ধর্মান্তর একটি অভিশাপ
একটি শিশুকে মা যখন গর্ভে ধারণ করেন, তখন সে মায়ের যে কি কষ্ট তা শুধু গর্ভ ধারিণীই জানে। আবার একজন মা’ই জানে মাতৃস্বর্গ কতখানি মাতৃসুধা। সে শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হন, পৃথিবীর আলো দেখেন তখন গর্ভ ধারিণী তার প্রসব বেদনা ভুলে গিয়ে আনন্দের চুমু খেয়ে কোলে তোলে নেয় এবং তার সাথে পিতা সহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজন সকলে যে আনন্দ অনুভব করে তা একমাত্র তারাই জানে। সে শিশুটি কন্যা সন্তান হোক আর ছেলে সন্তানই হোক সকলে কিন্তু আনন্দে উদ্বেলিত। শিশুটি ভ’মিষ্ট হ্ওয়ার পর থেকে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের হাত ধরে ধীরে ধীরে হাটতে শিখে, কথা বলতে শিখে, আর একসময় সে বড় হয়ে উঠে। আমরা সন্তানরা বেড়ে উঠি একমাত্র মা-বাবার অজ¯্র ত্যাগের ফলে। মা-বাবার ত্যাগ না থাকলে আমরা সন্তানরা বেড়ে উঠা সম্ভব নয়। কারন’ মা-বাবাই একমাত্র ব্যক্তি যে, তাদের সন্তানদেরকে জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করেন। এক্ষেত্রে একটি গল্প মনে পড়ে যায়, গল্পটি তুলে ধরছি, একদিন এক মা একটি ছেলে প্রসব করলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে ছেলেটির কান ছিলনা। যাক, ছেলেটিকে বয়ঃসন্ধিকালে যথা নিয়মে স্কুলে ভর্তি করা হলো। ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছেলেটিকে তার সহ-পাটিরা কান নেই বলে উপহাস করতেন। একদিন ছেলেটি তার মা-বাবাকে বললো, মা-বাবাও চিন্তিত হয়ে পড়লো। তখন মা-বাবা এক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলো। ডাক্তার বললো অপারেশন করে কান প্রতিস্থাপন করা যাবে। এখন চিন্তায় পড়ে গেল কান কোথায় পাবে! জানি কান কোথাও পাওয়া যাবেনা তার পরও বেড়িয়ে পড়লো কান খোজার উদ্দেশ্যে, কিন্তু কোথাও কান পাওয় গেলনা। কার কান কাকে দেবে! কি আর করা অবশেষে মা নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে নিজেই তার ছেলেকে কান দিবে। মায়ের মনতো, মা কি কখনো সন্তানের কষ্ট দেখতে পারে! শেষ পর্যন্ত মা নিজেই তার ছেলেকে কান দিয়ে উপহাস থেকে রক্ষা করলো। এভাবেই আমাদের জন্য মা-বাবারা সারাটা জীবন ত্যাগ করে যান। গল্পটি লিখতে গিয়ে আরো একটি গল্প মনে পড়ে যায়। গল্পটি এই, একদিন দেবী অন্নদা নদী পার হলো ঈশ্বরী পাটনির খেয়ানৌকোয়। তীরে নেমে দেবী খুশি হয়ে মাঝিকে জিজ্ঞেস করলো, কী বর চাও তুমি? যা চাও তাই পাবে তুমি।’ মাঝি গরিব মানুষ, খেয়া পারাপার করে তার জীবন চলে। মাঝি দেবীর কাছে চাইতে পারতো রাজ্য, বাড়িভর্তি সোনারুপো, মুক্তোপান্না। তার অভাবের দিন কেটে যেতো দেবীর দয়ায়। মাঝি ওসব কিছু চাইলো না, সে দেবীর কাছে নিবেদন করলো একটি ছোট প্রার্থনা। বললো, আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে। মাঝির এ প্রার্থনা থেকে বুঝতে পারি যে, তার কোনো স¦ার্থ ছিলনা, ছিলো শুধু আত্মত্যাগ, ছিলো সন্তানের প্রতি অপার করুণা। কিন্তু আমরা সন্তানরা এর কতটুকু মূল্যইবা দিয়ে থাকি! মা-বাবারা সারাটা জীবন আমাদের সুখ কামনা করে যান। আর তার বিনিময়ে আমরা সন্তানরা তাদেরকে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারিনা। এতক্ষণ যা বললাম তা একটি শিশু বেড়ে উঠার পিছনে কার কতটুকু অবদান তার বিন্দু পরিমান নমুনা মাত্র তুলে ধরলাম। কারন কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলে একটি শিশু বড় হয়ে উঠতে পারে সেটি আজকের বড় সন্তানটির (ছেলে-মেয়ে) অবুঝ মনটাকে জাগানোর চেষ্টা করছি মাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা সন্তানরা সামান্য একটি আবেগের তাড়নায় এক নিমিষের জন্য সব কিছু ভুলে যাই। হাজার জল্পনা-কল্পনার মাঝেও আমরা সঠিক সিদ্ধানেÍ পৌছতে পারিনা। হ্যা আমি জানিনা পাঠকগন কি বুঝতে পেরেছেন! প্রিয় পাঠকগন আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি কিংবা বুঝাতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে ধর্মান্তর বিষয়ে। এবার হয়তো নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন! আজকাল আমাদের সমাজে ধর্মান্তরের ছোঁয়া বেশি করে লেগেছে। ধর্মান্তর বিষয়টি বর্তমানে কমন হয়ে দাড়িয়েছে। আসলে যারা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তাঁরা কি একবারও তাদের অতীতের কথা গুলো চিন্ত্ াকরেছে। এখানে আমার একটি প্রশ্ন যারা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তাদের কাছে (বিশেষ করে মেয়েদের) অন্য ধর্মের আচার-আচরন, রীতি-নীতি, কলা-কৌশল জেনেই কি ধর্মান্তরিত হয় নাকি একজন ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে যে সর্ম্পক গড়ে উঠে তা সত্যিতে রুপদান করার জন্য আবেগের বশবর্তী হয়ে ধর্মান্তরিত হয়? আচ্ছা, আর একটি প্রশ্ন, যদি কোনো ছেলে অন্য ধর্মাবলম্বী কোনো মেয়ের সাথে মনের আদান-প্রদান করে ধর্মান্তরিত হতে বললে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি কি কখনো ছেলেটিকে বলেছে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য? আবার যে ধর্মান্তরিত হয়েছে সেকি আদৌ তার স্বধর্মকে মন থেকে বিসর্জন দিতে পেরেছে নাকি রাতের অন্ধকারে ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে? তারা কি দাম্পত্য জীবনে সুখী? হয়তো বলতে পারে সুখী। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সুখী হতে পারেনা বলে আমার ধারণা। কারণ মনের মিল হলেও ধর্মের মিল নেই আর যেখানে ধমের্র মিল নেই সেখানে সুখ আছে বলে আমার জানা নেই। যেহেতু এক ধর্মের কালচার আরেক ধর্ম তা গ্রহণ করেনা বলেই সেখানে সব গন্ডগোল। সন্তান-সন্ততিরা যখন ধর্মান্তরিত হয় তখন কিন্তু খেসারত দিতে হয় তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলকে আর যেখানে সমাজচ্যুত ব্যবস্থা আছে সেখানে হতে হয় সমাজচ্যুত। সমাজের মধ্যে হয়ে যায় গৌণ, মাথা উচুঁ করে কথা বলতে পারেনা। ধর্মান্তরিত সন্তান-সন্ততিরা পিতা-মাতার কাছে হয়ে যায় জীবিত মৃত, হয়ে যায় ত্যাজ্য। তাই ধর্মান্তর একটি অভিশাপ। যেমন করে নেমেছিল কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনে। যে কবি সনেট কবিতার প্রবর্তক। একটি মাত্র আবেগের তাড়নায় ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তার পরও কবি সুখী ছিল না বার বার তাকে তাড়া করতো পিছনে ফেলে আসা স্মৃতি গুলো। কবি সব সময় নিজেকে ধিক্কার দিত কেন সে ধর্মান্তর গ্রহণ করেছে! কবি ধর্মান্তর গ্রহণ না করে যদি নিজের স্বধর্মকে আগলে ধরে থাকতো তাহলে একজন বিখ্যাত কবি হয়ে মানুষের হৃদয়ের মাঝে আসন করে নিতে পারতো। কিন্তু ইংরেজ কবি হওয়ার বাসনা নিয়ে যে,ধর্মান্তরিত হয়েছে তা নিরাশায় পরিণত হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ মাতৃভূমিতে পিরে এসেছিল (এখানে কবির কথা উল্লেখ করা মূর্খতার সামিল)। ধর্মান্তরিত হওয়ার পিছনে যার হাত রয়েছে তা হচ্ছে মোহ। মোহ কিংবা লালসা আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করছে এবং স্বধর্ম থেকে অনÍর্ধান হতে সহায়তা করছে। কেন আমরা মোহ নামক জ্বলন্ত অগ্নির পিছনে পরিচালিত হচ্ছি? তার একটি মাত্র কারণ অজ্ঞতা। অজ্ঞতা বলতে সঠিক কিছু না জেনে, কোন বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান অর্জন না করে এবং বিচার-বিশ্লেষণ না করে বিপথে পরিচালিত হওয়াকে বুঝায়। যদিওবা আমরা তিন ভাগের দুই অংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী। তার পরেও আমাদের জ্ঞান সীমিত বলে মনে হয়। আর জ্ঞান সীমিত বলে মিথ্যা আবেগ বা মোহকে প্রশ্রয় দিয়ে ধর্মান্তরের দিকে ঝুঁকে বেশি। তাই মিথ্যা আবেগ বা মোহ একটি ফুটন্ত জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই অভিশাপ থেকে বেড়িয়ে আশা সম্ভব নয় এবং জলন্ত কাষ্ট খন্ডের ন্যায় সারাটা জীবন পুরতে হবে। আর এক্ষেত্রে নিজকে জলন্ত আগুনের মধ্যে শপে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো অন্যদের কাছ থেকে অধিকতর কিছু পাওয়ার আশা করা। কিন্তু যখনই নিজের হৃদয়ের দিকে চোখ ফেরাবে তখনই বুঝতে পারবে আসলে কোনটি সঠিক। তাই নৈতিকতার প্রশ্নে যে কাউকে (ছেলে বা মেয়ে) নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
[বি.দ্র. আমার লেখাটি কারো মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়]
লেখক সুমনানন্দ ভিক্ষু,অধ্যক্ষ কাঁঠাল ভাঙ্গা সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহার।
[বি.দ্র. আমার লেখাটি কারো মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়]
লেখক সুমনানন্দ ভিক্ষু,অধ্যক্ষ কাঁঠাল ভাঙ্গা সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহার।
0 comments: