বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক

                               বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক


প্রথম কর্ম বিপাক : বুদ্ধের প্রথম কর্ম বিপাক হল বোধিলাভের জন্যে ছয় বৎসর কঠোর দুঃখ চর্যা। গৃহত্যাগের পর সেকি জীবনপণ তপস্যা, যা কোনকালে কোন রাজপুত্র এরূপ কষ্ট স্বীকার করেছেন বলে মনে হয় না। মানব-দুঃখের অন্তসাধনের কথা আবিষ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে একজন রাজপুত্র যেভাবে দুঃখ কষ্ট অকাতরে ভোগ করেছেন, তা যেমনি বর্ণানাতীত তেমনি লোমহর্ষক। দিবারাত আহার যা করবেন তা যৎ সামান্য। প্রথমত দিনে কোনদিন একবেলা কিংবা দু’চার দিনে একবেলা পরে সপ্তাহ অন্তর এমন কি অর্দ্ধমাস অন্তর সংগৃহীত দু’এক গ্রাস অন্ন আহার করতেন। কোন সময় শাক তৃণ বা ভূ-পাতিত ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করেছেন। পাংশুকুর বস্ত্র বা শবাচ্ছাদন অথবা মশান লব্ধ বস্ত্র কিংবা গাছের বল্কল অথবা মৃগচর্ম ধারণ করেছেন। কেশ-শ্মশ্র“ মুণ্ডণের তা তো কথাই উঠে না। অর্ধাহারে অনাহারে, কন্টক শয্যায় শয়ন উর্ধ্ববাহু ও উৎকুটিক আসনে দিনের পর দিন তপস্যা রোমাঞ্চকর বৈ কি? ধূলাবালিতে কোন সময় দেহ ঢাকা পড়ে যেত কিন্তু হাত দিয়ে পরিষ্কার করা যে নিয়ম বিরুদ্ধ। স্মৃতিমান হয়ে সাবধানে চলাফেরা করতেন যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীও পায়ের নীচে পড়ে পিষ্ট না হয়। সর্বসাধারণের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যে গভীর অরণ্যে আত্মগোপন করে থাকতেন। বছরের পর বছর অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অনাবৃত দেহে কখনও অরণ্যে শ্মশানে কৃচ্ছসাধনের ফলে দেহ হয় জীর্ণ শীর্ণ বেড়িয়ে পড়ে হাড়-পাঁজরা, চক্ষু হয় কোটরগত। পেটে-পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল কোটরগত। পেটে পিঠে লেগে যেন একটি চর্মাবৃহ কংকাল। উত্থান শক্তি রহিত হয়। এরূপ কঠোর তপশ্চর্যায়ও স্বীয় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় তিনি সে পথ পরিত্যাগ করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন। এরই ফলশ্র“তিতে শুভ বৈশাখী পুর্ণিমায় বোধিরূপ মহাজ্ঞান লাভে তিনি জয়যুক্ত হন। অতীতের কর্ম : অতীতে কাশ্যপ বুদ্ধের সময়ে আমি এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, নাম ছিল জ্যোতিপাল। আমার এক বন্ধু ছিল তার নাম ঘটিকার কুম্ভকার। যিনি কাশ্যপ বুদ্ধের একনিষ্ঠ উপাসক এবং শীল সমাধি প্রজ্ঞায় অধিষ্ঠিত হয়ে অনাগামী মার্গফল প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন বন্ধু জ্যোতিপাল, জগতে বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন বুদ্ধেরা মহাজ্ঞানী বিমুক্ত পুরুষ, তাঁরা সদ্ধর্মের বাণী প্রচার করে মানুষকে নির্বাণের সন্ধান দেন। তিনি নয়টি গুণের অধিকারী। চলুন একসময় তাঁর কাছ থেকে ধর্মবাণী শুনে মুক্তির সন্ধান পেতে পারেন। মাত্র ছয় দিনের কঠোর সাধনায় তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছেন। এ কথা শুনে জ্যোতিপাল বললেন তাই নাকি? বুদ্ধ হওয়া কি এতো সহজ ব্যাপার! মাত্র ছয় দিনের সাধনায় বুদ্ধ হওয়া যায়। ছয়দিনের সাধনায় যদি তা লাভ করা যায় তবে প্রস্তুত। তাঁর নিকট আমি যাব না, তুমি যাও। এভাবে বুদ্ধকে তিরস্কারের দরুণ আমাকে ছয় বছর নিস্ফল কষ্টকর সাধনা করতে হয়েছে। এছাড়া জন্মে জন্মে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে বুদ্ধকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্যে। এটিই বুদ্ধ তথাগতের দ্বাদশ কর্ম বিপাকের প্রথম কর্ম বিপাক।


বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম বিপাক : বুদ্ধের জনপ্রিয়তায় অন্য তীর্থিকগণের সম্মান ও লাভ সৎকার বহুলাংশে কমে যায়। এ জন্যে তাঁরা বুদ্ধের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে চিঞ্চা মানবিকা নামের এক সুন্দরী রমণীকে অর্থ দিয়ে প্রলোভিত করেন। তাকে বলা হয় মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পর জেতবন বিহারের দিকে যেতে এবং বিহারের সমীপে কোন একটি বাড়িতে রাত কাটাতে। কেহ জিজ্ঞেস করলে চিঞ্চা বলতো জেতবন বিহারে বুদ্ধের কাছে যাচ্ছি। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে চলে আসার সময় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো জেতবন বিহার থেকে আসছি। এভাবে নয়-দশ মাস কাটানোর পর একদিন এ দুশ্চরিত্রা পেটে কাষ্ঠ বেঁধে গর্ভবতীর ছদ্মবেশে বুদ্ধের ধর্মসভায় গিয়ে বলল হে মহান ধর্মবেত্তা। ধর্মোপদেশ দিতে তোমাকে তো চমৎকার দেখাচ্ছে। আমি যে তোমার কারণে গর্ভবতী হয়েছি। এর জন্যে কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছো? তুমি শুধু আমার শয্যাসঙ্গী হতে জান, কিন্তু একটা গর্ভবতী মহিলার দেখাশুনা কিভাবে করতে হয় তা জাননা। কিছুক্ষণের জন্যে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম দেশনা বন্ধ রাখলেন। এবং এরূপ জঘন্য অপবাদ শান্ত সৌম্যভাবে সহ্য করে বললেন “বোন” তুমি যা বলছ তা কতটুকু সত্য তা তোমার কাছেও জানা এবং আমার কাছেও জানা। বুদ্ধের বোন সম্ভোধনে এবং শান্ত সৌম্য ব্যবহারে চিঞ্চা খুবই লজ্জাবোধ করল। কারণ সে বুদ্ধ থেকে এরূপ শান্ত ব্যবহার আশা করেনি। দেবরাজ ইন্দ্রের আসন উত্তপ্ত হল, দেবরাজ দুইজন দেবপুত্রকে পাটালেন। তারা দৈবক্রমে চিঞ্চার কাশি উৎপন্ন করলেন। কাশি আসার কারণে পেটের বাঁধন ছিঁড়ে যায় এবং কাষ্ঠসমূহ পড়ে যায়। এতে তার মিথ্যা দোষারূপ সবাই বুঝতে পারে। তৎক্ষনাৎ তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বুদ্ধের ধর্মসভা থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু বুদ্ধের প্রতি এরূপ জঘন্য অপবাদের কারণে চিঞ্চার মহাপাপে মাটি দু’ভাগ হয়ে সে অতলে তলে যায়। সে অবীচি নরকে পতিত হয়। এরূপ ঘৃণ্য অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীতে একসময়ে আমি বারানসীতে গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করি। আমার ছিল নেশাপানের অভ্যাস। একদিন নেশা খেয়ে এক অর্হৎ ভিক্ষুকে ভীষণভাবে গালিগালাজ করি। অর্হৎ অর্হৎ বলে কতো ভাণ করবে। দুঃশীল লোক কোথাকার! ভন্ডামি করার আর জায়গা পাওনি। এভাবে একজন শীলবান মার্গলাভী অর্হৎকে মিথ্যা অপবাদের কারণে আমি বহুবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এরপরও বুদ্ধাবস্থায় এই পাপের ফলে এরূপ ঘৃণাকর পরিণতির সম্মুখীন হই। এটি বুদ্ধের দ্বিতীয় কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক : অন্য সম্প্রদায়ের তীর্থিকেরা এক সময় এক পরিব্রাজকের সুন্দরী মেয়েকে নিয়োগ করলেন। এই সুন্দরী সকলকে বলতো গৌতম বুদ্ধকে তোমরা যাই বল না কেন, তিনি আমার স্বামী। একথা শুনে কেহ কেহ বিশ্বাস করত যে এই সুন্দরীর সাথে গৌতম বুদ্ধের গোপণ প্রণয় আছে। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ কি? কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে পারমী পূরণের সময় আমি মুনালী নামে গৃহী ছিলাম। তখন ছিল আমার মদ্যপানের অভ্যাস। একদিন মদ্যপান করে মাতাল হয়ে সুরভি নামক এক পচ্চেক বুদ্ধকে নিন্দা করেছিলাম। মণ্ডিত মস্তক, দুঃশীল অপদার্থ ও কর্মবিমুখ বলে তাঁকে তিরস্কার করি। এ নিন্দার পাপের ফলে ঐ সুন্দরী রমণী কর্তৃক আমি মিথ্যা অপবাদের শিকার হই। এটিই হল বুদ্ধের তৃতীয় কর্ম বিপাক। 
বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক : তীর্থিকেরা এ সুন্দরী রমণীকে একদিন হত্যা করে জেতবন বিহার সংলগ্ন এক ঝোপের মধ্যে লুকায়ে রাখে। হত্যার খবর রাজাকে বলা হলে রাজ-কর্মচারী কর্তৃক অনুসন্ধান কার্য চালানো হয় এবং রমণীকে জেতবনের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে তথাগত বুদ্ধ বা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি জনসাধারণের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। এ মিথ্যা অপবাদের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন অতীত অতীত জন্মে বুদ্ধত্ব লাভের উদ্দেশ্যে পারমী পূর্ণ করার সময় আমি এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে ধন দৌলতের অসাড়তা উপলব্ধি করে আমি ঋষি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করি এবং সাধনায় রত হই। কিন্তু কোন উন্নতি লাভ করতে পারিনি। আমার অনতি দূরে আর একজন ঋষি বাস করতেন। তিনি একদিন কোথা থেকে আকাশ মার্গে এসে হাজির হন। তাঁর এ ঋদ্ধি শক্তিতে আমার ঈর্ষাভাব জাগ্রত হয়। আমি তাঁকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করি। একজন সত্যিকার শীলবান ঋদ্ধি ও ধ্যানবল সম্পন্ন ঋষিকে অযথা তিরষ্কার করার অকুশলের কারণে আমাকে এরূপ মিথ্যা অপবাদের ফলভোগ করতে হয়। এটি বুদ্ধের চতুর্থ কর্ম বিপাক।


বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক : রাজগৃহের গৃধ্রকুট পর্বতে এক সময় ভগবান বুদ্ধ অবস্থান করতেন। তিনি একদিন ভিক্ষান্নে গৃধ্রকূটের নীচ দিয়ে যাবার কালে দেবদত্ত ঐ পর্বতের উপর থেকে প্রকান্ড এক প্রস্তর খন্ড বুদ্ধকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারেন। শিলাখণ্ডটি পর্বত গাত্রে বাঁধা পেয়ে ভেঙ্গে যায় এবং ছোট্ট একটি টুকরা বুদ্ধের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গলে পড়ে রক্তপাত ঘটায়। এ রক্ত পাতের কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন- কোন এক অতীত জন্মে আমার ছিল এক ছোট বৈমাত্রেয় ভাই। আমাদের জীবন ধারণের মত জায়গা-জমি ও অর্থ-বিত্ত ছিল। যৌবনে বিবাহ করার পর বেশ কিছুকাল গত হলে আমার স্ত্রী আমাকে বলতো তোমার ছোট ভাই তোমাদের পৈতৃক অর্ধেক অংশের দাবীদার। কেহ না জানে মত তাকে মেরে ফেল্লে আমরা তো পুরো অংশ ভোগ করতে পারব। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের দিন সুখেই কেটে যাবে। আর কোন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। কিন্তু আমি কোন সময় আমার পত্মীর কথায় কর্ণপাত করিনি। কিন্তু যখন একই কথা বার বার শুনি, তখন একদিন আমার মনেও পরিবর্তন আসে। আমি আমার ছোট ভাইকে এক সময় গভীর জঙ্গলে নিয়ে প্রকান্ড একটা পাথর চাপা দিয়ে হত্যা করি। সে অপকর্মের ফল আমাকে নরকে গিয়ে বহুবার ভোগ করতে হয়। এরপরও এ অকুশলের অবশিষ্টাংশ এ অন্তিম জীবনে বুদ্ধ হয়েও ভোগ করতে হয়েছে। এটি বুদ্ধের পঞ্চম কর্ম বিপাক। 
বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক : ঐ প্রস্তর খন্ডের আঘাতে বৃদ্ধাঙ্গুলে রক্ত জমাট হয়ে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন ভগবান বুদ্ধ। এ অসহ্য ব্যথা প্রাপ্তির পূর্ব কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেছেন- অতীত জন্মে একবার ছোট ছেলে থাকা অবস্থায় খেলা করবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দর্শন পায় মণ্ডিত মস্তক ও গেরুয়া বসনের এই সন্ন্যাসী দেখে একটু দুষ্টুমির ভাব মনে জাগে। হঠাৎ একটি ঢেলা কুড়িয়ে পচ্ছেক বুদ্ধের দিকে ছুড়ে মারি। তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন। এ পাপ কর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি এবং দুঃখ- কষ্ট ভোগ করি। এর বিপাক সম্পূর্ণরূপে ক্ষয় না হয়ে আমাকে পুনঃ কষ্ট দিচ্ছে। এটি বুদ্ধের ষষ্ঠ কর্ম বিপাক।
বুদ্ধের সপ্তম কর্ম বিপাক : মগধরাজ অজাতশত্র“র সহায়তায় বুদ্ধের মামাত ভাই ভিক্ষু দেবদত্ত তথাগত বুদ্ধকে হত্যা করার বিবিধ প্রচেষ্টা চালান। বহু চেষ্টার পর হত্যা করতে না পেরে এক সময় রাজার সেরা হস্তী নলগিরিকে দশমন মদ পান করায়ে বুদ্ধের চলার পথে ছেড়ে দেয়া হয়। বুদ্ধ ভিক্ষান্নে যাবার কালে ঐ মদমত্ত হস্তী রাস্তার দুকূল ভেঙ্গে সম্মুখের পানে আসতে দেখে সবাই দূরে পালিয়ে যেতে থাকে। মাতাল হস্তী দ্বারা বুদ্ধকে পদদলিত করে হত্যা করাই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু জন্ম জন্মান্তরের পারমীর প্রভাবে বুদ্ধ করুণা ও মৈত্রী চিত্তে ডান হাত  উর্ধেŸ তোলার সাথে সাথে হস্তী শান্ত হয়ে বুদ্ধের পদতলে লুঠিয়ে পড়ে। এ অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। হস্তী কর্তৃক বিতাড়িত হবার কারণ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেন বহু অতীতে আমি হাতির মাহুত ছিলাম। এক সময় হাতির পিঠে চড়ে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এক পচ্চেক বুদ্ধের দেখা পাই। হঠাৎ আমার মনে দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়। পচ্চেক বুদ্ধকে পেছন দিকে ভয় প্রদর্শনের জন্যে অগ্রসর হই। যেহেতু পচ্চেক বুদ্ধেরা নির্বাণ লাভী, তাঁরা ডর-ভয় শূন্য, আসক্তি শূন্য ও প্রপঞ্চশূন্য। পরে এ দুষ্কর্মের জন্যে আমি তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই তা সত্ত্বেও আমি অনেকবার নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। এখনও এ পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি বুদ্ধের সপ্তম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক : দেবদত্ত কর্তৃক পাথরের আঘাতে পায়ে যে রক্ত জমাট ও কালো হয়ে বুদ্ধ কষ্ট পেয়েছেন অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন হয়েও তিনি ব্যথা সারাতে পারেননি রাজ বৈদ্য জীবকের অস্ত্রোপচারের দ্বারা তিনি সেরে উঠেন। তবে ছুরি দিয়ে কাটতে ব্যথা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেনÑ আমি অতীতে এক জন্মে রাজা ছিলাম। তখন মদ খাওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়। একদিন অতিরিক্ত মদপান করে আমার নিজ তলোয়ার দিয়ে আমার এক কর্মচারীকে আমি হত্যা করি। এ হত্যার পাপে আমি নরকে গমন করে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করি। জন্মে বহুবার নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তারপরও এই হত্যা জনিত পাপের ফলভোগ করতে হচ্ছে এই অন্তিম জন্মে। এটি বুদ্ধের অষ্টম কর্ম-বিপাক।
বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক : মাঝে মাঝে তথাগত বুদ্ধ মাথা ব্যথা বা শিরঃ পীড়ায় কষ্টভোগ করতেন। এই ব্যথার অতীত কারণ স্বরূপ বুদ্ধ বলেন -বোধিসত্ব অবস্থায় পারমী পূরণকালে আমি একজন্মে জেলে পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতামাতা ছিল মৎস্যজীবি। মাছ ধরে ও বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করত। প্রায় সময় মাছ ধরে এনে মাছের মাথায় আঘাত করে মেরে রশিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করত। মাছের মাথায় আঘাত দেয়ার দৃশ্যে আমি আনন্দ লাভ করতাম। বলতাম আহা কি মজা এভাবে হত্যা কাজে আনন্দের কারণে আমি জন্মে জন্মে বহু কষ্ট ভোগ করেছি এবং বর্তমানেও শিরঃ বেদনায় মাঝে মধ্যে কষ্ট পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের নবম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের দশম বিপাক : বৈরঞ্জা (কনোজ ও মথুরার মাঠ) নামক স্থানে তথাগত দ্বাদশ বর্ষাবাস যাপন করেন। তথায় ভিক্ষান্নে বের হলে নিুমানের খস্খসে চালের ভাত তিনি লাভ করতেন। শিষ্য কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে বুদ্ধ এর কারণ স্বরূপ বলেন অতীত এক জন্মে আমি গরীব গৃহে জন্মগ্রহণ করি। একদিন এক গৃহে আমি কতগুলো ভিক্ষুকে আহার করতে দেখি। মুন্ডিত মস্তক ভিক্ষু দেখে আমি তাঁদেরকে নানা অপবাদে জর্জরিত করি। আমি বলি এসব অপদার্থকে কেন খাওয়ানো হচ্ছে, যাদের ব্যবসা বাণিজ্য নেই, নেই কোন কাজ কর্ম? পরের শ্রমলব্ধ আহার খেতে তাঁদের লজ্জা হয় না? তাঁদেরকে ভাল ভাল খাবার না দিয়ে নিকৃষ্ট মানের অন্নব্যঞ্জন দেয়া উচিত। পাপকর্মের বিপাক আমি জন্মে জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মে বুদ্ধ হয়েও এর বাকী ফলভোগ করতে হচ্ছে। এটি হল তথাগত বুদ্ধের দশম কর্ম-বিপাক। 
বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক : কোন কোন সময় বুদ্ধ ভগবানের কোমড় ব্যথা হত। এই কোমড় ব্যাথার অতীত কারণ ব্যাখ্যা করতে বুদ্ধ বলেন অতীত জন্মে আমি মুষ্টিযোদ্ধা ছিলাম। প্রতিযোগীতার এক পর্যায়ে আমি আমার বিপক্ষ মুষ্টিযোদ্ধার কোমড় ভেঙ্গে দিই। এই কৃর্তকর্মের পাপভোগ আমি বহু জন্মে ভোগ করি এবং এই শেষ জন্মেও ভোগ করে আসছি। এটি হল বুদ্ধের একাদশ কর্ম-বিপাক । 


বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম বিপাক : বুদ্ধের শরীর ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি হাতীর বল সম্পন্ন। এরপরও পরিনির্বাণের পূর্বে চুন্দের গৃহে শূকর মদ্দবসহ অন্নব্যঞ্জন ভোজন করে বুদ্ধের রক্ত বিকার হয়। এই আহারই বুদ্ধের শেষ আহার। এ রোগভোগের পূর্ব কারণ প্রদর্শন করতে বুদ্ধ বলেন সুদূর অতীতে পারমী পূর্ণ করার সময়ে এক জন্মে আমি চিকিৎসক ছিলাম। সে সময় এক শ্রেষ্ঠী পুত্রের চিকিৎসা করে তাকে ভাল করে তুলি। ভাল হবার পর পূর্ব চুক্তিমতে আমাকে অর্থ প্রদান না করায় আমি তাকে পুনঃ একটি ঔষধ খেতে দেই। এ ঔষধ খেয়ে তার রক্ত বমি ও রক্ত বিকার হয় এ অপকর্মের ফলে আমি বহুবার নরকে গমন করি। নরক যন্ত্রণা ভোগের পরও এর বিপাক দান নিঃশেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার পরিনির্বাণের পূর্বে শেষবারের মত রক্ত আমাশায় কষ্ঠ পাই। এটি তথাগত বুদ্ধের দ্বাদশ কর্ম-বিপাক।

0 comments:

হাজার বছরের চর্যাপদ মুখস্ত করলেন ঢাবি ছাত্র জাকেরুল ইসলাম কায়েস

খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বাংলাভাষায় রচিত প্রথম গ্রন্থ চর্যাপদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা প্রায় দুঃসাধ্য কর্মটি করে দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের ছাত্র জাকেরুল ইসলাম কায়েস। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা। বাংলামেইল-ডট-কম
এ ব্যাপারে জাকেরুল ইসলাম কায়েস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকে চর্যাপদের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল। এক সময় চিন্তা করলাম এটি মুখস্ত করা যেতে পারে। সেখান থেকেই মুখস্ত করা। আসলে ইচ্ছে করলে মানুষ অনেক কিছুই পারে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চর্যাপদ মুখস্ত পরিবেশন করবেন বলে জানান তিনি।
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল আলম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি; ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এবং কবি, লেখক ও শিল্পী মো. আব্দুর রশিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রসিদ্ধ অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, চর্যাপদ মুখস্ত করা প্রকৃত পক্ষে কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু জাকেরুল তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এটি মুখস্ত করেছে। এটি তার মুখে শুনে মানুষ বুঝতে পারবে আমাদের ভাষা হাজার বছর আগে কেমন ছিল।
উল্লেখ্য, চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি না সে বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে সেটির অবসান হয়। এটি সৃজ্যমান বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা সংস্কৃতে পারদর্শী হলেও তারা তৎকালীন অপরিণত বাংলাতেই পদগুলো রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষার অদ্যাবধি আবিষ্কৃত আদিতম রূপ। হিন্দি, উড়িষ্যা বা মৈথিলি বিজ্ঞজনেরা এই ভাষায় নিজেদের পূর্বসুরিত্বের সন্ধান করলেও ভাষাবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফল বাংলা ভাষারই অনুকূল। এই ভাষা সম্প্রদায় বিশেষের সাধন-সংগীতের ভাষা বিধায় অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য; যদিও এতে উল্লিখিত ছন্দ ও রাগ-রাগিনী পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের পথনির্দেশিকারূপে কাজ করে।
সূত্র: বাংলামেইল-ডট-কম
সূত্র:  http://dhammainfo.com

0 comments:

“নির্বাণ”

                             “নির্বাণ”
২৬তম সংঘনায়ক দর্শনসাগর প্রিয়ানন্দ মহাথের
ভগবান গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত মতবাদ আমাদের কাছে বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত। সাধারণ ধর্ম বলতে যে সংজ্ঞা বা সংস্কার আমাদের মনকে অভিভূত করে এই মতবাদ আসলে ধর্ম নয়, ধর্ম থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পন্থা। প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ম অর্থে এই স্বভাব বা সংস্কার বিজ্ঞান বা অভিজ্ঞতা সৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সহয়তা করে মানুষ সমাজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে সাধারণত কোন সার্বভৌম শক্তির এখতিয়ার বলে মনে করা হয়। এই মতবাদ পৃথিবী সাধারণত একটি সার্বভৌম শক্তির অধীনে পরিচালিত বলে প্রচলিত ধর্ম সমূহ বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসে যে ধর্মগুলিকে সৃষ্টি করা হয় তা হচ্ছে স্বর্গলাভ। এই ধারণার পেছনে ভোগের প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল বলে ধারণা করা হয়। স্মৃতি আয়ুবোধে সাধারণত প্রাণী জগত পরিচালিত। তার জন্ম মৃত্যু কালসীমার স্তিমিত। এই সীমাকে অতিক্রম করে ভোগ সুখের পার্থিব জগতে স্থায়ী রূপ নেই। এই কারণে স্বর্গকে মানুষের লক্ষ্যে আনা হয়। প্রাণী জগৎ একত্রিশটি লোক সংস্কৃতিতে বিভক্ত। বিভাগগুলোর মধ্যে হচ্ছে, চারিটি অরূপ ব্রহ্ম, ষোল প্রকার রূপ ব্রহ্ম, সপ্তকাম সুগতি ভূমি, চারি অপায়। চারি অপায় বলতে নিরয়, প্রেত, তির্যক ও অসুর ভূমি, এই চারি অপায়ের ভিতর তির্যক ভূমি আমাদের দৃষ্টি সীমার ভেতর আছে। এই সম্পর্কে আমরা অতি নিকট থেকে অবগত হই অপর তিনটি প্রাণীর সংস্থা সাধারণের সৃষ্টির বাইরে। সপ্ত কাম সুগতির মধ্যে আমাদের মনুষ্যলোক একটি। অথবা মানুষেরা বিভক্ত একটি হচ্ছে পুরুষ অপরটি হচ্ছে নারী। এই দুই শক্তির সম্মিলিত শক্তিই সংসার নামে অভিহিত। এই দুই শক্তিকে কেন্দ্র করে সংসারে নানা অশান্তি এবং শান্তির ধারা  অবিরাম গতিতে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ চির চঞ্চল এবং গতি সম্পন্ন। স্থিতিশীলতার কোন চিহ্ন এতে নেই। এই পটভূমিকায় বিভিন্ন ধর্মের কল্পনা করা হয়। এই কল্পনার ভিতর বাস্তবের কোন অস্তিত্ব নেই। অপর ছয়টি কাম সুগতি দেবলোক নামে অভিহিত। এখানে ভোগ সুখের নিরাপত্তা আছে কিন্তু স্থায়ীত্ব গতিশীলতার কারণে এই ছয় কাম সুগতি জন্ম মৃত্যুর কালসীমায় সীষিত ষোল প্রকার রূপ ভূমি কাম সুখের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐখানে নর ও নারী রূপে কোন পৃথক সত্ত্বার অস্তিত্ব নেই। এই কারণে সম্পদের ও প্রযোজনীয়তা নেই। এই প্রাণী লোকের ধর্ম হচ্ছে মৈত্রী, করুণা,  মুদিতা ও উপেক্ষা। সর্ব জীবের কল্যাণ ব্রতে এরা নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু প্রাণী জগতে গতিশীলতার কারণে এরাও জন্ম মৃত্যুর অধীনে। চারি প্রকার অরূপ ভূমির দৈহিক জীবনের কোন অস্থিত্ব নেই। কিন্তু প্রকৃতির কারণে সুনির্দিষ্ট কাল পরে এরাও মৃত্যু মুখে পতিত হয়। নতুন জীবন ধারণের মাধ্যমে তাদেরও শক্তি সঞ্চয় করতে হয়।
যেহেতু আমাদের প্রাকৃতিক জগৎ ভোগও ধর্ম সমন্বয়ে গঠিত যেহেতু তাদের সার্বিক জীবন ধারায় জন্ম মৃত্যুর সীমায় সীমিত। আমাদের সভ্যতার চিকিৎসা বিজ্ঞান জরা ব্যাধি মৃত্যুর গতিরোধ করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। কিন্তু আজকের তারিখ পর্যন্ত এর কোন সমাধান দিতে পারেনি। প্রাণী স্থানে জন্ম গ্রহণ করে কাল তাকে গ্রাস করে। পৃথিবীর একদিকে জীবন অন্যদিকে জন্ম জরা ব্যাধি মৃত্যু। দুই ধারা হচ্ছে জীবন ধর্মের বাস্তব রূপ জীবন যেহেতু সমবায়কৃত সেহেতু সমবায়ে বিলোপে তার ভিতর জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু প্রবিষ্ট হয়। ভগবান গৌতম এই ধারাকে রোধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বুদ্ধের জীবনকে আমরা  তিন ভাগে করে দেখি এক ভাগ হচ্ছে প্রস্তুতিপর্ব, দ্বিতীয় অধ্যায় হচ্ছে প্রস্তুতি অবস্থা, তৃতীয় অধ্যায় হচ্ছে সমাপ্তি অবস্থা বা ফল অবস্থা। আমরা বুদ্ধ জীবন সমাপ্তি দিক দিয়েই বুদ্ধকে ভগবান চেষ্টা করে এসেছি, তার ফলে অন্যান্য ধর্ম প্রর্বতকের ন্যায় তাকেও একজন ধর্ম প্রবর্তক হিসাবে অভিহিত করে এসেছি। কিন্তু তিনি ধর্ম প্রবর্তক নন তিনি প্রবর্তন করেছেন ধর্মচক্র। যে ধর্মচক্র জীবনকে জীবকে পরিচালিত করে আসছে এখানে নির্বাণ শব্দটি আমাদের নিকট বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে। এই নির্বাণ হচ্ছে জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর অবসান। মৃত্যুর দ্বারা একটি জীবনের সৃষ্টি হচ্ছে তা আমরা অনব্রত দেখে আসছি। কোন বিশেষ শক্তি সমূহের অবসানের ফলে যে নতুন শক্তির উদ্ভব হয় তা আমরা অনব্রত অনুভব করছি। যে শক্তি সমূহের দ্বারা আমাদের জীবনের সুখ পরিচালিত তা অনব্রত মৃত্যুর ভিতর দিয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন দুধের বিয়োগে দধির সৃষ্টি হয়। জলশক্তি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবার ফলে জল বিদ্যুতের উদ্ভব হয়। এই বিদ্যুৎ বিভিন্ন শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে জন সাধারণের অনেক উপকার হচ্ছে। আজ কালকার যুগকে আমরা সাধারণত বৈজ্ঞানিক যুগ নামে  অভিহিত করে আসছি। আমাদের অভিজ্ঞতা বা বিজ্ঞান সাধারণ বস্তুর নির্ভর। এ কারণে বিভিন্ন বস্তুর সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা অমানবিক যুগে প্রবেশ করেছি। বিজ্ঞানের সৃষ্টি শক্তি ও ধ্বংস শক্তির সম্পর্কে এখন আমরা ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে এসেছি। বিজ্ঞান সুখ ও শান্তি সৃষ্টির যেমন সহায়তা করছে অসুখ ও অশান্তি সৃষ্টির পেছনে তার প্রভাব ও আকার আমরা ক্রমে উপলব্ধি করে এখন শক্তির অন্বেষায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এই প্রচেষ্টা সত্যিকারভাবে কখনো যে সফল হবে এই আশা মোটই করতে পারিনা। বস্তু বিজ্ঞানের সাথে আমরা এখন মনোবিজ্ঞান শব্দটি প্রয়োগ করছি। কিন্তু বস্তু বিজ্ঞানে যে মনোবিজ্ঞানে বহিঃরূপ একথা এখনো স্বীকার করতে পারছি না।
তথা কথিত বৈজ্ঞানিক যুগকে কেন্দ্র করে আজকের জীবন পরিপূর্ণ ও অস্থিতিশীলতা এসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ভগবান গৌতম বুদ্ধের মতবাদ আমাদের আলোচনার ভিতরে আনতে হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন জন্ম দুঃখ, তদ্রুপ জরা, ব্যাধি, মৃত্যুও দুঃখ। এর থেকে যদি মুক্তি পেতে হয় একে বন্ধন শূন্য করতে হবে। জন্মের সঙ্গে জরা ব্যাধি এবং মৃত্যুর সঙ্গে জন্মের প্রবাহগত যোগ রয়েছে। নির্বাণ অথবা অবসান অবশ্যই করতে হবে। কি করে করা যায় এই নিয়ে তার চিন্তা এসেছিল বহুকাল পূর্বে। মনীষী নিউটন যেমন আপেল ফলের পতনকে কেন্দ্র করে জগতের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেছিলেন, সিদ্ধার্থ গৌতমও তেমনি জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এর আওতা থেকে মুক্তির জন্য উপায় অন্বেষণের কথা ভাবছিলেন। এই তার জীবনের শুরু। তিনি এই পথ অবিষ্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলেন। “দীপঙ্কর বুদ্ধের”  কাছ থেকে তারপর থেকে তার বোধিসত্ত্ব জীবন আরম্ভ হয়। এই জীবন চর্চার দশ পারমীকে পথ আবিষ্কারের উপায় হিসাবে গ্রহণ করলেন, এই বিষয় গুলো হচ্ছে দান, শীল, নৈষ্ক্রর্ম, প্রজ্ঞা, বীর্য, ক্ষান্তি, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী ও উপেক্ষা। এই দশটি বিষয়কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হলো পারমী, উপপারমী ও পরমার্থ পারমী। বাহ্যিক বিষয় সমূহকে কেন্দ্র করে যে অনুশীলন তিনি করলেন তা পারমী নামে অভিহিত, জীবনকে কেন্দ্র করে তিনি যে অনুশীলন করলেন তা উপ-পারমী নামে অভিহিত এবং স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে কেন্দ্র করে যে অনুশীলন করা হয় তা পরমার্থ পারমী নামে অভিহিত করা হয়। সম্পত্তি জীবন ও স্ত্রী, পুত্র, কন্যা  এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সাধারণতঃ জগত ও জীবন। একে কেন্দ্র করেই সভ্যতার যাবতীয় ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গৌতম এই তিনটির বিনিময়ে পূর্ব উক্ত দশটি বিষয়কে জীবনের ভেতর প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই প্রস্তুতি পর্ব বা বোধিসত্ত্ব জীবন অসংখ্যা কাল সীমার সীমিত কপিল বস্তুর জীবন ধারা হচ্ছে এর পরিপূর্ণ বিকশিত রূপ যার ফলে তাঁর দৈহিক রূপ বত্রিশ লক্ষণ ও অশীতি অনুব্যঞ্জনে সীমিত এই মহান পুরুষ শ্রেষ্ঠ বৈশাখী পূর্ণিমায় ঐ শক্তি বলে কর্মের সম্পূর্ণ নিভৃতি করলেন অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে কর্মের নিরোধ ঘটালেন। যা জগতে “ক্লেশ নির্বাণ” বা বুদ্ধত্ব লাভ নামে অভিহিত। বুদ্ধত্ব লাভের পর কুশিনগর শাল বৃক্ষ তলে বিপাক বা ফলের তিনি নিভৃতি ঘটালেন যা আমাদের কাছে “স্বন্ধনির্বাণ”  বা “পরিনিবার্ণ” নামে অভিহিত। জীবনের দুইটি দ্বারা একটি হচ্ছে জন্ম বা বিপাক রাশি। যা কর্ম সৃষ্টি করে। বিপাক বা ফল দিয়ে আমরা যে কর্মের সৃষ্টি করি তা আমাদের জন্মান্তরের বা ভিন্ন শক্তিতে রুপান্তরে সহায়তা করে। এই আমরা জীবনের ভেতর দিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভব করি কিন্তু এই সম্পর্কে আমাদের যথার্থ উপলব্ধির অভাবে সঠিক ধারণা করতে পারিনা।
সুতরাং যথার্থ মুক্তি বা শান্তি যদি আমাদের কাম্য হয় কর্মের অবসান করতেই হবে। কর্ম নিরোধের মাধ্যমে আমরা বিপাককে নিরোধ করতে পারবো। এতদ উভয়ের নিরোধকেই “নির্বাণ” নামে অভিহিত করা হয়। 
প্রবন্ধটি : নির্বাণ পত্রিকা বৈশাখী পূর্ণিমা সংখ্যা-১৯৮৭ মে ১২ হতে সংগৃহিত



0 comments:

নববর্ষের অভিভাষণ

নববর্ষের অভিভাষণ
২৬ তম সংঘনায়ক, দর্শনসাগর প্রিয়ানন্দ মহাথেরো
আজ ১৩৮১ সালের প্রারম্ভের দিন, ১লা বৈশাখ। এই নববর্ষের শুভ সূচনায় আমার শুভেচ্ছা ও প্রীতি জানাচ্ছি আপনাদের সকলকে। কালের চলমান গতিতে নববর্ষের সূচনা নিয়ে প্রতিবছর আমাদের নিকট উপস্থিত হয়।
বৌদ্ধধর্ম হচ্ছে জীবন দর্শন। জীবনকে সম্যকরূপে দর্শন করতে গেলেই “দুঃখ সত্যের” উপলদ্ধি করতে হয়। এই উপলদ্ধি যথার্থতার সন্ধান দেয় এর পিছনের কারণ। দর্শনের পরিভাষায় একে বলা হয় সমুদয় সত্য। দুঃখ এবং দুঃখের কারণ রোধ করতে গেলেই সন্ধান করতে হয় পথের। এই হচ্ছে- আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই পথ ধরে অগ্রসর হলেই দুঃখের নিরোধ হয়। এই কারণে প্রয়োজন বোধে ধর্ম বা স্বভাব বদলাতে হয়। বৌদ্ধধর্ম এবং তার সংঘের আবির্ভাবের পর থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জগতের সঙ্গে তাল রেখে চলতে শিক্ষা করেছেন। মনকে শুদ্ধ রেখে আপনার চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তথাগতের নির্দেশ ‘বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়’ বাণীর সার্থক রূপায়ন করেছেন। এর ফলে আমরা দেখি অতীত ভারতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি এবং বহির্বিশ্বে বিশেষতঃ এশিয়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গঠনমূলক অবদান।
আমাদের ভাবতেও বিস্ময় লাগে বৌদ্ধধর্মের মর্যাদা আমরা ভারতবর্ষে রাখতে দৃষ্টিকোণ থেকে তা খানিকটা সত্য বটে, কিন্তু আমার মতে আমাদের শীল বিপত্তি এর জন্য মূলতঃ দায়ী। আমাদের পরস্পরের  বিদ্বেষের কারণে এসব হয়েছে। ইদানিংকালে নবদীক্ষিত কতিপয় মহারাষ্ট্রীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে আমার সাক্ষাত লাভের সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি তাদের ভিতর যে শক্তি আছে তা সারা ভারতবর্ষকে আলোকিত করতে পারে। কিন্তু তাদের উপযুক্ত শিক্ষক নেই। এর অভাবে তাদের সুমহান প্রয়াস হয় ব্যর্থ হতে পারে। ওদের জন্য কি আমাদের কিছু করণীয় নেই? ভারতীয়দের মধ্যে কোন উন্নতমানের সন্তান যদি জন্মগ্রহণ না করে বাইরের কারও পক্ষে সম্ভব নয় যে ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনঃজাগরণ করে।
বুদ্ধ বলেছেন মনুষ্যত্ব লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তিনি দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন মনুষ্যত্বের পরম প্রকাশ তার সুমহান ত্যাগের ভিতর। এই কারণে তিনি বলতে পেরেছিলেন- সমগ্র প্রাণীর কল্যাণের উপর ব্যক্তির কল্যাণ নির্ভরশীল। জ্ঞান ব্যক্তির এককভাবে সম্পূর্ণ নয়। তার ইন্দ্রিয় গ্রাস যথার্থ প্রমাণ। তা ভিতরে চক্ষুকর্ণ নাসিকা এবং মন, বাহিরে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং ভাবের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা অনাত্মাবাদ সিদ্ধ করেছে, যারই পটভূমিকায় বিশ্বের প্রথম সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বৌদ্ধধর্ম তিনটি রতেœ বিশ্বাস করে। প্রথম রতœ হচ্ছে জ্ঞান বা বুদ্ধ; দ্বিতীয় রতœ হচ্ছে ধর্ম, তৃতীয় হচ্ছে সংঘ।
বুদ্ধ জানতেন জ্ঞানের সঙ্গে কর্মের অর্থাৎ চরিত্রের যদি সমন্বয় না ঘটে তা হলে যথার্থ কর্মসিদ্ধি সম্ভব নয়।
আমি আশা করি কর্মে, চিন্তায়, বাক্যে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে আমরা প্রতিষ্ঠাকে দেখব।

বিঃ দ্রঃ- এই রচনাটি জগজ্জ্যোতি (কলকাতা) ২০০০ সাল সংখ্যা থেকে সংকলিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিতÑ


0 comments:

বৌদ্ধ নারীদের ভিন্ন-ধর্মাবলম্বীর সাথে বিয়ে নিষিদ্ধঃ আইন করছে মিয়ানমার সরকার

ইয়াঙ্গুনের একটি মফস্বল শহরে বাস করেন উইন নিয়াং নামে এক মুসলমান। তাঁর স্ত্রী বৌদ্ধ এবং তাঁরা ৩০ বছর ধরে সংসার করে যাচ্ছেন। কথা প্রসঙ্গে উইন নিয়াং জানান, বিয়ের সময় তাঁর কাছে মনে হয়েছিল ধর্ম কোন বিষয় নয়, প্রধান হল তাঁর স্ত্রীর নৈতিক চরিত্র ও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া। তিনি বলেন, “আমরা সবসময়ই বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের সংসারের সব কাজ করে আসছি”।
তবে এমন ঘটনা হয়তো আর দেখা যাবেনা মিয়ানমারে। বৌদ্ধ ধর্ম ও সমাজের অবক্ষয় রোধ করার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার এবার বৌদ্ধ নারীদের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিয়ে আইন করে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি বিল এখন সংসদে আলোচনাধীন অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় এই বিলটি পাশ হলে বৌদ্ধ নারীরা অন্য ধর্মের কোন পুরুষের সাথে বিয়ে করা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
গত বছরের জুন মাসে "আন্তঃধর্মীয় বিবাহ আইন" নামের এই বিলটির একটি খসড়া তৈরী করা হয় এবং তা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে মতামতের জন্যে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বিরাজমান ১৯৫৪ সালের বিবাহ আইনটি অত্যন্ত দূর্বল বলে মনে করছেন যার প্রেক্ষিতে সম্মিলিতভাবে এই নতুন বিল্টি প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
প্রস্তাবিত আইন মতে, কোন বৌদ্ধ নারী যদি ভিন্ন ধর্মের কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই তার পিতা-মাতা এবং সরকারের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মর্তাদের অনুমতি নিতে হবে যা বাস্তবে প্রকারান্তরে অসম্ভবই বলা চলে।
আইনের যে কোন ধারা বিন্দুমাত্র ভঙ্গ হলেই কমপক্ষে ১০ বছরের জন্যে জেল দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়া আইনে।
এই আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইয়াঙ্গুনের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু পামোক্ষা বলেন, “সামাজিক বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অন্য ধর্মের আইন-কানুন বৌদ্ধ ধর্মের চাইতে অনেক অনেক বেশী কড়া। আমাদের এই আইনটি অত্যন্ত প্রয়োজন কারন বৌদ্ধ সমাজে নারীদের সুরক্ষায় আমাদের কাছে আর কোন আইনি বিধান এখন পর্যন্ত নেই”।
তবে নারীরাই খোদ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। এই আইনকে মিয়ানমারের নারী অধিকার কর্মীরা নিজেদের জন্যে অপমানজনক মনে করছেন।
নারীদের অধিকার, শিক্ষা, ও স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে কাজ করেন “জেন্ডার ইকুয়ালিটি নেটওয়ার্ক” –এর সিনিয়র ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন কোর্ডিনেটর মে সাবে ফিউ বলেন, “আমাদের নারীদের দৈনন্দিন জীবনের নিজ নিজ স্বিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নিজেদেরই আছে। সুতরাং কোন সরকার কিংবা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার অধিকার নেই”।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইতিমধ্যেই এই আইনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ –এর এশিয়া জোনের পরিচালক ব্র্যাড এডামস মনে করেন, বার্মা ঐতিহাসিকভাবেই বহু-সাংস্কৃতিক একটি জাতি। সরকার “আন্তঃধর্মীয় বিয়ে” নিষিদ্ধের যে বিভাজনমূলক আইন প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে সেটা নিঃসন্দেহে আগুন নিয়ে খেলার সমতুল্য।
গত ২০১৩ সালের জুন মাসে এই বিলটি প্রস্তাবিত হওয়ার পর থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ইতিমধ্যে এই বিলের সমর্থনে ৩০ লাখেরো বেশী মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।
তবে নারী অধিকার কর্মী মে সাবে ফিউ বিলটি আইনে পরিণত হলেও নানা ধরনের অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সংঘাতে হাজারো লোকের প্রাণহানীসহ লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছে মিয়ানমারে।

খবরঃhttp://dhammainfo.com

1 comments:

পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“

                   

                  

পাঁচ প্রকার বৈরী বা শত্র“
  প্রথম বৈরী- অগ্নি বৈরী বা শত্র“ : মানুষের জীবনে টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মূল্যবান বস্তু আছে কিন্তু যখন বাড়িতে আগুন লাগবে তখন পুড়ে সব ছাই হয়ে যাবে। আগুন আমাদের জীবন যাপনে যেমন অনেক সহায়তা করে আবার অপূরণীয় ক্ষতিও সাধন করে। তাই অগ্নিবৈরী বা অগ্নিশত্র“ মানুষের জীবনে বড় শত্র“।
দ্বিতীয় বৈরী- জলবৈরী বা জলশত্র“ : জল বা পানি মানুষের জীবন যাপনে অনেক বড় সহায়তা করে। আবার পানি দ্বারা মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বৎসর বন্যা হয়। বন্যার পানি আমাদের টাকা-পয়সা, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, ঘর-বাড়ি নষ্ট করে। বন্যার পানি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়। তাই এটাও এক প্রকার শত্র“।
তৃতীয় বৈরী- চোর-ডাকাত হল মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“। চোর-ডাকাত মানুষের ধন সম্পত্তি, টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা এমন কি জীবনও হরণ করে। তাই চোর-ডাকাত মানুষের জীবনে তৃতীয় বৈরী বা শত্র“।
চতুর্থ বৈরী : রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধান হল চতুর্থ বৈরী। রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের উপকার করে থাকেন আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজা বা রাষ্ট্র প্রধান জনগণের শত্র“রূপে আবির্ভূত হন। যেমন একজন ব্যক্তি অনেক সম্পদের মালিক যে কোন কারণে রাজা আদেশ দিলেন ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তি রাজ কোষাগারে নিয়ে আসার জন্য। ঐ ব্যক্তির অনিচ্ছা সত্ত্বেও সকল সম্পত্তি রাজাকে দিয়ে দিতে হয় অর্থাৎ রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানের কারণে সম্পদ হরণ হওয়ায় রাজাকে চতুর্থ বৈরী বলা হয়।

পঞ্চম বৈরী : অবাধ্য সন্তান হল পঞ্চম বৈরী বা শত্র“। যখন সন্তান-সন্ততি মা-বাবার অবাধ্য হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। যেমন দুষ্ট লোকের সাথে মিশে দুষ্ট হয়ে মদ পান করেন, জুয়া খেলেন, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। মা-বাবার টাকা নষ্ট অবাধ্য ছেলে-মেয়ের কারণে মা-বাবার টাকা পয়সা নষ্ট হয় তাই অবাধ্য সন্তান-সন্ততিকে পঞ্চম বৈরী বা শত্র“ বলা হয়।
--------------------------------------------------------------------------------

অষ্ট অক্ষন বা আট প্রকার দোষযুক্ত কাল

প্রথম অক্ষন প্রেতলোক: প্রেতলোকে উৎপন্ন হলে অনন্ত দুঃখ ভোগ করতে হয়। কোন সুখ নেই। ধর্মচর্চা করার পরিবেশ নেই বিধায় ধর্মচর্চা করা যায় না। তাই প্রেতলোকে উৎপন্ন হওয়াটা অশুভকাল বা অক্ষন বলা হয়।
দ্বিতীয় অক্ষন-তীর্যকলোক: তীর্যকলোক বলা হয় পশু-পাখী কুলকে। এই লোকেও কোন সুখ নেই। সব সময় ভয়-ভীতির মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। এজন্য এটি একটি অষ্ট অক্ষনের অন্যতম।
তৃতীয় অক্ষন-নরকলোক: নরকলোকে শুধু জ্বালা-পোড়া, যন্ত্রণা, দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নাই। এই লোকে কোন ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। ইহা অষ্ট অক্ষনের তৃতীয় অক্ষন।
চতুর্থ অক্ষন-অরূপ ব্রহ্মলোক: আমরা সকলে জানি ব্রহ্মলোক অত্যন্ত উচ্চ। তবু এই অরূপ ব্রহ্মলোক এখানে যে উৎপন্ন হবে। তার কোন ইন্দ্রিয় থাকে না যেহেতু রূপহীন ব্রহ্মলোক। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা সাধনাহীন ক্ষেত্র, তাই এই লোকে জন্ম নেয়াটা অশুভ। তাই এটিও অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
পঞ্চম অক্ষন প্রত্যন্ত অঞ্চল: প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন ভিক্ষু শ্রামণের দর্শন পাওয়া যায় না। ত্রিরতœ বন্দনা একবার শুনার সুযোগ হয় না। কোটি টাকার অধিকারী হলেও সেখানে পুণ্য সঞ্চয়ের কোন সুযোগ হয় না তাই এই লোকও অষ্ট অক্ষনের এক অক্ষন।
ষষ্ঠ অক্ষন বিকল ইন্দ্রিয়: চোখ, কান, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করলে, সেই অবস্থায়ও ধর্মচর্চা বা সাধনা করা যায় না। নির্বাণ মার্গের সাধনার ঠিক প্রতিকূল অবস্থায় জন্ম নেওয়া। এটি একটি অষ্ট অক্ষণের অন্যতম।
সপ্তম অক্ষন মিথ্যা দৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করা: যদি বৌদ্ধ মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম না নিয়ে মিথ্যদৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম নেয়, তাহলে তাহার জন্ম নিরর্থক। কারণ নির্বাণগামী ধর্ম, চতুরার্য সত্য ধর্ম শ্রবণ অথবা চর্চা করার সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হবে। তাই এটি একটি অন্যতম অক্ষন।
অষ্টম অক্ষন ‘‘বুদ্ধশূণ্য কল্প”: যে সময়ে বুদ্ধগণের শাসন থাকবে না, সেই সময় বা কালকে বুদ্ধশূণ্য কাল বলে। তখন পৃথিবীতে এ ভদ্র কল্পের চতুর্থ বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধের শাসনামল। এই বুদ্ধের শাসন পাঁচ হাজার বৎসর চলে গেলে তখন শুরু হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। আবার এক অন্তকল্প পরে যখন আর্যমিত্র বুদ্ধ আবির্ভূত হয়ে তাঁর ধর্ম প্রচার করবেন, তখন আরো কিছুকাল বৌদ্ধ ধর্ম এই পৃথিবীতে, লোকভূমিতে এবং অনন্ত চক্রবালে প্রচারিত হবে। তারপর আর্যমিত্র বুদ্ধের শাসনামল শেষ হয়ে যাবে, পৃথিবীতে তখন বুদ্ধ শাসন থাকবে না। দুই দুইশত একান্নটি অন্তর্কল্প হবে বুদ্ধশূণ্য কল্প। নির্বাণ মার্গ সাধনার প্রতিকুল কাল বা ক্ষেত্র বা ক্ষণ।

এই আটটি অক্ষন অথবা অষ্ট দোষযুক্ত স্থানগুলোকে আমরা চাই না, নির্বাণ সাধনার প্রতিকুল হবে।


0 comments: