এই প্রথম মিলল গৌতম বুদ্ধের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ!
বৌদ্ধ ধর্মের
প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান কোথায় জানেন কী?
নেপালের
লুম্বিনিতে। আর সেখানেই এক
প্রাচীন মন্দিরে খননকার্য চালানোর সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের আরেকটি অজানা কাঠামো। তাদের দাবি অনুযায়ী, এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির বা প্যাগোডা। ইতোপূর্বে
আবিষ্কৃত প্রাচীনতম বৌদ্ধমন্দির ছিলো সম্রাট অশোকের সময়কালের। তবে এখন জানা গেছে যে সেটা এই
মন্দিরের অনেক পরে তৈরি হয়, মোটামুটি
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে- যখন সম্রাট অশোক আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ
পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এই আবিষ্কারের
সাথে জড়িত গবেষকরা কাজ করছিলেন লুম্বিনির মায়া দেবী মন্দিরে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির আংশিক অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিলো এদের
কাজ। তবে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের অর্থায়ন করছে মূলত জাপান সরকার এবং
নেপাল সরকার যা রয়েছে ইউনেস্কোর এক প্রকল্পের অধীনে যার লক্ষ্য হলো লুম্বিনির
সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শক্তিশালী করা। ধ্যানরত সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনী
এবং দর্শনার্থীদের মাঝেই তাদের খননকার্য চালাতে হয়। Antiquity জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণার
তথ্যে এসব প্রত্নতাত্বিকেরা বর্ণনা করেন কিভাবে লুম্বিনি থেকে শুরু হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই গবেষণার সাথে জড়িত ডারহ্যাম
ইউনিভার্সিটির রবিন কানিংহ্যাম এর মতে, বুদ্ধের ব্যাপারে খুব কমই জানা
গেছে এখন পর্যন্ত। এ কারনেই তারা প্রত্নতাত্বিক
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এখানে অনুসন্ধান করার উৎসাহ পান। আর তা করতে গিয়েই মায়া দেবী মন্দিরে এই প্রাচীন কাঠামো খুঁজে পান
তারা।
বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, রানী মহামায়া দেবী লুম্বিনি
বাগানের একটি গাছের ডাল ধরে থাকা অবস্থায় বুদ্ধের জন্ম দেন। গৌতম বুদ্ধ বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু
২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধনের সন্ধান শুরু করেন। কনিংহ্যাম বলেন, বুদ্ধের জন্মের সময়টাই এমন যে তখন
শাক্য জাতির মানুষের মাঝে সামাজিক অনেক পরিবর্তন আসা শুরু করছিলো। প্রাচীন এই লুম্বিনি কালের গ্রাসে হারিয়ে যায় নেপালের বন-জঙ্গলের
মাঝে। ১৮৯৬ সালে এক খুঁজে পাওয়া যায় এবং বুদ্ধের জন্মস্থান বলে শনাক্ত করা
হয়। সম্রাট অশোকের সময়কালের এক নিদর্শন থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
গবেষকদের মতে এই
আবিষ্কার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধমন্দির হতে পারে এটি। আর এই মন্দির তৈরি হয়েছিলো একটি গাছকে ঘিরে। গবেষকরা খননের সময়ে গাছের শেকড় এবং কাঠের কোনো
কাঠামোর চিহ্ন খুঁজে পান একটি কিছু ইঁটের স্তুপের নিচে। কাঠের এই গঠনের মাঝে ছিলো একটি উন্মুক্ত জায়গা। এ থেকে গবেষকেরা ধারণা করছেন এটাই হতে পারে সেই স্থান যেখানে বোধন হয়
বুদ্ধের। বুদ্ধের অস্তিত্ব এবং অবস্থানের এই প্রথম কোনো
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেলো।
খননের ফলে প্রাপ্ত চারকোলের টুকরো
এবং বালির কণা পরীক্ষা করে দেখা হয় রেডিওকার্বন এবং অপ্টিক্যালি স্টিমুলেটেড
লুমিনেসেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর ফলেই নির্ণয় করা যায় এগুলো সেই
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের। এই মন্দিরের মধ্যভাগে কোনও ছাদ
ছিলো না। এ থেকেও ধারণা করে নেওয়া যায় এই
স্থাপনার কেন্দ্রে একটি গাছ ছিলো।
একটি প্রেস কনফারেন্সে কনিংহ্যাম
বলেন, এটা এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত যেখানে ধর্ম এবং বিজ্ঞান পাশাপাশি অবস্থান
করছে। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে, বুদ্ধের বোধি লাভ হয় একটি বৃক্ষের
নিচে এবং গবেষকেরাও একটি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির খুঁজে পেয়েছেন যা
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মত প্রাচীন সময়ে তৈরি হয়। আরও বলা হয়, এর আগে ওই এলাকায়(নেপালে) বৃক্ষ
কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোনও মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায় নি। সুতরাং সম্ভাবনা আছে যে এটাই হতে পারে সেই বৃক্ষ যার ডাল ধরে মহামায়া
দেবী জন্ম দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধকে।
0 comments: