বসল সুত্তং

                             
 

১। এবং মে সুতং-একং সমযং ভগবা সাবত্থিযং বিহরতি জেতবনে অনাথপিন্ডিকসস্ আরামে। অথ খো ভগবা পুব্ব্হ সময়ং নিবাসেত্বা পত্তচীবরমাদায সাবত্থিযং পিন্ডায পাবিসি। তেন খো পন সমযন অ¹িকভারদ্বাজসস ব্রাহ্মণসস নিবেসনে অ¹িপজ্জলিতো হোতি আহুতি প¹হিতা অথ খো ভগবা সাবত্থিযং সপদানং পিণ্ডায চরমানো যেন অ¹িবারদ্বাজস্স ব্রাহ্মণসস নিবেসনং তেনুপসংকমি। অদ্দসা খো অ¹িক ভারদ্বাজো ব্রাহ্মণো ভগবন্তং দূরতোব আগচছন্তং, দিস্বান ভগবন্তং এতদবোচ,- তত্রে’ব মুণ্ডক! তত্রে’ব সমণক! তত্রে’ব বসলক! তিট্ঠাহী’ তি।
এবং বুত্তে ভগবা অ¹িক ভারদ্বাজং ব্রাহ্মণং এতদবোচ জানাসি পন ত্বং, ব্রাহ্মণ, বসলং বা বসলকরনে বা ধম্মেতি। ন খো অহং ভো।  গৌতম, জানামি বসলং বা বসলকরনে বা ধম্মে’তি। সাধু মে ভবং গৌতমো তথা ধম্মং দেসেতু যথাহং জানেয্যং বসলং বা বসলকরণে বা ধম্মেতি, তেন হি, ব্রাহ্মণ! সুণাহি সাধুকং মনসিকরোহি ভসিস্সামী’ তি। এবম্ভোতি খো অ¹িকভারদ্বাজো ব্রাহ্মণো ভগবতো পচ্চসসোসি, ভগবা এতদবোচ-
১। বাংলানুবাদঃ আমি এরূপ শুনেছি- এক সময় বুদ্ধ শ্রাবস্তীর নিকটবর্তীঅনাথপিন্ডিক কর্তৃক নির্মিত জেতবন আরামে বাস করছিলেন। বুদ্ধ ভগবান পূর্বাহ্নে অন্তবাস পরিধান করে পাত্রচীবর নিয়ে ভিক্ষান্নের জন্য শ্রাবস্তীতে প্রবেশ করলেন। তখন অগ্নিপূজারি ভরদ্বাজ ব্রাহ্মণের গৃহে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল, পূজায় আহুতি দেয়ার জন্য উপকরণ সমূহ প্রস্তুত হয়েছিল। অতঃপর তথাগত বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে ক্রমান্বয়ে গৃহ হতে গৃহান্তরে ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করতে করতে অগ্নিপূজক ভরদ্বাজ ব্রাহ্মণের গৃহদ্বারে উপস্থিত হলেন। ভরদ্বাজ ব্রাহ্মণ বুদ্ধকে দূর হতে আসতে দেখে বললেন-‘‘হে মুণ্ডক, সেখানেই দাঁড়াও। “হে শ্রামণ সেখানেই দাঁড়া, হে বৃষলক, ওখানেই দাঁড়াও!” এরূপ বললে তথাগত বুদ্ধ অগ্নিপূজক ভরদ্বাজকে বললেন, ‘ব্রাহ্মণ; তুমি চণ্ডাল করণীয় ধর্ম জান কি?” “হে গৌতম, আমি বৃষল-করণীয় ধর্ম জানিনা। আপনি আমাকে দেশনা করুন, যাতে আমি বৃষল-করণীয় ধর্ম জানতে পারি।” এরূপে ব্রাহ্মণ বুদ্ধকে যাচ্ঞা করলেন- ব্রাহ্মণ, আমি দেশনা করছি, মনোযোগ সহকারে শুনন। ‘‘হ্যাঁ ভদন্ত” বলে ভরদ্বাজ ব্রাহ্মণ তথাগত বুদ্ধকে সম্মতি জানালেন।
তথাগত বুদ্ধ বললেন-
২। কোধনো উপনাহী চ পাপম্কখী চ যো নরো,
বিপন্নদিট্ঠি মায়াবী তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
২। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি ক্রোধপরায়ন, হিংসুক বা দীর্ঘকাল অন্তরে হিংসা পোষণকারী হয়, পাপলিপ্ত অকৃতজ্ঞ, মিথ্যাদৃষ্টি পরায়ণ, পরলোক ও দানের ফলাদিতে অবিশ্বাসী ও মায়াবী তাকে বৃষল বলে জানবে।
৩। একজং বা দ্বিজং বা’পি যোধ পানং বিহিংসতি,
যস্স পানে দযা নত্থি তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
৩। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি একজ (পশু ইত্যাদি) ও দ্বিজ (পক্ষী ইত্যাদি) প্রাণীদেরকে হিংসা করে, প্রাণীদের প্রতি যার দয়া নেই, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
৪। যো হন্তি পরিরন্ধতি গামানি নিগমানি চ,
নি¹হকো সমঞ্ঞাতো তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
৪। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি গ্রাম ও নগর সমূহের অধিবাসীকে হনন করে, গ্রাম ও নগর সমূহ ধ্বংস করে, অবরোধ করে, সে নিগ্রাহক বা ভেদক বলে পরিচিত হয়, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
৫। গামে বা যদি বা’রঞ্ঞে যং পরেসং মমাযিতং,
থেয্যা অদিন্ন দেযতি, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
৫। বাংলানুবাদ-যে লোক গ্রামে বা অরণ্যে অপরের সম্পদ নিয়ে যায়, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
৬। যো হবে ইনমাদায-ভুঞ্জমানো পলাযতি,৬। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি কোন ঋণ নিয়ে না দিবার ইচ্ছায় চুরি করে বা না বলে পলায়ন করে এবং খুঁজতে গেলে ঋণের কথা অস্বীকার করে তাকে বৃষল বলে জানবে।
৭। যো বে কিঞ্চিকম্যতা পন্থস্মিং বজন্তং জনং,
হন্ত্বা কিঞ্চিকখক্য মাদেতি তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
৭। বাংলানুবাদঃ যে লোক কিছু পাবার ইচ্ছায় পথিককে হত্যা করে কিঞ্চিৎ মাত্র দ্রব্যও গ্রহণ করে, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
৮। যো অত্তহেতু পরহেতু ধনহেতু চ যো নরো,
সক্খিপুট্ঠো মুসা ব্রƒহি, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
৮। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি নিজের হেতু, পরের হেতু ও ধনের হেতু মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তাকে চন্ডাল বলে জানবে।
৯। যো ঞাতীনং বা সখীনং বা দারেসু পটিদিস্সতি,
সাহসা সম্পিযেনা বা, তং জঞ্ঞা বসালো ইতি।
৯। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি জ্ঞাতিদের স্ত্রীর প্রতি, বন্ধুদের স্ত্রীর প্রতি সহসা প্রিয়ভাব দ্বারা দূষিতভাব প্রদর্শন করে বা অন্যায় ব্যবহার করে, তাকেও চন্ডাল বলে জানবে।
১০। যো মাতরং বা পিতরং বা জিণœকং গতযোব্বনং,
পহুসন্তো ন ভরতি, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১০। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি বিগত যৌবন জীর্ণ (বৃদ্ধ) মাতা বা পিতাকে প্রচুর ধন সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভরণপোষণ করে না, তাকেও চন্ডাল বলে জানবে।
১১। যো মাতারং বা পিতরং বা ভাতরং ভাগিনিং সসুং,
হন্তি রোসেতি বাচায, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১১। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি মাতা-পিতা, ভ্রাতা-ভগ্নী ও শ্বশুরকে হত্যা করে এবং দুর্বাক্য বলে তাকেও চন্ডাল বলে জানবে।
১২। যো অত্থং পুচ্ছিতো সন্তো, অনত্থমনুসাসতি,
পটিচ্ছন্নেন মন্তেতি, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১২। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি হিতকথা জিজ্ঞাসিত হয়ে অনর্থে বা কুবিষয়ে অনুশাসন করে অর্থাৎ সৎ বুদ্ধি নিতে গেলে কু-বুদ্ধি প্রদান করে, গোপণীয় স্থানে অনর্থের জন্য মন্ত্রণা করে তাকেও বৃষল বলে জানবে।
১৩। যো কত্বা পাপকং কম্মং, মা মং জঞ্ঞতি ইচ্ছতি,
যো পটিচ্ছন্নকম্মন্তো, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৩। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি গোপণে পাপ কর্ম করে অথচ মুখে পবিত্র দেখায়, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
১৪। যো বে পরকুলং গন্ত্বা ভুত্বান সুচি ভোজনং,
আগতং নপ্পটিপূজেতি তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।১৪। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি পরগৃহে গিয়ে উত্তম ভোজন পরিভোগ করে থাকে এবং নিজ গৃহে আসলে সেই ব্যক্তিকে সেরূপ খাদ্য ভোজ্য দিয়ে আপ্যায়ন করে না, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
১৫। যো ব্রাহ্মণং বা সমনং বা অঞ্ঞাং বা’পি বণিব্বকং
মুসাবাদেন বঞ্চেতি তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৫। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ, শ্রামণ বা অন্য যাচককে মিথ্যা বাক্য দ্বারা বঞ্চনা করে তাকেও বৃষল বলে জানবে।
১৬। যো ব্রাহ্মণং বা সমনং বা ভত্তকালে উপ্টঠিতে,
রোচেতি বাচা ন চ দেতি তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৬। বাংলা অনুবাদঃ যে ব্যক্তি ভোজনকালে উপস্থিত ব্রাহ্মণ বা শ্রামনকে বাক্য দ্বারা রোষ বা কটুক্তি করে এবং সম্মুখে আসলে খাদ্য ভোজ্য দেয় না, তাকেও বৃষল বলে জানবে।
১৭। অসতং যোধ পব্রƒতি মোহেন পলিগুন্ঠিতো,
কিঞ্চিক্খং নিজিনীসানো, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৭। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি মোহবশত লাভ সৎকার লাভার্থে অভূতগুণ প্রকাশ করে, তাকে বৃষল বলে জানবে।
১৮। যো চত্তানং সমুক্কংসে, পরে চ মবজানাতি
নিহীনো সেন মানেন, তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৮। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি নিজের প্রশংসা করে উপরে তোলে, অপরকে নিন্দা করে অবনত করে এবং স্বকীয় অহংকার দ্বারা লোকের কাছে তার গৌরব প্রকাশ করে থাকে, তাকেও চন্ডাল বলে জানবে।
১৯। রোসকো কদরিযো চ, পাপিচ্ছো মচ্ছরী সঠো,
অহিরিকো অনোত্তপী তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
১৯। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি রোষক, দান নিবরক, পাপিষ্ট, অদাতা, শট, নিলর্জ্জ ও ভয়হীন সেই কাপুরুষকেও চন্ডাল বলে জানবে।
২০। যো বুদ্ধং পরিভাসতি অথ বা তস্স সাবকং
পরিব্বাজং গহটঠং বা তং জঞ্ঞা বসলো ইতি।
২০। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি বুদ্ধ অথবা তাঁর শ্রাবক, পরিব্রাজক অথবা গৃহস্থ লক্ষ্য করে গালি দেয়, তাকেও চন্ডাল বলে জানবে।
২১। যো বে অনরহং সন্তো, অরহং পটিজানাতি,
চোরো সব্রহ্মকে লোকে, এস খো বসলাধমো
এতে খো বসলা বুত্তা মযা যে তে পকাসিতা।
২১। বাংলানুবাদঃ যে ব্যক্তি অর্হৎ না হয়েও অর্হৎ বলে নিজেকে জ্ঞাপন করে,আব্রাহ্ম দেব-মনুষ্যলোকে সে চোর বলে কথিত হয় এরূপ ব্যক্তিও বৃষলাধমের মধ্যে পরিগণিত। হে ব্রাহ্মণ, আমার দ্বারা সংক্ষেপে বৃষল ধর্ম কথিত হল।
২২। ন জচ্চা বসলো হোতি, ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,
কম্মুনা বসলো হোতি, কম্মুনা হোতি ব্রাহ্মণো।
২২। বাংলানুবাদঃ জন্ম দ্বারা কেউ বৃষল হয় না, জন্ম দ্বারা কেউ ব্রাহ্মণ হয় না। কর্ম দ্বারা বৃষল ও ব্রাহ্মণ হয়।
২৩। তদমিনাপি জানাথ যথামেদং নিদসসনং, 
চন্ডালপুত্তো সোপাকো, মাতঙ্গো ইতি বিস্সুতো।
২৩। বাংলানুবাদঃ ব্রাহ্মণ, বৃষলত্বের কারণ-এর দ্বারা জ্ঞাত হউন। যেমন- চন্ডালপুত্র সোপক মাতঙ্গ বলে খ্যাত বা প্রসিদ্ধ হয়েছিল।
২৪। সো যসং পরমং পত্তো, মাতঙ্গো যং সুদল্লভং,
আগচ্ছুং তস্সুপটঠানং-খত্তিয়া ব্রাহ্মনো বহূ।
২৪। বাংলানুবাদঃ সেই মাতঙ্গো শ্রেষ্ঠ পরম সুদুর্লভ যশঃ প্রাপ্ত হয়েছিল। তার পরিচর্যার জন্য বহু ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় উপস্থিত হতো।
২৫। দেবযানং অভিরুযহ, বিরজং সো মহাপথং,
কামরাগ বিরাজেত্বা ব্রহ্মলোকূপগো,
ন নং জাতি নিবারেতি, ব্রহ্মলোকূপ্পত্তিযা।
২৫। বাংলানুবাদঃ সেই মাতঙ্গ বিরজ মহাপথে দেবযানে আরোহন করে, কামাসক্তিকে বিধ্বংস করে ব্রহ্মলোকে উপস্থিত হয়েছিল।
২৬। অজ্ঝাককুলে জাতা ব্রাহ্মণা মন্তবন্ধনো,
তে চ পাপেসু কাম্মেসু, অভিন্হমুপদিস্সরে।
২৬। বাংলানুবাদঃ সেই চন্ডালপুত্র মাতঙ্গকে চন্ডাল কুলে জন্ম বলে তার ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হওয়ার হেতু কেউ বারণ করতে পারেনি।
২৭। তে চ পাপেসু কাম্মেসু, অভিন্হমুপদিস্সরে,
দিট্ঠেব ধম্মে গারযহা-সম্পরাযে চ দু¹তি,
ন তে জাতি নিবারেতি-দু¹ত্যা গরহায বা।
২৭। বাংলানুবাদঃ বেদাধ্যাপক কুল জন্ম দেবমন্ত্র পাঠে নিরত ব্রাহ্মণদিগকে নিত্য পাপকর্মে রত থাকতে দেখা গেছে। তারা ইহকালে নিন্দিত এবং পরকালে দুর্গতিপ্রাপ্ত হয়েছেন, কিন্তু উচ্চকুলে জন্ম হয়েছে বলে তাদের দুর্গতি ও নিন্দা কেউ নিবারণ করতে পারেনি।
২৮। ন জচ্চা বসলো হোতি ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,
কম্মুনা বসলো হোতি, কম্মুনা হোতি ব্রাহ্মনো।
২৮। বাংলানুবাদঃ জন্মা দ্বারা কেউ বৃষল হয় না, জন্ম দ্বারা কেউ ব্রাহ্মণ হয় না। কর্মদ্বারা বৃষল ও ব্রাহ্মণ হয়।
২৯। এবং বুত্তে, অ¹ি’কভারদ্বাজো ব্রাহ্মণো ভগবন্তং এতদবোচ-অভিক্কন্তং ভো গোতম, অভিক্কন্তং ভো গোতম, সেয্যাথাপি ভো গোতম! নিক্কুজ্জিতং বা উক্কুজ্জেয্য, পটিচ্ছনং বা বিবরেয্য, মূল্হস্স বা অ¹ং আচিক্েেখয্য, অন্ধকারে বা তেল পজেজাতাং ধারেয্য, চকখুকন্তো রূপাদি দক্খিন্তী’ তি এবমেব ভোতা গোতামেন অনেক পরিযাযেন ধম্মো পকাসিতো, এসাহং ভগবন্তং গৌতমং সরণং গচ্ছামি, ধম্মঞ্চ ভিক্খুসঙ্ঘঞ্চ, উপাসকং মং ভবং গৌতম ধারেতু অজ্জত¹ে পাণুপেতং সরণং গতন্তি।
২৯। বাংলানুবাদঃ তথাগত বুদ্ধ একথা বললে, অগ্নিপূজক ভরদ্বাজ ব্রাহ্মণ পুনঃ বুদ্ধকে বললেন বড়ই সুন্দরভাবে আপনার দ্বারা ধর্ম দেশিত হয়েছে। যেমন হে গৌতম! কেউ অধোমুখী স্থাপিত পাত্র উপরিমুখী করে, আচ্ছাদিত বস্তু বিবৃত করে, দিগভ্রান্তকে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, অন্ধকারে তৈল প্রদীপ ধারণ করে যাহাতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি রূপসমূহ দর্শন করতে পারে, সেরূপ মহানুভব গৌতম দ্বারা অনেক প্রকারে ধর্ম দেশিত হল। আজ হতে জীবনের শেষ অবধি আমি বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করছি, ধর্মের শরণ গ্রহণ করছি ও সংঘের শরণ গ্রহণ করছি। হে গৌতম, আমাকে আপনার উপাসক বলে গ্রহন করুন।

0 comments:

বুদ্ধের অশীতি অনুব্যঞ্জন লক্ষণ

                       বুদ্ধের অশীতি অনুব্যঞ্জন লক্ষণ


(১) বুদ্ধের নখ তাম্র অর্থাৎ আরক্তবর্ণ (২) øগ্ধ অর্থাৎ আদ্রবৎ (৩) উচ্চ অর্থাৎ মধ্যভাগ উন্নত ছিল (৪) অঙ্গুলি সমূহ ছত্রচিহ্ন বিশিষ্ট (৫) ক্রমান্বয়ে সুগোল (৬) চিত্রিতের ন্যায় (৭) দেহ শিরা (৮) শিরাগ্রন্থি দেখা যাইত না (৯) গুল্ফ গৃঢ় (১০) পাদদ্বয় সমান ছিল (১১) পদক্ষেপ সিংহের ন্যায় (১২) পদচালনা গজরাজের মত (১৩) পদ বিন্যাস হংসের ন্যায় (১৪) মও বৃষভের ন্যায় স্বাচ্ছন্দ গতি সম্পন্ন ছিলেন (১৫) দক্ষিণ চরণ প্রথমেই বিন্যাস হইত (১৬) মনোহর লীলাযুক্ত (১৭) সরল গতি ছিল (১৮) দেহ গোলাকার ও মাংসল ছিল (১৯) গাত্র যেন এই মাত্র পরিমার্জিত করা হইয়াছে, সেইরূপ পরিসৃষ্ট ছিল (২০) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্বাপরাক্রমে সুবিভক্ত বা সুগোল (২১) দেহ কান্তি উজ্জ্বল (২২) অঙ্গ বা চেহারা কোমল (২৩) অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুপবিত্র (২৪) সকল অঙ্গ ও লক্ষণ পরিপূর্ণ (২৫) দেহ স্থল, মনোহর ও সুগোল (২৬) পদ-বিক্ষেপ সমান (২৭) চক্ষু বিশুদ্ধ (২৮) দেহ কোমল ছিল (২৯) দেহে দৈন্যতা ও ক্ষোভ চিহ্ন ছিল না (৩০) দেহ সর্বদা উৎসাহ উদ্যোগ সম্পন্ন ছিল (৩১) উদয় গম্ভীর (ভূঁড়িহীন) (৩২) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুপ্রসন্ন (হাস্যময়) (৩৩) সুবিভক্ত (৩৪) দেহ-জ্যোতি পরিশুদ্ধ আলোকের ন্যায় (৩৫) উদর গোল চেপ্টা নহে (৩৬) মার্জিত অর্থাৎ ঔজ্জ্বল্য বিশিষ্ট (৩৭) কুক্ষি অভুন্ন (কোল কুঁজো বিহীনতা) (৩৮) ক্ষীণ (স্থূল নহে) (৩৯) নাভি গভীর (৪০) দক্ষিণাবর্ত্ত (৪১) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দর্শকদের আনন্দায়ক (৪২) আচার ব্যবহার বিশুদ্ধ (৪৩) দেহ তিলক চিহ্ন বিহীন (৪৪) হস্ত তল তুলার ন্যায় কোমল (৪৫) হস্থ রেখা øিগ্ধ (৪৬) গম্ভীর (৪৭) দীর্ঘ (৪৮) বচন ও স্বর অতি উচ্চ ও নহে, কর্কশও নহে অথচ গাম্ভীর্য্যপূর্ণ (৪৯) ওষ্ঠ পক্ক বিম্বফলের ন্যায় আরক্তবর্ণ (৫০) জিহবা কোমল (৫১) পাতলা (ইহা যোগীর লক্ষণ) (৫২) রক্তবর্ণ (৫৩) গলার স্বর মেঘ গর্জনের ন্যায় গম্ভীর (৫৪) ও মনোহর (৫৫) দন্ত সুগোল (৫৬) তীক্ষè (৫৭) শুভ্রবর্ণ (৫৮) দন্ত পঙক্তি সমান (৫৯) পূর্বাপরক্রমে সাজানো (৬০) নাসিকা উন্নত (৬১) উজ্জ্বল (৬২) নেত্র বিশাল (৬৩) নেত্র পত্রের লোম অতিশয় সুদৃশ্য (৬৪) চক্ষুর ক্ষেত্র ও মনি শ্বেত ও নীলপদ্মের পাপ্ড়ি ন্যায় সুশোভন ছিল (৬৫) ভ্রƒযুগল আয়তন (৬৬) উজ্জ্বল (৬৭) সুøিগ্ধ (৬৮) বাহুদ্বয় স্থূল ও আয়ত (৬৯) কর্ণদ্বয় সমান (৭০) কর্নেন্দ্রিয় তেজস্বী (৭১) ললাট সুপসন্ন উজ্জ্বল (৭২) বিস্তীর্ণ ও উচ্চ (৭৩) মস্তক পরিপূর্ণ (৭৪) কেশ ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ (৭৫) আশ্চর্য্যজনক (৭৬) ঈষৎ কুঞ্চিত (৭৭) নিদ্রা স্বাধীন (ইচ্ছাধীন) (৭৮) øিগ্ধ (রুক্ষ নহে) (৭৯) সুগন্ধ যুক্ত এবং (৮০) হস্ত পদ তলে শ্রীবৎস ও স্বস্থিকাদি বহুবিধ চিহ্নাঙ্কিত ছিল।
চিত্রকরেরা প্রথমে রেখাচিত্র অংকন করে পরে বর্ণপূরণের দ্বারা চিত্রের সজীবতা ধর্ম আনয়ন কর্ েসেরূপ বর্ণপূরণের ন্যায় দেহ ও চরিত্র সৌন্দর্যের লক্ষণ সমূহকে অনুব্যঞ্জন লক্ষণ বলা হয়।

0 comments:


0 comments:

অন্ধকার জগতের বাসিন্দা


অন্ধকার জগতের বাসিন্দা
অন্ধকার বলতে আমরা সচরাচর বুঝে থাকি যেখানে একবিন্দু আলোর সন্ধান পাওয়া যায় না বা দেখা যায় না তাকে। কিন্তু আমাদের মনোজগতে যে অন্ধকার রয়েছে থাকে আমরা অন্ধকার বলিনা কিংবা মানতে নারাজ। কারন আমরা যেটা জানি বা বুঝি সেটাকে নিয়ে আস্ফালন করি, কিন্তু বুঝার বা জানার চেষ্টা করিনা যে, আমি যেটা জানি বা বুঝি তা কি আদৌ সত্য? সত্যকে ধারন করে অন্ধত্বকে দূরীভূত করাই হল প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। কারণ সত্য মানুষকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম এবং সত্য সব সময় সত্য আর অন্ধত্ব মানুষকে নিমজ্জ্বিত রাখে অন্ধকারে এবং সে চেষ্টায় রত থাকে যে কিভাবে আলোকে চেপে রাখবে। তাই বিশ্বের মধ্যে যত পন্ডিত  জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে আমাদের মাঝে স্মরনীয় হয়ে আছেন তারা সবাই অন্ধত্বকে বর্জন করেছেন। তারা সত্যকে অবলম্বন করেছেন বলেই আলোর সন্ধান পেয়েছেন এবং প্রজ্ঞা বা জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন আমরা যারা মানুষ হিসেবে আছি বা পরিচয় প্রদান করি আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব মানুষ হিসেবে আমি কতটুকু প্রজ্ঞা বা জ্ঞান অর্জন করেছি নাকি অন্ধকার জগতে নিজেকে নিমজ্জ্বিত রেখেছি। যদি প্রজ্ঞা বা জ্ঞান অর্জন না করি অন্ধকার জগতে নিজেকে নিমজ্জ্বিত রাখি তাহলে আমি প্রজ্ঞা বা জ্ঞান অর্জন করছিনা কেন এবং আলোর সন্ধান করছিনা কেন? তাহলে আমরা কি অন্ধকার জগতের বাসিন্দা ! এভাবেই কি আমাদের জীবন অন্ধকারে ঢেকে যাবে, যদি তাই হয় তাহলে আমি মানুষ কেন। মানুষ হয়ে আমাদের করণীয় কি এইটুকু চিন্তা চেতনা যদি আমাদের মাঝে না আসে তাহলে আমাদেরকে একদিন দেখতে হবে তিলে তিলে গড়া যে সমাজ সে সমাজ চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেছে, তিলে তিলে গড়া যে সদ্ধর্ম তা একদিন মিথ্যার চাদরে ঢেকে যাবে। সত্য এবং আলোকবর্তিকা যেটুকু বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে হয়ত একদিন দেখবো তাও বিলীন হয়ে গেছে অতল সমুদ্রে। এর একমাত্র কারণ বা দায় আমাদের সচেতনতার অভাব। এই সচেতনতার অভাবের কারনে আমাদের প্রকৃত জ্ঞান অর্জন থেকে আমরা বঞ্চিত, আলোর সন্ধান থেকে বিরত। এই সুযোগ পেয়ে সুযোগ সন্ধানীরা আমাদের পিছু ছাড়ছে না এবং ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখেছে। সম্যক পথ, সত্য পথ অনুসন্ধান করার অভ্যাস আমাদের নেই বলে কিংবা যেটা জানছি সে সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারনা নেই বলে আজ আমরা অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়ে বসবাস করছি। আমরা বুঝতে চেষ্টা করিনা যে, আমরা যে অন্ধত্ব বরণ করে পথ হাঁটছি তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ এবং তারা যখন একদিন সত্যকে জানতে পারবে পূর্বেই উল্লেখ করেছি সত্য সব সময় সত্য, সে সত্যকে অবলম্বন করে আলোর সন্ধান বাড়বে তখন কিন্তু আজকে যারা সত্যকে মিথ্যার চাদরে ঢেকে রাখার চেষ্টায় রত এবং অন্ধত্ব বরণ করে দিন কাটাচ্ছে তাদেরকে ধিক্কার দিবে এবং তাদেরকে স্মরণ করা দূরে থাক তাদের নাম ও মুখে আনবে না (যদি আনে ঘৃণার মাধ্যমে স্মরণ করবে) বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমান সময়ে আমরা এমন একটি সময় পার করছি যে সময়ে আলোর সন্ধান করার কথা, প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করার কথা সদ্ধর্মকে  সম্যকভাবে জানার কথা সে সব কিছু বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার দিকে ধাবিত হচ্ছি, অন্ধত্ব বরণ করছি। পরিশেষে সকলের প্রতি মৈত্রীময় আহ্বান আসুন আমরা সত্যকে অবলম্বন করি, আলোর সন্ধান করি এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত সদ্ধর্মকে জানার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের জীবন, পরিবার তথা সমাজ হবে সুন্দর। আর তা না হলে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়ে বসবাস করতে হবে।

লেখক: সুমনানন্দ ভিক্ষু
অধ্যক্ষ কাঁঠাল ভাঙ্গা সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহার
হোয়ারাপাড়া
অর্থসম্পাদক- পূর্বগুজরা বৌদ্ধ ভিক্ষু সম্মিলনী

0 comments: