বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক
বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক
প্রথম কর্ম বিপাক : বুদ্ধের প্রথম কর্ম বিপাক হল বোধিলাভের জন্যে ছয় বৎসর কঠোর দুঃখ চর্যা। গৃহত্যাগের পর সেকি জীবনপণ তপস্যা, যা কোনকালে কোন রাজপুত্র এরূপ কষ্ট স্বীকার করেছেন বলে মনে হয় না। মানব-দুঃখের অন্তসাধনের কথা আবিষ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে একজন রাজপুত্র যেভাবে দুঃখ কষ্ট অকাতরে ভোগ করেছেন, তা যেমনি বর্ণানাতীত তেমনি লোমহর্ষক। দিবারাত আহার যা করবেন তা যৎ সামান্য। প্রথমত দিনে কোনদিন একবেলা কিংবা দু’চার দিনে একবেলা পরে সপ্তাহ অন্তর এমন কি অর্দ্ধমাস অন্তর সংগৃহীত দু’এক গ্রাস অন্ন আহার করতেন। কোন সময় শাক তৃণ বা ভূ-পাতিত ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করেছেন। পাংশুকুর বস্ত্র বা শবাচ্ছাদন অথবা মশান লব্ধ বস্ত্র কিংবা গাছের বল্কল অথবা মৃগচর্ম ধারণ করেছেন। কেশ-শ্মশ্র“ মুণ্ডণের তা তো কথাই উঠে না। অর্ধাহারে অনাহারে, কন্টক শয্যায় শয়ন উর্ধ্ববাহু ও উৎকুটিক আসনে দিনের পর দিন তপস্যা রোমাঞ্চকর বৈ কি? ধূলাবালিতে কোন সময় দেহ ঢাকা পড়ে যেত কিন্তু হাত দিয়ে পরিষ্কার করা যে নিয়ম বিরুদ্ধ। স্মৃতিমান হয়ে সাবধানে চলাফেরা করতেন যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীও পায়ের নীচে পড়ে পিষ্ট না হয়। সর্বসাধারণের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যে গভীর অরণ্যে আত্মগোপন করে থাকতেন। বছরের পর বছর অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অনাবৃত দেহে কখনও অরণ্যে শ্মশানে কৃচ্ছসাধনের ফলে দেহ হয় জীর্ণ শীর্ণ বেড়িয়ে পড়ে হাড়-পাঁজরা, চক্ষু হয় কোটরগত। পেটে-পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল কোটরগত। পেটে পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল। উত্থান শক্তি রহিত হয়। এরূপ কঠোর তপশ্চর্যায়ও স্বীয় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় তিনি সে পথ পরিত্যাগ করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন। এরই ফলশ্র“তিতে শুভ বৈশাখী পুর্ণিমায় বোধিরূপ মহাজ্ঞান লাভে তিনি জয়যুক্ত হন। অতীতের কর্ম : অতীতে কাশ্যপ বুদ্ধের সময়ে আমি এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, নাম ছিল জ্যোতিপাল। আমার এক বন্ধু ছিল তার নাম ঘটিকার কুম্ভকার। যিনি কাশ্যপ বুদ্ধের একনিষ্ঠ উপাসক এবং শীল সমাধি প্রজ্ঞায় অধিষ্ঠিত হয়ে অনাগামী মার্গফল প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন বন্ধু জ্যোতিপাল, জগতে বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন বুদ্ধেরা মহাজ্ঞানী বিমুক্ত পুরুষ, তাঁরা সদ্ধর্মের বাণী প্রচার করে মানুষকে নির্বাণের সন্ধান দেন। তিনি নয়টি গুণের অধিকারী। চলুন একসময় তাঁর কাছ থেকে ধর্মবাণী শুনে মুক্তির সন্ধান পেতে পারেন। মাত্র ছয় দিনের কঠোর সাধনায় তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন। এ কথা শুনে জ্যোতিপাল বললেন তাই নাকি? বুদ্ধ হওয়া কি এতো সহজ ব্যাপার! মাত্র ছয় দিনের সাধনায় বুদ্ধ হওয়া যায়। ছয়দিনের সাধনায় যদি তা লাভ করা যায় তবে প্রস্তুত। তাঁর নিকট আমি যাব না, তুমি যাও। এভাবে বুদ্ধকে তিরস্কারের দরুণ আমাকে ছয় বছর নিস্ফল কষ্টকর সাধনা করতে হয়েছে। এছাড়া জন্মে জন্মে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে বুদ্ধকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্যে। এটিই বুদ্ধ তথাগতের দ্বাদশ কর্ম বিপাকের প্রথম কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম বিপাক : বুদ্ধের জনপ্রিয়তায় অন্য তীর্থিকগণের সম্মান ও লাভ সৎকার বহুলাংশে কমে যায়। এ জন্যে তাঁরা বুদ্ধের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে চিঞ্চা মানবিকা নামের এক সুন্দরী রমণীকে অর্থ দিয়ে প্রলোভিত করেন। তাকে বলা হয় মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পর জেতবন বিহারের দিকে যেতে এবং বিহারের সমীপে কোন একটি বাড়িতে রাত কাটাতে। কেহ জিজ্ঞেস করলে চিঞ্চা বলতো জেতবন বিহারে বুদ্ধের কাছে যাচ্ছি। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে চলে আসার সময় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো জেতবন বিহার থেকে আসছি। এভাবে নয়-দশ মাস কাটানোর পর একদিন এ দুশ্চরিত্রা পেটে কাষ্ঠ বেঁধে গর্ভবতীর ছদ্মবেশে বুদ্ধের ধর্মসভায় গিয়ে বলল হে মহান ধর্মবেত্তা। ধর্মোপদেশ দিতে তোমাকে তো চমৎকার দেখাচ্ছে। আমি যে তোমার কারণে গর্ভবতী হয়েছি। এর জন্যে কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছো? তুমি শুধু আমার শয্যাসঙ্গী হতে জান, কিন্তু একটা গর্ভবতী মহিলার দেখাশুনা কিভাবে করতে হয় তা জাননা। কিছুক্ষণের জন্যে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম দেশনা বন্ধ রাখলেন। এবং এরূপ জঘন্য অপবাদ শান্ত সৌম্যভাবে সহ্য করে বললেন “বোন” তুমি যা বলছ তা কতটুকু সত্য তা তোমার কাছেও জানা এবং আমার কাছেও জানা। বুদ্ধের বোন সম্ভোধনে এবং শান্ত সৌম্য ব্যবহারে চিঞ্চা খুবই লজ্জাবোধ করল। কারণ সে বুদ্ধ থেকে এরূপ শান্ত ব্যবহার আশা করেনি। দেবরাজ ইন্দ্রের আসন উত্তপ্ত হল, দেবরাজ দুইজন দেবপুত্রকে পাটালেন। তারা দৈবক্রমে চিঞ্চার কাশি উৎপন্ন করলেন। কাশি আসার কারণে পেটের বাঁধন ছিঁড়ে যায় এবং কাষ্ঠসমূহ পড়ে যায়। এতে তার মিথ্যা দোষারূপ সবাই বুঝতে পারে। তৎক্ষনাৎ তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বুদ্ধের ধর্মসভা থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু বুদ্ধের প্রতি এরূপ জঘন্য অপবাদের কারণে চিঞ্চার মহাপাপে মাটি দু’ভাগ হয়ে সে অতলে তলে যায়। সে অবীচি নরকে পতিত হয়। এরূপ ঘৃণ্য অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীতে একসময়ে আমি বারানসীতে গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করি। আমার ছিল নেশাপানের অভ্যাস। একদিন নেশা খেয়ে এক অর্হৎ ভিক্ষুকে ভীষণভাবে গালিগালাজ করি। অর্হৎ অর্হৎ বলে কতো ভাণ করবে। দুঃশীল লোক কোথাকার! ভন্ডামি করার আর জায়গা পাওনি। এভাবে একজন শীলবান মার্গলাভী অর্হৎকে মিথ্যা অপবাদের কারণে আমি বহুবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এরপরও বুদ্ধাবস্থায় এই পাপের ফলে এরূপ ঘৃণাকর পরিণতির সম্মুখীন হই। এটি বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক : অন্য সম্প্রদায়ের তীর্থিকেরা এক সময় এক পরিব্রাজকের সুন্দরী মেয়েকে নিয়োগ করলেন। এই সুন্দরী সকলকে বলতো গৌতম বুদ্ধকে তোমরা যাই বল না কেন, তিনি আমার স্বামী। একথা শুনে কেহ কেহ বিশ্বাস করত যে এই সুন্দরীর সাথে গৌতম বুদ্ধের গোপণ প্রণয় আছে। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ কি? কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে পারমী পূরণের সময় আমি মুনালী নামে গৃহী ছিলাম। তখন ছিল আমার মদ্যপানের অভ্যাস। একদিন মদ্যপান করে মাতাল হয়ে সুরভি নামক এক পচ্চেক বুদ্ধকে নিন্দা করেছিলাম। মণ্ডিত মস্তক, দুঃশীল অপদার্থ ও কর্মবিমুখ বলে তাঁকে তিরস্কার করি। এ নিন্দার পাপের ফলে ঐ সুন্দরী রমণী কর্তৃক আমি মিথ্যা অপবাদের শিকার হই। এটিই হল বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক : তীর্থিকেরা এ সুন্দরী রমণীকে একদিন হত্যা করে জেতবন বিহার সংলগ্ন এক ঝোপের মধ্যে লুকায়ে রাখে। হত্যার খবর রাজাকে বলা হলে রাজ-কর্মচারী কর্তৃক অনুসন্ধান কার্য চালানো হয় এবং রমণীকে জেতবনের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে তথাগত বুদ্ধ বা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি জনসাধারণের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে বুদ্ধত্ব লাভের উদ্দেশ্যে পারমী পূর্ণ করার সময় আমি এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে ধন দৌলতের অসাড়তা উপলব্ধি করে আমি ঋষি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করি এবং সাধনায় রত হই। কিন্তু কোন উন্নতি লাভ করতে পারিনি। আমার অনতি দূরে আর একজন ঋষি বাস করতেন। তিনি একদিন কোথা থেকে আকাশ মার্গে এসে হাজির হন। তাঁর এ ঋদ্ধি শক্তিতে আমার ঈর্ষাভাব জাগ্রত হয়। আমি তাঁকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করি। একজন সত্যিকার শীলবান ঋদ্ধি ও ধ্যানবল সম্পন্ন ঋষিকে অযথা তিরষ্কার করার অকুশলের কারণে আমাকে এরূপ মিথ্যা অপবাদের ফলভোগ করতে হয়। এটি বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক : রাজগৃহের গৃধ্রকুট পর্বতে এক সময় ভগবান বুদ্ধ অবস্থান করতেন। তিনি একদিন ভিক্ষান্নে গৃধ্রকূটের নীচ দিয়ে যাবার কালে দেবদত্ত ঐ পর্বতের উপর থেকে প্রকান্ড এক প্রস্তর খন্ড বুদ্ধকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারেন। শিলাখণ্ডটি পর্বত গাত্রে বাঁধা পেয়ে ভেঙ্গে যায় এবং ছোট্ট একটি টুকরা বুদ্ধের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গলে পড়ে রক্তপাত ঘটায়। এ রক্ত পাতের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন- কোন এক অতীত জন্মে আমার ছিল এক ছোট বৈমাত্রেয় ভাই। আমাদের জীবন ধারণের মত জায়গা-জমি ও অর্থ-বিত্ত ছিল। যৌবনে বিবাহ করার পর বেশ কিছুকাল গত হলে আমার স্ত্রী আমাকে বলতো তোমার ছোট ভাই তোমাদের পৈতৃক অর্ধেক অংশের দাবীদার। কেহ না জানে মত তাকে মেরে ফেল্লে আমরা তো পুরো অংশ ভোগ করতে পারব। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের দিন সুখেই কেটে যাবে। আর কোন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। কিন্তু আমি কোন সময় আমার পত্মীর কথায় কর্ণপাত করিনি। কিন্তু যখন একই কথা বার বার শুনি, তখন একদিন আমার মনেও পরিবর্তন আসে। আমি আমার ছোট ভাইকে এক সময় গভীর জঙ্গলে নিয়ে প্রকান্ড একটা পাথর চাপা দিয়ে হত্যা করি। সে অপকর্মের ফল আমাকে নরকে গিয়ে বহুবার ভোগ করতে হয়। এরপরও এ অকুশলের অবশিষ্টাংশ এ অন্তিম জীবনে বুদ্ধ হয়েও ভোগ করতে হয়েছে। এটি বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক : ঐ প্রস্তর খন্ডের আঘাতে বৃদ্ধাঙ্গুলে রক্ত জমাট হয়ে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন ভগবান বুদ্ধ। এ অসহ্য ব্যথা প্রাপ্তির পূর্ব কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন- অতীত জন্মে একবার ছোট ছেলে থাকা অবস্থায় খেলা করবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দর্শন পায় মণ্ডিত মস্তক ও গেরুয়া বসনের এই সন্ন্যাসী দেখে একটু দুষ্টুমির ভাব মনে জাগে। হঠাৎ একটি ঢেলা কুড়িয়ে পচ্ছেক বুদ্ধের দিকে ছুড়ে মারি। তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন। এ পাপ কর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি এবং দুঃখ- কষ্ট ভোগ করি। এর বিপাক সম্পূর্ণরূপে ক্ষয় না হয়ে আমাকে পুনঃ কষ্ট দিচ্ছে। এটি বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের সপ্তম কর্ম বিপাক : মগধরাজ অজাতশত্র“র সহায়তায় বুদ্ধের মামাত ভাই ভিক্ষু দেবদত্ত তথাগত বুদ্ধকে হত্যা করার বিবিধ প্রচেষ্টা চালান। বহু চেষ্টার পর হত্যা করতে না পেরে এক সময় রাজার সেরা হস্তী নলগিরিকে দশমন মদ পান করায়ে বুদ্ধের চলার পথে ছেড়ে দেয়া হয়। বুদ্ধ ভিক্ষান্নে যাবার কালে ঐ মদমত্ত হস্তী রাস্তার দুকূল ভেঙ্গে সম্মুখের পানে আসতে দেখে সবাই দূরে পালিয়ে যেতে থাকে। মাতাল হস্তী দ্বারা বুদ্ধকে পদদলিত করে হত্যা করাই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু জন্ম জন্মান্তরের পারমীর প্রভাবে বুদ্ধ করুণা ও মৈত্রী চিত্তে ডান হাত উর্ধেŸ তোলার সাথে সাথে হস্তী শান্ত হয়ে বুদ্ধের পদতলে লুঠিয়ে পড়ে। এ অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। হস্তী কর্তৃক বিতাড়িত হবার কারণ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেন বহু অতীতে আমি হাতির মাহুত ছিলাম। এক সময় হাতির পিঠে চড়ে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দেখা পাই। হঠাৎ আমার মনে দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়। পচ্চেক বুদ্ধকে পেছন দিকে ভয় প্রদর্শনের জন্যে অগ্রসর হই। যেহেতু পচ্চেক বুদ্ধেরা নির্বাণ লাভী, তাঁরা ডর-ভয় শূন্য, আসক্তি শূন্য ও প্রপঞ্চশূন্য। পরে এ দুষ্কর্মের জন্যে আমি তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই তা সত্ত্বেও আমি অনেকবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এখনও এ পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি বুদ্ধের সপ্তম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক : দেবদত্ত কর্তৃক পাথরের আঘাতে পায়ে যে রক্ত জমাট ও কালো হয়ে বুদ্ধ কষ্ট পেয়েছেন অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন হয়েও তিনি ব্যথা সারাতে পারেননি রাজ বৈদ্য জীবকের অস্ত্রোপচারের দ্বারা তিনি সেরে উঠেন। তবে ছুরি দিয়ে কাটতে ব্যথা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেনÑ আমি অতীতে এক জন্মে রাজা ছিলাম। তখন মদ খাওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়। একদিন অতিরিক্ত মদপান করে আমার নিজ তলোয়ার দিয়ে আমার এক কর্মচারীকে আমি হত্যা করি। এ হত্যার পাপে আমি নরকে গমন করে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করি। জন্মে বহুবার নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তারপরও এই হত্যা জনিত পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে এই অন্তিম জন্মে। এটি বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক : মাঝে মাঝে তথাগত বুদ্ধ মাথা ব্যথা বা শিরঃ পীড়ায় কষ্টভোগ করতেন। এই ব্যথার অতীত কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন -বোধিসত্ব অবস্থায় পারমী পূরণকালে আমি একজন্মে জেলে পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতামাতা ছিল মৎস্যজীবি। মাছ ধরে ও বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করত। প্রায় সময় মাছ ধরে এনে মাছের মাথায় আঘাত করে মেরে রশিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করত। মাছের মাথায় আঘাত দেয়ার দৃশ্যে আমি আনন্দ লাভ করতাম। বলতাম আহা কি মজা এভাবে হত্যা কাজে আনন্দের কারণে আমি জন্মে জন্মে বহু কষ্ট ভোগ করেছি এবং বর্তমানেও শিরঃ বেদনায় মাঝে মধ্যে কষ্ট পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের দশম বিপাক : বৈরঞ্জা (কনোজ ও মথুরার মাঠ) নামক স্থানে তথাগত দ্বাদশ বর্ষাবাস যাপন করেন। তথায় ভিক্ষান্নে বের হলে নিুমানের খস্খসে চালের ভাত তিনি লাভ করতেন। শিষ্য কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে বুদ্ধ এর কারণ স্বরূপ বলেন অতীত এক জন্মে আমি গরীব গৃহে জন্মগ্রহণ করি। একদিন এক গৃহে আমি কতগুলো ভিক্ষুকে আহার করতে দেখি। মুন্ডিত মস্তক ভিক্ষু দেখে আমি তাঁদেরকে নানা অপবাদে জর্জরিত করি। আমি বলি এসব অপদার্থকে কেন খাওয়ানো হচ্ছে, যাদের ব্যবসা বাণিজ্য নেই, নেই কোন কাজ কর্ম? পরের শ্রমলব্ধ আহার খেতে তাঁদের লজ্জা হয় না? তাঁদেরকে ভাল ভাল খাবার না দিয়ে নিকৃষ্ট মানের অন্নব্যঞ্জন দেয়া উচিত। পাপকর্মের বিপাক আমি জন্মে জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মে বুদ্ধ হয়েও এর বাকী ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি হল তথাগত বুদ্ধের দশম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক : কোন কোন সময় বুদ্ধ ভগবানের কোমড় ব্যথা হত। এই কোমড় ব্যাথার অতীত কারণ ব্যাখ্যা করতে বুদ্ধ বলেন অতীত জন্মে আমি মুষ্টিযোদ্ধা ছিলাম। প্রতিযোগীতার এক পর্যায়ে আমি আমার বিপক্ষ মুষ্টিযোদ্ধার কোমড় ভেঙ্গে দিই। এই কৃর্তকর্মের পাপভোগ আমি বহু জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মেও ভোগ করে আসছি। এটি হল বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক ।
বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক : বুদ্ধের শরীর ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি হাতীর বল সম্পন্ন। এরপরও পরিনির্বাণের পূর্বে চুন্দের গৃহে শূকর মদ্দবসহ অন্নব্যঞ্জন ভোজন করে বুদ্ধের রক্ত বিকার হয়। এই আহারই বুদ্ধের শেষ আহার। এ রোগভোগের পূর্ব কারণ প্রদর্শন করতে বুদ্ধ বলেন সুদূর অতীতে পারমী পূর্ণ করার সময়ে এক জন্মে আমি চিকিৎসক ছিলাম। সে সময় এক শ্রেষ্ঠী পুত্রের চিকিৎসা করে তাকে ভাল করে তুলি। ভাল হবার পর পূর্ব চুক্তিমতে আমাকে অর্থ প্রদান না করায় আমি তাকে পুনঃ একটি ঔষধ খেতে দেই। এ ঔষধ খেয়ে তার রক্ত বমি ও রক্ত বিকার হয় এ অপকর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি। নরক যন্ত্রণা ভোগের পরও এর বিপাক দান নিঃশেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার পরিনির্বাণের পূর্বে শেষবারের মত রক্ত আমাশায় কষ্ঠ পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম-বিপাক।
0 comments: