরু বা তীর্থিক আর্চাযের মতবাদ
ভগবান বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের ছয়জন ধর্ম গুরু বা তীর্থিক আর্চাযের মতবাদ
১) পূরণ কাশ্যপ : কোন এক ভ্রদলোকের ঔরসে এক বিজাতিয়া স্ত্রীর গর্ভে তার জন্ম হয়। পূর্বে সে বংশে ৯৯ জন জন্মেছিল তার জন্মে একশত জন পূর্ণ হওয়ার সে পূরণ আখ্যা লাভ করে। তার ব্যক্তিগত নাম কাশ্যপ। যৌবনে সে এ দ্বারবানের কাজে নিযুক্ত হয়। এই কাজে সে বিরক্ত হয়ে বনে পলায়ণ করে। তথায় দুস্যুরা তার বস্ত্র কেড়ে নেয়। বিবস্ত্র হয়ে সে নিকটবর্তী গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীদেরকে সে বলল আমি সমস্ত বিদ্যায় পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছি বলে লোকে আমাকে পূরণ বলে এবং ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছি বলে লোকে আমাকে কাশ্যপ বলে। তখন গ্রামবাসীরা তাকে বস্ত্রদান করলে সে বলল “লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র ব্যবহৃত হয় পাপ হতেই লজ্জার উৎপত্তি আমি সমস্ত পাপ-প্রবৃত্তি নির্মূল করেছি। অতএব আমার বস্ত্রের প্রয়োজন নেই। একথা শুনে লোকে তাকে পূজা করতে লাগল। পরে তাঁর পাঁচশত শিষ্য হয়। আশি হাজার লোক তার মত অনুর্বতন করে।
মতবাদ : তাঁর মতে আত্মা অক্রিয়াশীল। দেহের প্রভাবে কর্ম করা হয় বলে আত্মা দেহের ভাল-মন্দ কর্মের ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাই স্বহস্তে করলে বা আদেশ দিয়ে করালে ছেদন করলে বা করালে দণ্ড দ্বারা পীড়ন করলে বা করালে, সিঁদ কাটলে বা কাটালে, চুরি, প্রাণী হত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যা ইত্যাদি সর্ববিধ পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে অথবা কারও দ্বারা সম্পাদন করালে কোন পাপ নেই। পাপ করছি জেনে পাপ করলেও পাপ হয় না। দান, ইন্দ্রিয় দমন, শীল, সংযম এবং সত্যবাক্য বলার দ্বারাও কোন পুণ্য হতে পারে না। মোট কথা তার মতে পাপ-পুণ্য কিছুই নেই। অকুশল করলেও পাপ হয় না।
২) মক্খলি গোসাল : এর প্রকৃত নাম মস্করি। গোশালায় এক দাসীর গর্ভে জন্ম হওয়ায় তার নাম মস্করী গোশাল হয়। একদিন সে তার প্রভুর আদেশ মত একটি ঘৃত-কুম্ভ মস্তকে করে যেতে হঠাৎ পদস্থলন হয়ে সমস্ত ঘৃত মাটিতে পড়ে যায়। ভয়ে পলায়ণ করতে প্রভু তার বস্ত্র ধরে ফেলেন। সে বিবস্ত্র হয়ে বনে প্রবেশ করে। এরপর নিকটস্থ গ্রামে গিয়ে লোকজনকে প্রতারিত করে। কালে তারও পাঁচশত শিষ্য হয়। অশীতি সহস্র লোক তার মতের অনুসরণ করে। জৈন ধর্মের ঐতিহ্যগত প্রবর্তক পার্শ্বনাথের প্রথম অনুসারী হিসেবে সে আজীবন ধর্ম প্রচার করলেও কোন ফল নেই। পরের উপদেশ পালনেও কোন লাভ নেই। বল বীর্ষ-পুরুষ-শক্তি, পুরুষ-পরাক্রম বা পুরুষকার বলতে কিছু নেই। সর্বসত্ত্ব, সর্বপ্রাণী, সর্বজীব, অধীন, অবল, অবীর্য, নিয়তি, সঙ্গতি ও স্বভাবে তারা নানা প্রকার গতিপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ যা হবার তা হয় না। যা না হবার তা হয় না। চুরাশী মহাকল্পকাল ক্ষেপনান্তে জ্ঞানী ও অজ্ঞানী সকলের দুঃখের অন্তসাধন করবে। এতে অন্যের সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই।
৩) অজিত কেশকম্বলী : প্রভুর ভৎর্সনা সহ্য করতে না পেরে সে সন্ন্যাস অবলম্বন করে। সে কেশ নির্মিত বস্ত্র দ্বারা গাত্র আচ্ছাদিত করত এবং সর্বদা মস্তক মুন্ডল করত। তাই তার প্রকৃত নাম অজিত এর সাথে কেশকম্বল যোগ করে অজিত কেশকম্বলী বলা হয়।
মতবাদ : তার মত দানের যজ্ঞের, অতিথি সৎকারের, সুকৃত-দুস্কৃত কর্মের কোন ফল বা বিপাক নেই। ইহলোক- পরলোক, মাতা-পিতা ও ঔপপাতিক সত্ত্ব নেই। পৃথিবীতে সম্যক প্রতিপন্ন বা সম্যক মার্গলাভী এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণ নেই, যাঁরা স্বয়ং অভিজ্ঞা বলেই লোক ও পরলোক প্রত্যক্ষ করে বলতে পারেন। পুরুষ চার মহাভূত হতে উৎপন্ন। মরে গেলে মাটির অংশ মাটির সাথে, জল জলের সাথে, তেজ তেজের সাথে এবং বায়ু বায়ুর সাথে মিশে যায়। ইন্দ্রিয় সমূহ আকাশে গমন করে। মৃত পুরুষকে চার পায়ার খাঁটিয়া করে শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে লোক তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করে। অজ্ঞানী ও জ্ঞানী উভয়ে মৃত্যুর পর উচ্ছিন্ন হয়, বিনাশ প্রাপ্ত হয়, মৃত্যুর পর আর জন্মে না। অজিত কেশকম্বলী এরূপ নাস্তিকবাদী ছিল। তার অনেক শিষ্য প্রশিষ্য ছিল।
৪) পকুধ কচ্চায়ন : এ ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বংশে এক বিধবার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। পকুধ বৃক্ষমূলে তার জন্ম হওয়ায় পকুধ কচ্চায়ন নায়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। জনৈক ব্রাহ্মণ তাকে প্রতিপালন করেন। ব্রাহ্মণের মৃত্যু হলে জীবিকা নির্বাহের উপায় না দেখে সন্ন্যাস অবলম্বন করে।
মতবাদ : তার মতে পৃথিবীকায়, আপকায়, তেজকায়, বায়ুকায়, সুখ-দুঃখ ও জীব এই সাতটি কাঁয় অকৃত, অকারিত, অর্নিমিত, বন্ধ্য, কটুস্থ, ইন্দ্রখিল সদৃশ স্থিত। তারা কম্পিত হয় না, বিপরিণাম প্রাপ্ত হয় না, পরস্পরের বাধা জন্মায় না, পরস্পরের সুখ-দুঃখের হেতুও নহে। কোন হন্তা নেই। হনন করবারও কেহ নেই। শ্রোতা, বক্তা, বিজ্ঞতা কেহ নেই, বিজ্ঞাপন কর্তাও নেই। তীক্ষ্ম অসিদ্বারা শিরচ্ছেদ করলেও কেহ কারও জীবন হত্যা করতে পারে না অপিচ এ সাত কায়ের অন্তরে বিবয়ে শস্তু প্রবেশ করে মাত্র।
৫) নিগন্ঠ নাতপুত্র : নাত নামক কৃষকের পুত্র। নিগন্ঠ বা নির্গ্রন্থ বলা হয় এ যে তিনি বলতেন এমন কোন গ্রন্থ নেই আমি পাঠ করিনি। এ কারণে তিনি নির্গ্রন্থ নাত পুত্র নামে পরিচিত। তিনি পার্শ্বনাথের জৈন ধর্মের প্রবক্তা।
মতবাদ : তাঁর মতে শীতল জল ও প্রাণী বিশেষ। এ হেতু শীতল জলও ব্যবহার করতে নেই তিনি সর্ব পাপ হতে বিরত সমস্ত পাপ বিধৌত ও সর্ব পাপ দূরীকরণে লগ্ন চিত্ত। এহেতু তিনি অন্ত প্রাপ্ত চিত্ত, সংযম ও সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর পঞ্চশত শিষ্য ছিল।
৬) সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্র : বেলাস্থি নাুী দাসীর গর্ভে তার জন্ম হয় বলে বেলট্ঠি পুত্র। তার মস্তকে সঞ্জয় ফলের ন্যায় মাংসপিন্ড বিদ্যামান থাকায় সে সঞ্জয় বেলাস্থি পুত্র নামে প্রসিদ্ধ হয়। তার অনেক শিষ্য ছিল।
মতবাদ : তার মতবাদ হল আমরা বিক্ষেপবাদ। সে কিছুতেই ধরা দিত না। প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হলে বলতো, ‘এরূপও আমি বলিনা, সেরূপও আমি বলি না, অন্যথায় আমি বলি না , না বলেও আমি বলি না।” এরূপ উত্তর দিয়ে সে বাক্য বিক্ষেপ করতো। এরূপ করার কারণ হল যে মিথ্যা ধরাপড়ার ভয়, সেহেতু সে কিছুই সঠিক জানতো না। এভাবেই সে তার মতবাদকে বাঁচিয়ে রাখতো। তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল বিধায় কর্মের ফলাফলকে সে প্রাধান্য দিত না। তার ধারণা যে, ইহ জন্মে যে যেভাবে আছে অর্থাৎ দ্বিপদ, চতুষ্পদ ইত্যাদি বন্থবিধ প্রাণী, তারা পর জন্মেও ঠিক সেই অবয়ব প্রাপ্ত হবে। এক সময়ে মগধরাজ অজাতশত্র“ তাঁর পরম গুরু দেবদত্তের মৃত্যুর পর মানসিক শান্তি আনয়নের উদ্দেশ্যে এই ছয়জন তীর্থঙ্করের নিকট একের পর এক গমন করেন। কারো মতবাদে তিনি মানসিক শান্তি লাভ করতে পারেন নি। বরং তিনি ছয় শাস্তার মধ্যে সঞ্জয়কে সর্বাপেক্ষা অজ্ঞানী বলেছেন। পরিশেষে তিনি রাজ বৈদ্য জীবকের পরামর্শে তথাগত বুদ্ধের নিকট যান এবং বুদ্ধের “শ্রামণ্য ফল সূত্র” দেশনায় অতীব প্রীত হয়ে ভগবানের শরণাগত উপাসক হন। পরিব্রাজক সুভদ্র ও এই ছয় জনের মতবাদে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভগবানের অন্তিম সময়ে তাঁরই সত্য ধর্ম দেশনা শুনে পরম শান্তি নির্বাণ সাক্ষাৎ করেন।
১) পূরণ কাশ্যপ : কোন এক ভ্রদলোকের ঔরসে এক বিজাতিয়া স্ত্রীর গর্ভে তার জন্ম হয়। পূর্বে সে বংশে ৯৯ জন জন্মেছিল তার জন্মে একশত জন পূর্ণ হওয়ার সে পূরণ আখ্যা লাভ করে। তার ব্যক্তিগত নাম কাশ্যপ। যৌবনে সে এ দ্বারবানের কাজে নিযুক্ত হয়। এই কাজে সে বিরক্ত হয়ে বনে পলায়ণ করে। তথায় দুস্যুরা তার বস্ত্র কেড়ে নেয়। বিবস্ত্র হয়ে সে নিকটবর্তী গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীদেরকে সে বলল আমি সমস্ত বিদ্যায় পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছি বলে লোকে আমাকে পূরণ বলে এবং ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছি বলে লোকে আমাকে কাশ্যপ বলে। তখন গ্রামবাসীরা তাকে বস্ত্রদান করলে সে বলল “লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র ব্যবহৃত হয় পাপ হতেই লজ্জার উৎপত্তি আমি সমস্ত পাপ-প্রবৃত্তি নির্মূল করেছি। অতএব আমার বস্ত্রের প্রয়োজন নেই। একথা শুনে লোকে তাকে পূজা করতে লাগল। পরে তাঁর পাঁচশত শিষ্য হয়। আশি হাজার লোক তার মত অনুর্বতন করে।
মতবাদ : তাঁর মতে আত্মা অক্রিয়াশীল। দেহের প্রভাবে কর্ম করা হয় বলে আত্মা দেহের ভাল-মন্দ কর্মের ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাই স্বহস্তে করলে বা আদেশ দিয়ে করালে ছেদন করলে বা করালে দণ্ড দ্বারা পীড়ন করলে বা করালে, সিঁদ কাটলে বা কাটালে, চুরি, প্রাণী হত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যা ইত্যাদি সর্ববিধ পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে অথবা কারও দ্বারা সম্পাদন করালে কোন পাপ নেই। পাপ করছি জেনে পাপ করলেও পাপ হয় না। দান, ইন্দ্রিয় দমন, শীল, সংযম এবং সত্যবাক্য বলার দ্বারাও কোন পুণ্য হতে পারে না। মোট কথা তার মতে পাপ-পুণ্য কিছুই নেই। অকুশল করলেও পাপ হয় না।
২) মক্খলি গোসাল : এর প্রকৃত নাম মস্করি। গোশালায় এক দাসীর গর্ভে জন্ম হওয়ায় তার নাম মস্করী গোশাল হয়। একদিন সে তার প্রভুর আদেশ মত একটি ঘৃত-কুম্ভ মস্তকে করে যেতে হঠাৎ পদস্থলন হয়ে সমস্ত ঘৃত মাটিতে পড়ে যায়। ভয়ে পলায়ণ করতে প্রভু তার বস্ত্র ধরে ফেলেন। সে বিবস্ত্র হয়ে বনে প্রবেশ করে। এরপর নিকটস্থ গ্রামে গিয়ে লোকজনকে প্রতারিত করে। কালে তারও পাঁচশত শিষ্য হয়। অশীতি সহস্র লোক তার মতের অনুসরণ করে। জৈন ধর্মের ঐতিহ্যগত প্রবর্তক পার্শ্বনাথের প্রথম অনুসারী হিসেবে সে আজীবন ধর্ম প্রচার করলেও কোন ফল নেই। পরের উপদেশ পালনেও কোন লাভ নেই। বল বীর্ষ-পুরুষ-শক্তি, পুরুষ-পরাক্রম বা পুরুষকার বলতে কিছু নেই। সর্বসত্ত্ব, সর্বপ্রাণী, সর্বজীব, অধীন, অবল, অবীর্য, নিয়তি, সঙ্গতি ও স্বভাবে তারা নানা প্রকার গতিপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ যা হবার তা হয় না। যা না হবার তা হয় না। চুরাশী মহাকল্পকাল ক্ষেপনান্তে জ্ঞানী ও অজ্ঞানী সকলের দুঃখের অন্তসাধন করবে। এতে অন্যের সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই।
৩) অজিত কেশকম্বলী : প্রভুর ভৎর্সনা সহ্য করতে না পেরে সে সন্ন্যাস অবলম্বন করে। সে কেশ নির্মিত বস্ত্র দ্বারা গাত্র আচ্ছাদিত করত এবং সর্বদা মস্তক মুন্ডল করত। তাই তার প্রকৃত নাম অজিত এর সাথে কেশকম্বল যোগ করে অজিত কেশকম্বলী বলা হয়।
মতবাদ : তার মত দানের যজ্ঞের, অতিথি সৎকারের, সুকৃত-দুস্কৃত কর্মের কোন ফল বা বিপাক নেই। ইহলোক- পরলোক, মাতা-পিতা ও ঔপপাতিক সত্ত্ব নেই। পৃথিবীতে সম্যক প্রতিপন্ন বা সম্যক মার্গলাভী এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণ নেই, যাঁরা স্বয়ং অভিজ্ঞা বলেই লোক ও পরলোক প্রত্যক্ষ করে বলতে পারেন। পুরুষ চার মহাভূত হতে উৎপন্ন। মরে গেলে মাটির অংশ মাটির সাথে, জল জলের সাথে, তেজ তেজের সাথে এবং বায়ু বায়ুর সাথে মিশে যায়। ইন্দ্রিয় সমূহ আকাশে গমন করে। মৃত পুরুষকে চার পায়ার খাঁটিয়া করে শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে লোক তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করে। অজ্ঞানী ও জ্ঞানী উভয়ে মৃত্যুর পর উচ্ছিন্ন হয়, বিনাশ প্রাপ্ত হয়, মৃত্যুর পর আর জন্মে না। অজিত কেশকম্বলী এরূপ নাস্তিকবাদী ছিল। তার অনেক শিষ্য প্রশিষ্য ছিল।
৪) পকুধ কচ্চায়ন : এ ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বংশে এক বিধবার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। পকুধ বৃক্ষমূলে তার জন্ম হওয়ায় পকুধ কচ্চায়ন নায়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। জনৈক ব্রাহ্মণ তাকে প্রতিপালন করেন। ব্রাহ্মণের মৃত্যু হলে জীবিকা নির্বাহের উপায় না দেখে সন্ন্যাস অবলম্বন করে।
মতবাদ : তার মতে পৃথিবীকায়, আপকায়, তেজকায়, বায়ুকায়, সুখ-দুঃখ ও জীব এই সাতটি কাঁয় অকৃত, অকারিত, অর্নিমিত, বন্ধ্য, কটুস্থ, ইন্দ্রখিল সদৃশ স্থিত। তারা কম্পিত হয় না, বিপরিণাম প্রাপ্ত হয় না, পরস্পরের বাধা জন্মায় না, পরস্পরের সুখ-দুঃখের হেতুও নহে। কোন হন্তা নেই। হনন করবারও কেহ নেই। শ্রোতা, বক্তা, বিজ্ঞতা কেহ নেই, বিজ্ঞাপন কর্তাও নেই। তীক্ষ্ম অসিদ্বারা শিরচ্ছেদ করলেও কেহ কারও জীবন হত্যা করতে পারে না অপিচ এ সাত কায়ের অন্তরে বিবয়ে শস্তু প্রবেশ করে মাত্র।
৫) নিগন্ঠ নাতপুত্র : নাত নামক কৃষকের পুত্র। নিগন্ঠ বা নির্গ্রন্থ বলা হয় এ যে তিনি বলতেন এমন কোন গ্রন্থ নেই আমি পাঠ করিনি। এ কারণে তিনি নির্গ্রন্থ নাত পুত্র নামে পরিচিত। তিনি পার্শ্বনাথের জৈন ধর্মের প্রবক্তা।
মতবাদ : তাঁর মতে শীতল জল ও প্রাণী বিশেষ। এ হেতু শীতল জলও ব্যবহার করতে নেই তিনি সর্ব পাপ হতে বিরত সমস্ত পাপ বিধৌত ও সর্ব পাপ দূরীকরণে লগ্ন চিত্ত। এহেতু তিনি অন্ত প্রাপ্ত চিত্ত, সংযম ও সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর পঞ্চশত শিষ্য ছিল।
৬) সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্র : বেলাস্থি নাুী দাসীর গর্ভে তার জন্ম হয় বলে বেলট্ঠি পুত্র। তার মস্তকে সঞ্জয় ফলের ন্যায় মাংসপিন্ড বিদ্যামান থাকায় সে সঞ্জয় বেলাস্থি পুত্র নামে প্রসিদ্ধ হয়। তার অনেক শিষ্য ছিল।
মতবাদ : তার মতবাদ হল আমরা বিক্ষেপবাদ। সে কিছুতেই ধরা দিত না। প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হলে বলতো, ‘এরূপও আমি বলিনা, সেরূপও আমি বলি না, অন্যথায় আমি বলি না , না বলেও আমি বলি না।” এরূপ উত্তর দিয়ে সে বাক্য বিক্ষেপ করতো। এরূপ করার কারণ হল যে মিথ্যা ধরাপড়ার ভয়, সেহেতু সে কিছুই সঠিক জানতো না। এভাবেই সে তার মতবাদকে বাঁচিয়ে রাখতো। তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল বিধায় কর্মের ফলাফলকে সে প্রাধান্য দিত না। তার ধারণা যে, ইহ জন্মে যে যেভাবে আছে অর্থাৎ দ্বিপদ, চতুষ্পদ ইত্যাদি বন্থবিধ প্রাণী, তারা পর জন্মেও ঠিক সেই অবয়ব প্রাপ্ত হবে। এক সময়ে মগধরাজ অজাতশত্র“ তাঁর পরম গুরু দেবদত্তের মৃত্যুর পর মানসিক শান্তি আনয়নের উদ্দেশ্যে এই ছয়জন তীর্থঙ্করের নিকট একের পর এক গমন করেন। কারো মতবাদে তিনি মানসিক শান্তি লাভ করতে পারেন নি। বরং তিনি ছয় শাস্তার মধ্যে সঞ্জয়কে সর্বাপেক্ষা অজ্ঞানী বলেছেন। পরিশেষে তিনি রাজ বৈদ্য জীবকের পরামর্শে তথাগত বুদ্ধের নিকট যান এবং বুদ্ধের “শ্রামণ্য ফল সূত্র” দেশনায় অতীব প্রীত হয়ে ভগবানের শরণাগত উপাসক হন। পরিব্রাজক সুভদ্র ও এই ছয় জনের মতবাদে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভগবানের অন্তিম সময়ে তাঁরই সত্য ধর্ম দেশনা শুনে পরম শান্তি নির্বাণ সাক্ষাৎ করেন।
0 comments: